
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তিতে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। দেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মাত্র ১ শতাংশ এ স্কিমের আওতায় এসেছেন, বাকি ৯৯ শতাংশই এতে আগ্রহী নন।
তৈরি পোশাক খাতে শোভন কাজ নিশ্চিতকরণে সামাজিক সংলাপ প্রকল্পের অংশ হিসেবে পরিচালিত ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম: বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য সুযোগ অনুসন্ধান’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা মন্ডিয়াল এফএমভির সহযোগিতায় এ গবেষণা পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)।
রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার বিলস আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ১০০ নারী ও ১০০ পুরুষ পোশাক শ্রমিকের ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, তৈরি পোশাক খাতের মাত্র ১ শতাংশ শ্রমিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে (প্রগতি) যুক্ত হয়েছেন। এছাড়া দেশের মোট কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ৩ লাখ ৭২ হাজার জন সামাজিক সুরক্ষার অন্যান্য স্কিমের সঙ্গে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্ন আয়, চাকরির অনিশ্চয়তা ও সরকারি কাঠামোর প্রতি অনাস্থার কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ কম। ফলে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্যে নেয়া এ উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুরক্ষা স্কিমে ন্যূনতম প্রিমিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে আনা, প্রতিষ্ঠান ও তার শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সরকারকে স্কিমের সঙ্গে যুক্ত করাসহ সরকারি কাঠামোগুলোকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনা।
বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক একেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম পরিচালনার ক্ষেত্রে সবার আস্থা অর্জনই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। যেখানে চাকরির নিরাপত্তা নেই, সেখানে কোনো শ্রমিক এ স্কিমে যুক্ত হতে আগ্রহী হবে না।’
শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক শামীমা সুলতানা বারির মতে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম তখনই যথাযথ অবদান রাখতে পারবে, যখন শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা যাবে।
সামাজিক সুরক্ষায় নেয়া এ ধরনের পেনশন স্কিম প্রণয়নের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন আইএলওর ইআইএস প্রজেক্টের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার সৈয়দ সাদ হোসেন জিলানী। তিনি বলেন, ‘আইএলও সব সময়ই সামাজিক সংলাপকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা এতদিন কারখানাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলাম, তবে এখন শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে।’
প্রস্তাবিত স্কিমে বিভিন্ন ধরনের দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সভাপতি মো. মহিউদ্দিন খান।
সভায় শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য একেএম নাসিম বলেন, ‘পেনশন স্কিমের ব্যবস্থাপনায় আরো স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন।’
সামাজিক সুরক্ষা স্কিমগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ।