জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত গান, স্লোগান বা অন্যান্য কার্যক্রম অভ্যুত্থানকে বেগবান করেছে, আজ বিজয় পরবর্তী সেই প্রতিকূল মুহুর্তগুলো বিবেচনায় ওই সময়ের গানগুলো নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আওয়াজ উড়া’ শিরোনামের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ৬ টায় নন্দনমঞ্চে গণঅভ্যুত্থানের গান নিয়ে এই অনুষ্ঠান।
একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এই আয়োজনের শুরুতে আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশকে উদযাপন করার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন শামসী আরা জামান (বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শহীদ তাহীর জামান প্রিয়‘র মা)। জুলাই আন্দোলনে সন্তানের আত্মাহুতি নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। এরপর বক্তব্য প্রদান করেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আশরাফুল। জুলাই আন্দোলনের সেই সময়ের অনুভূতি তুলে ধরেন তিনি।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জানে কিভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়, আমরা চাই হাজার মালভূমির একটা দেশ, সকল মত, সকল পথ, সকল দৃষ্টিভঙ্গি, সকল ভাষা, আমরা চাই পাহাড়ি, বাঙালি, আদিবাসী, আমরা চাই হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবাই মিলে এমন একটা দেশ গড়ে তুলি। আদিবাসীদের সম্মান জানাতেই আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাদের গান রেখেছি।
মহাপরিচালক আরও বলেন, শিল্পকলা একাডেমি একেবারে জনবান্ধব শিল্পকর্ম চায়, ঘরের ভেতরে সেমিনার করা নয়, আপনাদের মাঝে আপনাদের গানগুলো তুলে ধরা। সমাজের কেন্দ্রে শিল্পকলাকে তুলে ধরতে চাই আমরা। আমাদের কষ্টের ভেতরে আমরা জীবনকে উদযাপন করতে চাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে চাই।
শুক্রবারের এই আয়োজনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই সমবেত সংগীত ‘চল চল চল’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা। সমবেত সংগীত ‘আমরা করবো জয়’ ও ‘নীল নির্বাস’ পরিবেশন করে ডেমোক্রেসি ক্লাউন। এরপর শিল্পী লুম্বিনী চাকমা ‘চকমা ভাষার গান’; ধর্মচন্দ্রা তঞ্চজ্ঞা সন্তোষ ‘তঞ্চজ্ঞা ভাষার গান’; ডিউক মুরমু ‘সাঁওতাল ভাষার গান’; সমাপন স্মাল ‘গারো ভাষার গান’ পরিবেশন করেন।
একক সংগীত পরিবেশন করেন আহমেদ হাসান সানী এবং ব্যান্ড সংগীত ‘আদিবাসী গান’ পরিবেশন করে এফ মাইনর। র্যাপ সংগীত পরিবেশন করে যিন ব্রাদার্স এবং হান্নান হোসেন শিমুল ও তার দল।
অনুষ্ঠানে সবশেষে সমবেত সংগীত ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ পরিবেশন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ।
গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘আওয়াজ উডা’-এর আলোকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এই অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য করেছে ‘আওয়াজ উড়া’। সেই সময় র্যাপার হান্নান হোসেন শিমুল এর ‘আওয়াজ উডা’ অর্থাৎ আওয়াজ ওঠার বিষয়টি এখন বিজয়ে পরিণত হয়েছে, সে কারণে ‘আওয়াজ উড়া’ এই প্রতিপাদ্যে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে আরও ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজন।