
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভায় রাত হলেই বসে মাদকের আসর। সেই সাথে চলে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। দির্ঘদিন যাবৎ পৌরসভার হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রফিক স্থানীয় মাদক সেবীদের সাথে নিয়ে পৌরসভায় তার নিজ কক্ষ্যে বসে এমন কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। রফিক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনা পৌরসভার উদ্ধতন কর্মকর্তারা ও প্রশাসন। তার এই মাদক সেবনের বিষয়ে কোন কর্মচারী কথা বললেই সেই কর্মচারীর উপরে নেমে আছে রফিকের হয়রানীর খর্গ। বিধায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহসও পায়না কেউ।
গত ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবারা রাত সারে ১০ টার দিকে পৌরসভার হিসাব রক্ষকের কক্ষ্যে হাউকাউ ও জোরে জোরে চিৎকার শুনতে পায় স্থানীয়রা। এতোরাতে পৌরসভায় এমন চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ঐ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিককে ফোন করে ডেকে আনে। তখন সাবেক কাউন্সেলরকে সাথে নিয়ে স্থানীয়রা পৌরসভায় প্রবেশ করতে নিলে বাধা দেয় পিয়ন হাকিম। তিনি বলে স্যাররা বিশেষ কাজে ব্যাস্ত আছে এখন যাওয়া যাবেনা । কাউন্সেলর বাধা উপেক্ষা করে হিসাব রক্ষক রফিকের কক্ষ্যে গেলে চোখের সামনে উম্মেচিত হয়ে যায় হিসাব রক্ষক রফিকের মাদক সেবনের দৃশ্য। তিনি তার চেয়ারে বসেই করছেন মাদক সেবন। পাশেই বসে আছেন পৌরসভার বর্তমানে ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সেলরের দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষসহ স্থানীয় কিছু চিহ্নিত মাদক সেবীরা। সাবেক কাউন্সেলর ও স্থানীয়দের দেখে দ্রুত সটকে পড়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও স্থানীয় মাদক সেবীরা। এসময় রফিক মাতাল অবস্থায় উঠে এসে কাউন্সেলরের কাছে বারবার ছবি তুলতে বারন করে। এরপর ছবিগুলো ছরিয়ে পরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি বর্তমানে দ্বায়ীত্বে থাকা পৌর প্রশাসক ও বেলকুচির উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা কেয়াকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি তখন।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিক বলেন, মঙ্গলবার রাত সারে ১০ টা থেকে পোনে ১১ টার দিকে আমাকে কিছু লোক ফোন দিয়ে জানায় পৌরসভায় যেন কি হয়েছে , ভিতর থেকে কারা যেন চিৎকার করছে। শুনে আমি দৌড়ে যাই এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলে পিয়ন হাকিম আমাকে বাধা দেয়। আমি পিয়ন হাকিমের বাধা উপেক্ষা করে হিসাব রক্ষক রফিকের রুমে যাই। গিয়ে দেখি সমাজ সেবা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় মাদক সেবীদের সাথে নিয়ে রফিক তার চেয়ারে বসে মাদক সেবন করছে আর উন্মাদনায় চিৎকার করছে। তবে এসময় আকে দেখেই আমাকে দেখেই দৌড়ে সটকে পড়ে সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ ও স্থানীয় মাদক সেবীরা। বিষয়টি তখনই আমি বর্তমান পৌর প্রশাসককে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে লিখিত ভাবে জানাতে বলেন। আসলে দীর্ঘদিন যাবৎ এই পৌরসভায় এভাবে মাদকের আসর বসিয়ে আসছে রফিক। বিষয়টি সবাই জানার পরেও কোন ব্যবস্তা নেননা কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে পৌরসভার বর্তমানে ৪ ও ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সেলরের দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, প্রশাসক সহ আমরা সবাই বিকেলে সভা শেষে পৌরসভার বর্জ ফেলানোর জন্য জায়গা দেখতে যাই। এরপর প্রশাসক চলে গেলেও আমি কিছু কাজের জন্য পৌরসভায় রয়ে যাই। রাতে আমি কাজ শেষে নামার সময় সাবেক কাউন্সেলর আলম প্রামানিককে উপরে যেতে দেখি। সেখানে কি হয়েছে তা আমি জানিনা। কারন তার আগে আমি আমার অফিস কক্ষ্যেই ছিলাম। ফলে হিসাব রক্ষকের রুমে কি হয়েছে আমি তা জানিনা।
হিসাব রক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিক সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্র করা হচ্ছে। আমি এমন কোন কর্মকান্ড পৌরসভায় করিনি। এ বিষয়ে আপনাদের সাথে আর কোন কথা বলতে পারবোনা।
বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জাকেরিয়া হোসেন বলেন, কোন সরকারী অফিস কেন কোন স্থানেই কেউ মাদক সেবন করতে পারবেনা। যদি পৌর সভায় এমন কর্মকান্ড হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বর্তমানে দ্বায়ীত্বে থাকা পৌর প্রশাসক ও বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া সুলতানা কেয়া বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি তবে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। কি হয়েছে তা জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনেক দু:খজনক। আমি গত রাতে জানার পরেই স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য বলেছি। তার তদন্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।