শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সিনেমা বানাবেন চলচ্চিত্রকার রায়হান রাফী। (২৬ অক্টোবর) শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ’ নিয়ে এক আলোচনায় তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন।
বার্ষিক এ আলোচনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা ও সংগঠন ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’। এতে অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন ‘তুফান’ নির্মাতা রাফী।
আলোচনার শুরুতে রায়হান রাফী তার সিনেমায় আসা, নির্মাতা হয়ে ওঠা, চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনার পর তিনি উপস্থিত দর্শকের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে সিনেমা বানাবেন কি না। জবাবে রাফী বলেন, ‘এই জুলাই অভ্যুত্থানে এত এত গল্প। এই জুলাই নিয়ে অনেকগুলো সিনেমা বানাতে হবে। আমি আমার জায়গা থেকে খুব চেষ্টা করব। খুব তাড়াতাড়িই হয়তো নির্মাণ করব। সেটা মুগ্ধকে নিয়ে হোক বা পুরো ঘটনা নিয়ে হোক কিংবা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়া নিয়ে হোক। আমার তো সত্য ঘটনা বলতে ভালোই লাগে। এত এত টুইস্ট, গল্প এখানে, কেন বানাব না।’
রায়হান রাফী আরও বলেন, ‘সিনেমা এমনই শিল্প, যার মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়, সমাজব্যবস্থাকে তুলে আনা যায়, এর মাধ্যমে একটা গল্পকে একটা জায়গায় বন্দী করা যায়। এই যে আমাদের একটা আন্দোলন হলো, একটা সময় গিয়ে কিন্তু মানুষ ভুলে যাবে। মানুষ দেখবে না, জানবে না। কিন্তু যখন কোনো সিনেমায় এই দৃশ্যগুলো থাকবে, তখন মানুষের মনে থাকবে।’
আলোচিত সিনেমা ‘তুফান’ নিয়েও কথা বলেন রাফি। তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি আমি খুব চালাকি করে বানিয়েছি। তুফানে আমরা দেখিয়েছি, তুফান একজন বড় সন্ত্রাসী। সে কীভাবে দেশ দখল করছে। সে একটা দলের সবাইকে খুন করে ভোট ডাকাতি করে আরেকটা দলকে ক্ষমতা দিয়েছে। আগের সরকার কিন্তু এই কাজই করেছিল। আমি গানে গানে শাকিব খানের ভাবচক্কর দিয়ে এমনভাবে সেটা দেখিয়েছি যে, ওরা অনেকে বুঝতেই পারেনি যে আসলে কী দেখানো হচ্ছে। আপনারা “তুফান” যদি আরেকবার খেয়াল করে দেখেন, বুঝবেন তুফানের গল্প কিন্তু ডার্ক পলিটিকস। আমি এমনভাবে দেখানোর চেষ্টা করছি যে, সেন্সর বোর্ড বুঝতেই পারেনি যে, আমি আসলে ভোট ডাকাতির গল্প বলছি। আমি এভাবেই সিনেমা বানানোর চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে পার পাই, মাঝেমধ্যে পাই না। যেমন “অমীমাংসিত”তে পাইনি। এই গল্পটা বললাম এ কারণে যে, মানুষ যদি চায়, তাহলে সবকিছুই অর্জন করতে পারে।’
সিনেপ্লেক্স হওয়ার পর থেকে তার সিনেমা বেশি দিন চলছে জানিয়ে রাফী বলেন, ‘ওই দিন সিনেপ্লেক্স একটা রিপোর্ট দিয়েছে। সিনেপ্লেক্স হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি নির্মাতাদের মধ্যে আমার সিনেমা সবচেয়ে বেশি দিন চলেছে। তুফান তো দুই মাস ধরে চলছে। “পরাণ” ছিল ৩০০ দিন, “সুড়ঙ্গ” ছিল ২০০ দিন। একসময় সিনেপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারলে আমার স্বপ্ন পূরণ হতো। এখন যখন দেখি সিনেপ্লেক্সে আমার সিনেমার টিকিট থাকে না, তখন খুব গর্ব হয়।’
তরুণদের উদ্দেশে রাফী বলেন, ‘সিনেমার ভবিষ্যৎ দর্শক। আপনাদের মতো নতুন নতুন লেখক, নতুন নতুন নির্মাতারা যখন সিনেমা বানাবে, তখন সিনেমার ভবিষ্যৎ বদলে যাবে। আপনারা যদি আমাদের সিনেমা দেখেন, কথাবার্তা বলেন, লেখেন, তাহলেই আমাদের সিনেমায় পরিবর্তন আসবে। যেমন আমরা এতদিন পলিটিকসে যেতাম না, পলিটিকস মানে ভালো না। এ কারণে আমাদের এখানে ডার্টি পলিটিকস ঢুকে গেছে। সব ছাত্র যখন নেমে গেল, তখন কিন্তু নতুন করে আবার যাত্রা শুরু হয়ে গেল। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও একই রকম। কেন ভালো সিনেমা হচ্ছে না, কেন হল নেই, কেন ভালো ভালো সিনেমা দেখতে পাচ্ছি না? কারণ, কেউ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যাচ্ছে না।’
ম্যাজিক লণ্ঠন সদস্য রোখসানা আরশি ও জেরিন আল জান্নাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক রীতা জান্নাত। প্রধান আলোচক রাফীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ম্যাজিক লণ্ঠন সদস্যরা। সমাপনী বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ম্যাজিক লণ্ঠন সম্পাদক কাজী মামুন হায়দার।