ভারতের রাজস্থানের আজমিরের বিখ্যাত খওয়াজা মৈনুদ্দিন চিশতির দরগাহ আসলে একটি শিব মন্দিরের ওপরে বানানো হয়েছিল বলে সেখানকার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এক হিন্দু নেতা। মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে সব পক্ষকে নোটিশ জারি করেছে আদালত।
হিন্দু সেনা নামের একটি সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্তা সম্প্রতি মামলাটি দায়ের করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হরবিলাস সারদার লেখা একটি বইয়সহ দরগাহ-তে যে মন্দির ছিল, তার পক্ষে তিনটি যুক্তি আদালতের সামনে পেশ করেছেন।
আজমির দরগাহ-র প্রধান উত্তরাধিকারী এবং খওয়াজা মৈনুদ্দিন চিশতির বংশধর সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি এই মামলাটিকে সস্তায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার কৌশল বলে বর্ণনা করেছেন।
তার কথায়, এরা সমাজ এবং দেশটাকে ভুল দিশায় নিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০ ডিসেম্বর মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে।
কিসের ভিত্তিতে মামলা দায়ের?
দরগাহ-তে যে একটি মন্দির ছিল, তার সেই দাবির স্বপক্ষে মামলাকারী বিষ্ণু গুপ্তা তিনটি যুক্তি দেখিয়েছেন। প্রথমত, ব্রিটিশ শাসনামলে আজমির পৌরসভার কমিশনার ছিলেন যে হরবিলাস সারদা, তিনি ১৯১১ সালে এক বইতে লিখেছিলেন যে দরগাহ-তে একটি মন্দির ছিল। সেই বইটিই আমার দাবির ভিত্তি।
তিনি বলছিলেন, এ ছাড়াও, বইটি থেকে পাওয়া তথ্য আমি নিজে সেখানে গিয়ে যাচাই করে দেখেছি। হিন্দু মন্দির ভেঙ্গেই দরগাহ নির্মাণ করা হয়েছিল। দরগাহ-র প্রাচীর ও দরজার ওপরে যেসব নকশা আছে, সেগুলো মন্দিরের।
আজমিরের প্রত্যেক বাসিন্দা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনে এসেছেন যে ওখানে একটা শিবলিঙ্গ ছিল। বাসিন্দারা বলেন যে ওখানে একটি শিবমন্দির ছিল, জানাচ্ছিলেন গুপ্তা।
বিষ্ণু গুপ্তার কথায়, দরগাহ-টিতে আসলে সঙ্কটমোচন মহাদেবের মন্দির ছিল এবং আমি দাবি করেছি যে দরগাহ-র যদি কোনও রেজিস্ট্রেশন থাকে সেটাও বাতিল করে সেটিকে সঙ্কটমোচন মহাদেবের মন্দির হিসাবে ঘোষণা করা হোক।
দরগাহ-র ভূগর্ভস্থ ঘরটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যদি সার্ভে করা হয় তাহলে সত্যটা সামনে এসে যাবে, দাবি গুপ্তার। বিষ্ণু গুপ্তা ২০১১ সালে হিন্দু সেনা নামে একটি সংগঠন শুরু করেন, যেটি হিন্দুদের ইস্যুগুলি তুলে ধরার জন্য মাঝে মাঝেই আলোচনায় উঠে আসে।
কী বলছে দরগাহ কমিটি?
গত কয়েক বছর ধরে দরগাহ কমিটি ‘দরগাহ নাজিম’ বা দরগাহ-র ব্যবস্থাপক নিয়োগ করেনি। তাই ‘দরগাহ নাজিম’এর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন সংখ্যালঘু দফতরের উপ-সচিব মুহম্মদ নাদিম।
নাদিম বিবিসিকে বলছিলেন, আমরা এখনও কোর্টের নোটিশ পাইনি। আদালতের নোটিশ এলে, সেটা খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আজমির দরগাহ-র প্রধান উত্তরাধিকারী সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতি বিবিসিকে জানিয়েছেন, আমাদের উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করছি যে কী করণীয় আমাদের। আইন অনুযায়ী আমরা নিজেদের বক্তব্য পেশ করব।
তবে তিনি এই মামলার বিষয়টিকে সস্তায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার কৌশল বলে বর্ণনা করেছেন। তার কথায়, কোনও মসজিদ বা দরগাহ-তে মন্দির আছে, সেই দাবি করে রোজই কেউ না কেউ মামলা ঠুকে দিচ্ছে। এটা ঠিক হচ্ছে না।
চিশতি বলছিলেন, ১৯১১ সালে লেখা যে বইটির কথা বলা হচ্ছে, সেটার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাই নেই। একটা একশো বছরের পুরনো বইয়ের ভিত্তিতে সাড়ে আটশো সালের ইতিহাসকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায় না কি!
তথ্যসূত্র: বিবিসি।