আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এই দাবি জানান।
হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা আয়োজনে নগরের হাজারী লেনে সংঘটিত ঘটনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে হাজারী লেনে ওসমান আলী নামের এক ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের নিন্দা জানান বক্তারা। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা। ইসকন নিষিদ্ধ করা না হলে হেফাজতের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান বক্তারা।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল আন্দরকিল্লা থেকে এসে নগরের জামাল খান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়। ওই সময় পুলিশ সদস্যরা কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতা মাওলানা নুরনবী, আনোয়ার হোসাইনি, সালাউদ্দিন, আশরাফ বিন ইয়াকুব, মো. শহীদ, মো. রব্বানী প্রমুখ।
এদিকে ইসকনের নেতারা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, হাজারী লেনের ঘটনায় তাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এর আগে বুধবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে একই দাবি করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার নগরীর হাজারী লেনের ওসমান আলী নামের এক ব্যবসায়ীর দেওয়া ইসকনবিরোধী ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সংঘর্ষ হয়। প্রায় ৬০০ ব্যক্তি হাজারী লেনে অবস্থিত ওসমান ও তার ভাইয়ের দোকানে আগুন দিতে আসে। এসময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল সেখানে পৌঁছে তাদের দুই ভাইকে উদ্ধার করে। এরপর কিছু ব্যক্তি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। তারা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর জুয়েলারি কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ পুলিশের ১২ সদস্য আহত হন। ওই আক্রমণাত্মক ব্যক্তিদের কিছু অংশ ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল হাজারী লেন গেলে একদল ব্যক্তি তাদের ওপর অ্যাসিড ছুড়তে শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে ও নিজেদের রক্ষার্থে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা করে ৮২ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
একই দিন ফেসবুকে পোস্ট শেয়ারকারী ওসমান আলীকেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।