প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের বেতন আটকে রেখে তা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও পাওনাদারদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে প্রতারক এমডি সামিউল ইসলাম। স্টাফদের বেতন আটকে রাখা, মহিলা স্টাফদের শরীরে হাত দেয়া, সবাইকে মানসিক টর্চার করা, ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা, স্টাফদের বেতন থেকে আয়কর কেটে রাখলেও সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়াসহ ভয়ংকর সব অপরাধে অভিযুক্ত তাফরিদ কটন মিলসের এমডি সামিউল ইসলাম।
বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংবাদ প্রচার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, থানা-পুলিশ, কলকারখানা পরিদর্শক এবং শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করার পর টনক নড়ে তাফরিদ কটন মিলের এমডি সামিউল ইসলামের। দীর্ঘদিনের নাটকের পর আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) উত্তরা পশ্চিম থানায় দুপুর সাড়ে বারোটায় আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছিলো মাফিয়া এমডি সামিউল ইসলাম।
এমডি সামিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো ইয়ত্তা নেই। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা স্বৈরাচারসুলভ একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার হলে অভিযুক্ত তাফরিদ কটন মিলের এমডি সামিউল ইসলামের বিষয়ে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই ব্যাংক এশিয়া তাফরিদ কটন মিলের হবিগঞ্জ ফ্যাক্টরি নিলামে তোলার জন্য পত্রিকায় সার্কুলার প্রদান করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, দীর্ঘ ২০ বছর যাবত তাফরিদ কটন মিলের এমডি সামিউল ইসলাম তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিকট থেকে কৌশলে সরকারি কর আদায় করেন কিন্তু কখনো জমা করেননি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ও চাকরিজীবী নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই যখন তখন কর্মীদের ছাটাই, মানসিক এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন এই সামিউল ইসলাম।
শুধু তাই নয়। তার হাত থেকে রেহাই পাইনা মহিলা স্টাফও। অফিসের মহিলা কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে অসভ্য আচরণ এবং কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই এযাবতকালে ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি।
এমডি সামিউল ইসলাম কৌশলে শুধু স্টাফদের বেতন আটকে রাখতেন তা-ই নয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, পাওনাদারদের টাকাও আটকে রাখতেন। সেক্ষেত্রে ব্যাংক চেক ব্যবহার করে পাওনাদরদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতেন। আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত হুমকি, অশালীন আচরণ এককথায় মাফিয়ার ভূমিকায় ছিলেন সামিউল।
তবে গত পাঁচই আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর সামিউলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করে অত্যাচারে জর্জরিত স্টাফরা। রাজধানীর একটি হোটেলে তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সর্বমহলে দাবি জানাই।
হামলা, মামলা, হুমকি, চাকরিচ্যুতির ভয়ে আতঙ্কিত হয়েও সামিউলের বিরুদ্ধে এর আগেও সবাই সোচ্চার হতে চেয়েছে, করেছে প্রতিবাদ। কিন্তু মাফিয়া সামিউল সবসময়ই কৌশল গ্রহণ করে। আন্দোলনরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভিতর থেকে দু’এক জনকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি অথবা লোভ দেখিয়ে আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করেছে। এমনকি এবারের আন্দোলনকেও সামিউল কৌশলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বানচাল করতে চেয়েছে। যার অডিও রেকর্ডও ফাঁস হয়েছে।
সবশেষ আন্দোলনরত স্টাফদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে আজ সোমবার উত্তরা পশ্চিম থানায় বসতে চেয়েছিলো এমডি সামিউল ইসলাম। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। নাটকের এই ইপিসোডে প্রতারক সামিউল তার অফিসের এ্যাডমিন থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানান, তিনি আজ বসতে পারবেন না, এমনকি টাকাও দিতে পারবপন না। উল্টো পাওনাদার, স্টাফদের বিরুদ্ধে তুলেছেন নানা অভিযোগ। অর্থাৎ আগের নাটকের একই পুনরাবৃত্তি।
এবিষয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পাওনাদার স্টাফরা। তারা বাধ্য হয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়কদের দারস্থ হয়ে অভিযোগ করে। ঘটনার বিস্তারিত জেনে সমন্বয়কেরাও এমডি সামিউলকে আজ রাতের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলে। সেই সাথে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এখন দেখার বিষয়- বঞ্চিত স্টাফরা তাদের পাওনা বকেয়া বেতন পান নাকি আবারো তাদেরকে দারে দারে ঘুরতে হয়।