কোটা বৈষম্যের জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের থেকে মেধার ভিত্তিতে নির্বাহী আদেশে সুপারিশ করার দাবি জানিয়েছে ৩৪তম বিসিএস কোটা বৈষম্যের শিকার ক্যাডার বঞ্চিত ফোরাম।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটর (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের আহ্বায়ক ডা. তফিজুল ইসলাম লিখিত বক্তৃতায় বলেন, আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ক্যাডার পদ বঞ্চিত প্রার্থী। আমরা সরাসরি কোটা বৈষম্যের শিকার।
তিনি বলেন, পিএসসি কর্তৃক ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে আমরা ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় নিয়েছি। ৩৪তম বিসিএস-এর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে অংশ নিয়ে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
বঞ্চিত ফোরামের আহ্বায়ক বলেন, এরপর ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট ৩৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ সব ধাপে কৃতকার্য ৮৭৬৩ জন প্রার্থী থেকে পিএসসি ২১৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে সুপারিশ করে। অবশিষ্ট ৬৫৮৪ জন প্রার্থী কৃতকার্য হওয়ার পরেও ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়নি। অথচ ৩৫টি ক্যাডার পদে কোটার জন্য ৬৭২টি পদ সংরক্ষণ পূর্বক শূন্য রাখা হয়। এই পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করছি।
তিনি আরও বলেন, ৩৪তম বিসিএসের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি এবং চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিসিএস সাধারণ ক্যাডার পদে ৫টি, প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডার পদে ১১১টি (সহকারী সার্জন ৭৪, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৩, ভেটেরিনারি সার্জন ১৪টি), সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ২৮৮টি সহ প্রায় ৩৫টি ক্যাডার পদে ৬৭২টি পদ শূন্য রাখা হয়।
৩৪তম বিসিএসের পূর্বের ৩৩তম এবং পরবর্তী ৩৫তম, ৩৬তম এবং ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে কোনো ধরনের কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি এবং কোটার শূন্য পদে উত্তীর্ণ প্রার্থী থেকে মেধা অনুযায়ী পূরণ করা হয়।
তাই ৩৪তম বিসিএস এ ক্যাডারে কোটা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। এর প্রেক্ষিতে আমরা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, পিএসসি-এর চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং মাঠ পর্যায়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলমান রাখা হয়। আমাদের আন্দোলনের ফলে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৩৪তম বিসিএস-এর প্রাধিকার কোটায় সংরক্ষণ নীতি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু ৬৭২টি শূন্য পদ ৩৫তম থেকে পূরণের আদেশ দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক, অমানবিক, বৈষম্যমূলক এবং তৎকালীন সরকারের স্বৈরাচারী চিন্তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন। অথচ, ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যাক প্রার্থী মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ রয়েছে। তাই আমরা এই বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
ডা. তফিজুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা ৩৪তম বিসিএসের কোটা বৈষম্যের শিকার প্রার্থীরাই ২০১৩ ও ২০১৫ সালে শাহবাগে প্রথম এই কোটাবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্রভাবে সংগঠিত হয়। এ আন্দোলনের মূলভিত্তি ছিল, কোটা প্রথার বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং পরবর্তীতে তা ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। বর্তমান সরকার বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের দাবিসমূহ হলো-
১. নির্বাহী আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক আদেশটি বাতিল করা।
২. নির্বাহী আদেশে ৩৪তম বিসিএস-এ কোটার জন্য সংরক্ষিত ৬৭২টি শূন্য ক্যাডার পদে বৈষম্যের শিকার উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধার ভিত্তিতে সুপারিশের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক কামরুল ইসলাম রাশেদ, তমা রানি পাল, সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম জনি, নির্বাহী সদস্য রায়হান আহমেদ, আবু জুবায়ের, জামিনুর রহমান প্রমুখ।