জেলা প্রশাসক পদে কর্মকর্তাদের বাছাই প্রক্রিয়া ও পদায়নে অভাবনীয় বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (BASA)।
শনিবার (৫ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেলা প্রশাসক পদে কর্মকর্তাদের বাছাই প্রক্রিয়া ও পদায়নে অভাবনীয় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিগত সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তারা ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সামাজিকভাবেও হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন মর্মে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে মর্মে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যাশা করছে।
সেখানে বলা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের তথা বিভাগ ও জেলা পর্যায়সহ সব পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তারা সুশীল সেবক হিসেবে জনগণের পাশে থেকে উন্নয়নমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সদস্যদের কল্যাণ, পদপর্যাদা রক্ষাসহ ইত্যাদি কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে নতুন বাংলাদেশের। সহস্র শহিদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বৈষম্যহীন ও বঞ্চনামুক্ত একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন-আকাঙ্ক্ষাপূরণে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে, যা সব মহলের প্রত্যাশাও বটে।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান রেখে স্বৈরাচার দোসরমুক্ত উন্নয়ন ও সংস্কারমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করতে সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর ও তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বক্তব্য প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।
এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলোঃ
>>>দীর্ঘ বঞ্চনার পর যেসব কর্মকর্তা ইতোমধ্যে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদেরকে দীর্ঘ এক মাস অতিক্রান্ত হলেও যথাযথভাবে পদায়ন না করায় কর্মস্থলে কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিধায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের পদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছে।
>>>বিগত স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের দেওয়া সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও তা এখনও সম্পূর্ণরূপে সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন না করায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তা দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছে।
>>>জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক পদায়ন নিয়ে দুর্নীতির যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে বিষয়ে যেহেতু উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যাশা করছে এ বিষয়ে প্রকৃত দোষী চিহ্নিত হয়ে যথাযথ শাস্তির আওতায় আসবে এবং প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
>>>নতুন প্রজন্মের চাহিদাভিত্তিক কাঙ্ক্ষিত সংস্কারমুখী পুনর্গঠিত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কমিটি গঠন করায় সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি যেমন যৌক্তিক তেমনি অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করাও সময়ের দাবি হিসেবে বিবেচ্য বিধায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান সরকারের প্রতি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসর- উভয় ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে।