
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর পরিত্যক্ত বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাতেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট ম্যুরাল ভাঙচুর ও কিছু জায়গায় তাদের নামও পরিবর্তন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বাড়ি ভাঙচুরের খবরও পাওয়া গেছে।
৩২ নম্বর বাড়ির পরই আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও। এরপরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
মূলত শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণা আসার ঘটনায় এর পাল্টা জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গতকাল ‘বুলডোজার মিছিলের’ ডাক দেয়। এরপর রাত ৮টার দিকে গেট ভেঙে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে শত শত জনতা ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা হাসিনাবিরোধী স্লোগান দিয়ে লাঠিসোটা, রড ও শাবল হাতে ভাঙচুরে যোগ দেয়।
ব্যাপক ধ্বংসলীলার একপর্যায়ে বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেয়। শেখ হাসিনার পতনের পরও ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল।
ঢাবিতে বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন:
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ধ্বংসের পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নাম পরিবর্তন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল নামকরণ করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে এই নতুন নাম নির্ধারণ করেন।
রাবিতে ৪ আবাসিক হলের নামফলক ভাঙচুর:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শেখ পরিবারের সদস্য ও জাতীয় চার নেতার একজনের নামে থাকা সব স্থাপনার নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নাম দেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’ ও শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।
বেরোবিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বুধবার রাত ১০টার দিকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে ফেলেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে কারমাইকেল কলেজে থাকা ম্যুরালটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
পাবিপ্রবিতে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা হলের নামফলক ভাঙচুর:
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ছাত্রীদের শেখ হাসিনা হলের নামফলক বুধবার রাতে ভেঙে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাত ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এ কাজ করেন।
ইবিতে শেখ হাসিনার ছবিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি:
শেখ হাসিনার ভাষণের ঘোষণার প্রতিবাদে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত স্বৈরাচারী হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
জাবিতে মুছে ফেলা হলো মুজিব পরিবারের নাম:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে মুজিব পরিবারের নাম মুছে ফেলেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের দিকে যান। পরে ইনস্টিটিউটটির সামনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও শেখ হাসিনা হলের সামনে শেখ হাসিনার ম্যুরাল ভেঙে ফেলেন তারা। এছাড়া আল-বেরুনি হলের সামনে দেওয়ালের শেখ মুজিবুর রহমানে গ্রাফিতি মুছে ফেলেন।
শাবিপ্রবিতে গুড়িঁয়ে দেওয়া হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবিতে) মধ্যে রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে গুড়িঁয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টায় সিলেট শহর থেকে বুলডোজার নিয়ে এসে ম্যুরাল ভাঙা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর:
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারকে কেন্দ্র করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন তারা। জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারকে কেন্দ্র করে ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। পরে বক্তব্য প্রচার হলে আবাসিক হল থেকে বেরিয়ে হল প্রাঙ্গণে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে রাত সোয়া দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে গেলে ছাত্রদের আরেকটি গ্রুপ মিছিলে যুক্ত হয়। এসময় একসাথে মিছিল নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যু্রাল প্রাঙ্গণের সামনে গেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ম্যুরাল ভাঙচুর করেন।