বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রশ্ন ফাঁস, ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল! « বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রশ্ন ফাঁস, ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল!

মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৬ জুলাই, ২০২৩ | ৫:৪১
মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।
আপডেটঃ ৬ জুলাই, ২০২৩ | ৫:৪১
Link Copied!
বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রশ্ন ফাঁস, ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল! -- বিডিনিউজ৯৯৯ডটকম

রক্ষক যখন ভক্ষক! এমন কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। অসংখ্য উদাহরণের মতো এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এ এমন ঘটনায় জড়িত সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল হয়েছে।

বাংলাদেশ বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকেই ১০০ জন চালকসহ বেশ কয়েকটি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল।

এতে জড়িত বিমানের ডিজিএম মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ার। তিনিই তার দুই চালকের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস করেন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় করা মামলায় মেজর তাইজসহ বিমানের ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চার চাকরিপ্রত্যাশী মিলিয়ে মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

বুধবার আদালতের বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ২২ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন পাটোয়ারী আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর।

তার একদিন আগে ২০ অক্টোবর পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। গোয়েন্দা পুলিশ ওই দিন বিকালে উত্তর সংবলিত ৮০টি প্রশ্নপত্র উদ্ধার করে।

ফলে শুরুর এক ঘণ্টা আগেই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপপরিদর্শক মো. শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।

এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য বিমানের ডিজিএম মেজর তাইজ ও তার দুই ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ও মাসুদ সিন্ডিকেট চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর মেজর তাইজসহ কমিটির ৪ সদস্য বিমানের জিএমের কক্ষে অল্প সময়ের জন্য মিটিং করে ১৯ অক্টোবর প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর ১৯ অক্টোবর সকাল ১০টায় মেজর তাইজসহ কমিটির ৪ সদস্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ের ৩য় তলায় অবস্থিত জিএমের (অ্যাডমিন) অফিসে প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন।

সেদিন বিমানে ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপাল এবিএম নাজমুল হুদা জুনিয়র অপারেটর পদের জন্য ২০টি করে ৪০টি প্রশ্ন পেনড্রাইভে করে অফিসে নিয়ে আসেন।

বিমানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কায়সার জামান অন্যান্য পদের জন্য প্রশ্নপত্রও পেনড্রাইভে নিয়ে আসেন।

তারা প্রশ্নপত্র সেট করার পর মেজর তাইজকে চেকব্যাক করতে বললে তিনি একটি প্রিন্ট কপি চান।

এ সময় অন্যান্য সদস্যদের অগোচরে মেজর তাইজ খসড়া প্রশ্নপত্রের ছবি তোলে আসামি মাসুদ ও জাহাঙ্গীর আলমকে সরবরাহ করেন।

মাসুদ ও জাহাঙ্গীর আলম দুজনই মেজর তাইজের ড্রাইভার ছিলেন।

পরীক্ষার ৩-৪ দিন আগে আসামি জাহাঙ্গীর মেজর তাইজকে জানান-তার তিন-চারজন প্রার্থী রয়েছে।

তখন তাইজ জাহাঙ্গীরকে জানান, তিনি প্রশ্নপত্র ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন বিনিময়ে তাকে কী দেওয়া হবে?

একইভাবে আরেক ড্রাইভার মাসুদ জানান-তার দুজন প্রার্থী রয়েছে।

দুজনের চাকরি হলে তিনি ৪ লাখ টাকা নিতে পারবেন। মেজর তাইজ তখন জানান, ৪ লাখ টাকা থেকে ২ লাথ তিনি নেবেন এবং বাকি ২ লাখ মাসুদকে দেবেন।

শুধু এ পরীক্ষাই নয়, এর আগেও বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন তাইজ-জাহাঙ্গীর-মাসুদ সিন্ডিকেট।

জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এর মধ্যে একটি ডায়েরিতে ২০২২ সালের ৩ জুন তারিখ উল্লেখ করে মেজর তাইজকে ২৪ লাখ টাকা দেওয়ার তথ্য উল্লেখ রয়েছে।

চার্জশিটে উল্লিখিত ৩০ আসামির মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে ১১ জন বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন।

গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন-বিমানের এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মাসুদ, মো. মাহবুব আলী, এনামুল হক, মাহফুজুল আলম, বিমানের এমএলএসএস মো. জাহিদ হাসান, হারুন অর রশিদ, সমাজু ওরফে সোবহান, মো. জাকির হোসেন, অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন ও ওয়ার্কশপ হেলপার মো. জাবেদ হোসেন।

এদের মধ্যে ১০ জন আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পলাতক দেখানো আসামিরা হলেন-বিমানের ডিজিএম মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ার, এমটি অপারেটর মহসিন আলী, মিজানুর রহমান, ফারুক হোসেন, নজরুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, সুলতান হোসেন, ট্রাফিক হেল্পার আল আমিন, আ. মালেক, আব্দুল্লাহ শেখ, সাজ্জাদুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, সিডিউলিং সুপারভাইজার মো. মাহবুব আলম শরীফ, সিকিউরিটি গার্ড মো. আইউব উদ্দিন, তাপস কুমার মণ্ডল ও চার চাকরিপ্রত্যাশী মো. মুরাদ শেখ, ফারুক হোসেন, জুয়েল মিয়া এবং মো. রাজিব মোল্লা।

আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার অবেদন করা হয়েছে।

লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রশ্ন ফাঁসে বিমানের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে চেয়েছিলেন। যে যার মতো একাধিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে লেনদেন করেছেন।

একেকজনের সঙ্গে কমপক্ষে সোয়া লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের পাঁয়তারার তথ্য মিলেছে।

প্রধান অভিযুক্ত আসামিসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

আদালত চার্জশিটের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির পর যদি পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন তবেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা সর্বদা তৎপর রয়েছে বলে জানা যায়।

বিষয়ঃ: