ভারতের উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে সকালে মুঘল আমলের জামে মসজিদে আদালত নির্দেশিত জরিপকে কেন্দ্র করে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আজ রোববার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হন এবং ৩০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাডভোকেট কমিশনারের নেতৃত্বে জরিপ দল সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে কাজ শুরু করলে মসজিদের সামনে লোকজন জড়ো হতে থাকে। উপস্থিত জনতা পুলিশের প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে ভিড় হাজারের বেশি মানুষে রূপ নেয়।
জনতার একটি অংশ পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে ১০টিরও বেশি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে। এ সময় দুই ব্যক্তি নিহত হন এবং পুলিশের ৩০ জনেরও বেশি সদস্য আহত হন।
মোরাদাবাদ বিভাগের কমিশনার অঞ্জনেয় কুমার সিং বলেছেন, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা হলেন নাঈম, বিলাল ও নওমান। সংঘর্ষে সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশের বন্দুকধারীসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন।
জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি আইনি লড়াই চলছে। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, মসজিদের স্থানে আগে একটি মন্দির ছিল। এই দাবি সমর্থনে তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘বাবুরনামা’ ও ‘আইন-ই-আকবরি’-এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, মুঘল সম্রাট বাবর ১৫২৯ সালে মন্দিরটি ধ্বংস করেন।
জরিপ সমর্থকরা বলছেন, ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচনে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যদিকে সমালোচকরা মনে করেন, এটি ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইন লঙ্ঘন এবং ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতায় আঘাত।
সম্ভল পুলিশ সুপার কৃষ্ণ কুমার বিষ্ণোই জানান, জনতার একটি অংশ পাথর নিক্ষেপ করলে পুলিশ সামান্য বলপ্রয়োগ এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সহিংসতায় জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়া হবে।
মোরাদাবাদ পুলিশ কমিশনার আনঞ্জয় কুমার সিং জানান, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন নারী রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মসজিদের সামনে পাথর নিক্ষেপ ও বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
ঘটনাটি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব অভিযোগ করেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জরিপ দল পাঠিয়ে এই সহিংসতার সৃষ্টি করেছে, যাতে নির্বাচনি অনিয়ম নিয়ে আলোচনা থেকে দৃষ্টি সরানো যায়।
সমাজবাদী পার্টির এমপি জিয়া উর রহমান বারক জরিপের সমালোচনা করে বলেন, সম্ভলের জামে মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থান। ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় স্থাপনার যে অবস্থান ছিল, তা অপরিবর্তিত রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে।
উত্তেজনার মধ্যেও আদালতের নির্দেশ মোতাবেক জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপ দলের অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, দলটি জায়গার বিস্তারিত পর্যালোচনা করেছে এবং ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বর আদালতে জমা দেওয়া হবে।