নরসিংদীতে এক দিকে সুন্দরী নারীর রূপের সম্মোহনী আকর্ষণ, অন্যদিকে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত সহজ সরল ও বিত্তশালী মানুষ। মধুচক্রের ফাঁদ পেতে শতাধিক মানুষকে সর্বস্বান্ত করার পর অবশেষে পুলিশের ফাঁদে পা দিয়েছে অভিনব এই প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলকারী চক্রের চার সদস্য।
গত (৪ ডিসেম্বর) বুধবার ভোরে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন শামীম এর নেতৃত্বে নরসিংদী পৌর শহরের চিনিশপুর এলাকার এক আবাসিক ভবনে অবস্থিত চক্রটির আস্তানা ও টর্চার সেল ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করেন পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতারণা চক্রের কয়েক সদস্য দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও চক্র-প্রধান মোঃ ইয়াসিন, সেকেন্ড ইন কমান্ড ও আস্তানার ভাড়া গ্রহীতা শারমিনসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং টর্চার সেলের বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হন পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত হতে উদ্ধার করা হয় ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে উপার্জিত নগদ ৫ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গতানুগতিক ব্ল্যাকমেইলকারী চক্রগুলো থেকে একেবারেই আলাদা ছিল এই চক্রটির কর্মপন্থা। টার্গেট নির্ধারণ করে কৌশলে তাদেরকে গোপন আস্তানায় নিয়ে গিয়ে সুন্দরী নারীর সাথে আপত্তিকর ছবি তুলে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। তাতেও যারা রাজিহতো না বা গড়িমসি করতো তাদের জন্য ব্যবস্থা ছিল টর্চার সেলের। সেখানে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বৈদ্যুতিক শট, ওয়াটার বোর্ডিং, প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে নেওয়াসহ চলতো মধ্যযুগীয় নির্যাতনের সব কলা কৌশল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন আইয়ূবপুর ইউনিয়ন হিজুলিয়া এলাকার বাসিন্দা এক মাদ্রাসাছাত্র ও কোরআনে হাফেজ চক্রটির শিকারে পরিণত হলে, তিনি এর প্রতিকার চেয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন। তাকে গোপন আস্তানায় নিয়ে নির্যাতনের পর উলঙ্গ করে অশ্লীল ছবি তুলে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তিনি পকেটে থাকা নগদ ৫ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলাধীন টাওয়াদী এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের পুত্র ইয়াসিন (৩০), ও তার স্ত্রী আফসানা (২৫)।
একই উপজেলার গাবতলি এলাকার রতনের স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), এবং শিবপুর থানাধীন খৈশাখালী গ্রামের বাসিন্দা জনৈক নুরুল ইসলামের কন্যা রেজিয়া আক্তার বৃষ্টি (২৮)। এই চক্রটির হাতে বিগত কয়েক বছরে শতাধিক ব্যক্তি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে অভিযানে থাকা একটি সূত্র জানান।
এ বিষয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ভুক্তভোগী মাদ্রাসা ছাত্রের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান স্যারের নির্দেশ আমরা কোনোরকম সময় নষ্ট না করে চক্রটির প্রধান কার্যালয় এবং নির্যাতন কেন্দ্রে (টর্চার সেল) অভিযান পরিচালনা করি। তিনি আরও বলেন, এই চক্রগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে প্রধানত বিত্তবান ও গ্রামের সহজসরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতো। তাদেরকে নির্মূলে কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান। এছাড়া কোনো প্রলোভনেই অপরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে না যেতে এবং পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেও অনুরোধ জানান তিনি।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্র কর্তৃক নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের পর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।