ছাত্র-জনতারঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসছে ভারত সরকার। এবার আরেকটু বাড়লেন বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবেশী দেশে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষী পাঠানোর আওয়াজ তুলতে বললেন তিনি।
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় ভাষণে তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আহ্বান রাখেন বলে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে।
ভারতে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের নেতারা বেশ সোচ্চার বাংলাদেশ নিয়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই দলটির বিধানসভার সদস্যরা মিছিল বের করেছিলেন। সীমান্ত অবরোধের হুমকিও দিয়েছিলেন বিধান সভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা তখন বে রয়েসয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিষয়টি ভিন্ন দেশের বিষয় হিসাবে দেখার কথা বলেছিলেন তিনি। এটাই বলেছিলেন যে এ বিষয়ে যা করার কেন্দ্রীয় সরকারই করবে।
কিন্তু সোমবার বিধানসভায় বক্তৃতায় বেশ চড়া সুরেই তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে এই বিষয়ে ভারত সরকার কথা বলুক, যাতে সেখানে তারা শান্তি সেনা পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।
বাংলাদেশ নিয়ে যখন বিরোধী দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মাঠ গরম করতে চাইছে, তখন দৃশ্যত দিল্লির নরেন্দ্র মোদী সরকারের পদক্ষেপ চেয়ে দৃশ্যত বল বিজেপির মাঠে ছুড়ে দিলেন মমতা।
তিনি বলেন, বর্ডার সিকিউরিটি কেন্দ্রের আওতায়। আমাদের এখতিয়ার বা দায়িত্বে নেই। আমরা হাউজের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী যেন সংসদে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা থাকে কোনও ব্যাপারে তাহলে বিদেশমন্ত্রী যেন সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানান যে কেন্দ্র এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমার দ্বিতীয় পরামর্শ যদি এ জাতীয় ঘটনা (সহিংসতার) ঘটতে থাকে তাহলে আমরা আমাদের লোকেদের ফিরিয়ে আনব। সরকার উদ্যোগ নেবে। তারা ফিরে আসলে থাকার, খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। কোনও ভারতীয়ের উপর অত্যাচার হবে, সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।
বিবিসি বাংলা তার এই বক্তব্যের বিষয়ে বলেছে, ‘ভারতীয়দের উপর অত্যাচার’ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন, তা পরিষ্কার হয়নি।
বাংলাদেশে যখন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করছে, তখন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী পাঠানোর আওয়াজ তুললেন মমতা।
বিশ্বে সংঘাতকবলিত এলাকায় শান্তি ফেরাতে সে দেশের কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী পাঠায়। তবে যে দেশে পাঠানো হবে, সে দেশের সম্মতি লাগে। আর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনও লাগে কোথাও শান্তিরক্ষী পাঠাতে।
বর্তমানে তিন মহাদেশে জাতিসংঘের ১১টি শান্তি রক্ষা মিশন কাজ করছে। তাতে জনবল সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশি সৈন্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছে, বর্তমানে ১৩টি দেশে বাংলাদেশের সেনা, পুলিশ, বেসামরিক ব্যক্তি মিলিয়ে ৬ হাজার ৯২ জন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান এক্ষেত্রে দ্বিতীয়।
বাংলাদেশে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। সম্প্রতি ভারত সরকার যে বিবৃতি দিয়েছে, তার জবাবে ড. ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের চেতনার পরিপন্থি।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে, বিশেষ করে ভারতে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবারই রংপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, এখানে (বাংলাদেশে) কোনও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পাশ্বর্বর্তী দেশের মিডিয়া আমাদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা প্রচার করে।
এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার কূটনীতিকদের সঙ্গে বসার আয়োজন করছে বলে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে।
তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গ্রেপ্তার ও ইসকনসহ সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে সোমবার বিদেশি কূটনীতিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করবে সরকার। বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠান।