স্বৈরাচারী যুগের অবসান
পালানোর আগে শেখ হাসিনা ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন, পাননি সুযোগ
কথায় আছে অতি বাড়লে ঝড়ে ভাঙে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচারই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তবে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা যেন হিটলারকেও হার মানিয়েছিল। খুন, গুম, অত্যাচার, নির্যাতন, হয়রানি, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, নানান কৌশলে দুর্নীতি, সাংবাদিকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন, নাটকের ওস্তাদ সহ সকল অপগুণে সম্মৃদ্ধ ছিলেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। অবশেষে জনগণের রোষানলে পড়ে নিদারুণ লজ্জায় জীবনের মায়ায় দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাকে। অবশ্য পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার আগে নিজের একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলনে শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি পাননি। একাধিক দেশ-বিদেশি গণমাধ্যম সূত্রে তা জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রের খবর, তার সাথে দেশ ছেড়েছেন তার ছোটবোন শেখ রেহানাও। বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা উড্ডয়ন করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এমন চিত্রই চোখে পড়ে।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। অন্যদিকে, দু’বার ভাষণের সময় পরিবর্তন করার পর বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান উয়াকার উজ জামান।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর গণভবনে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালিত হয় এদিন। সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় আসে। একপর্যায়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় গণভবন।
জনগণের এমন স্রোত দেখে যেন সেনাবাহিনীও স্তম্ভিত হয়ে যায়। গণভবনের প্রতিটি জিনিস এক এক করে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। অবশ্য বিক্ষুব্ধ জনতার দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ বলাটাই বাহুল্য। কারণ সামান্য ফুলগাছ, সবজি, পুকুরের মাছ, খামারের পাখি, কবুতর, হাস মুরগী থেকে শুরু করে ছাগল, গরু, আসবাবপত্র, ফার্নিচার, শেখ হাসিনার শাড়ী সহ এমন কিছু নেই যা জনগণ নিয়ে যায়নি।
এমনকি সারাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন অলিতে-গলিতে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায়। এমন জনরোষ ও বিক্ষোভ বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই হয়তো প্রথম এবং শেষ। কারণ শেখ হাসিনার অকথ্য নির্যাতনের ফলাফল থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতেও হয়তো যে কেউ পাকড়াও হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা- পতন হয়েছে স্বৈরাচারী হাসিনার।