বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের (বাতাঁবো) চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হোসেনের অপসরন চেয়ে সিরাজগঞ্জ সহ সারা দেশে চলছে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ।
গত বছরের জুলাইয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর মাত্র এক বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ সময়ে অর্থের বিনিময়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বিচারে মোট ৮৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন এমন অভিযোগও করেছেন বাতাঁবোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মাহমুদ হোসেনের বিরুদ্ধে আর যেসব অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনেছেন, সেগুলো হলো অনুমোদিত প্রাপ্য সরকারি সুবিধা-সম্পর্কিত বিধি লঙ্ঘন করে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের মোট দুটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৫০৪২, গ-৪৩৮৫৬৫ ও গ-৪৭-৭৫২৩) ও দুজন গাড়িচালককে (হানিফ ও লিপু রেমা) নিজের দাপ্তরিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে আসছেন। সরকারি দুটি গাড়ি ছাড়াও একটি ব্যক্তিগত গাড়ির পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় তিনি বাতাঁবো থেকে নিয়ে থাকেন। এখন তিনি বাতাঁবোর আওতাধীন নরসিংদী জেলায় পরিচালিত বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বস্ত্র অধিদপ্তরের অধীনে দিয়ে দিতে অপচেষ্টা করছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মাহমুদ হোসেন ব্যক্তিগত স্বার্থে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাতাঁবোতে তাকে নিয়োগকারী সরকারের পতন হলেও কমেনি তার দম্ভ ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা। মাহমুদ হোসেন সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর নরসিংদীতে তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এক সভায় সবার সামনে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে তেড়ে ওঠেন। এ সময় ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন খোদ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও সচিব মো. আব্দুর রউফ।
এসব অভিযোগের পাহাড় জমা হওয়ার প্রেক্ষাপটে মাহমুদ হোসেনের অপসারণ দাবিতে বাতাঁবোর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাঁত শিল্পের মালিকরা এবং তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষকরা সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, কুষ্টিয়া, ঢাকা ও নরসিংদীতে গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার চতুর্থ দিনের মতো পৃথক পৃথক বিক্ষোভ করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গত ৯ অক্টোবর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে মো. মাহমুদ হোসেনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা জানান, তিনি ৫ অক্টোবরের পর অফিসে আসছেন না। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিস থেকে জানানো হয়, মন্ত্রণালয় থেকে তার খোঁজ করা হচ্ছে; কিন্তু ফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাতাঁবো কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদলকে আমি গত মঙ্গলবার ডেকেছিলাম। মাহমুদ হোসেন সাহেবের পদ ছোট হলেও তিনি আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তা। তার চাকরির মেয়াদ আছে আর অল্প কিছুদিন। এ বিবেচনায় আমি বাতাঁবো কর্মকর্তাদের দুটি অপশন দিয়েছি। তার একটি হলো মিলেমিশে মাহমুদ হোসেনকে নিয়ে থাকা। অন্যটি হলো সেটা করতে না পারলে তাকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারণ করা বা সরিয়ে নিয়ে আসা। কোনটি তারা চান তা আমাকে জানাতে বলেছি।’
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহমুদ হোসেনকে বাতাঁবোর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে চাকরির শেষ বছরে এসে তিনি এই নিয়োগ পান। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে বাতাঁবো চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বাতাঁবোর মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত অন্যদের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তার অপসারণ দাবী করছে।