শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যার স্বীকৃতি ভারতকে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বৃহস্পতিবার রাতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে তার স্বীকৃতি ভারতে আগে দিতে হবে। এরপর এখানে যত ধরনের নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকু করবো।
তিনি বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের মিডিয়ার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মিডিয়ার ভূমিকাকে কার্টেইল করতে হবে। এই অপতথ্য দুই দেশের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।
উপদেষ্টা মাহফুজ আরও বলেন, ভারতীয় প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশের মিডিয়াকে সত্য তুলে ধরতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশিদের সব অপপ্রচার আমরা সম্প্রীতি দিয়ে জয় করব।
এর আগে, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মতপার্থক্য থাকলেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই।
তিনি বলেন, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানামত, নানা ধর্ম, নানা রীতিনীতি থাকবে কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্বেও আমরা পরস্পরের শত্রু নই। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, দুর্গাপূজা পুরো জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। তখন তৃপ্তি পেলাম একটু তো কাজ করেছি। কিন্তু শুনলাম এখনও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম এটা থেকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়। তবে, সবদিকে দেখলাম হামলা, অত্যচার হচ্ছে না। তথ্যের মধ্যে বিশাল ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে।
ভুল তথ্যের বিষয়ে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো ঘটনার প্রকৃত তথ্য জানার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, যাতে দোষীকে তাৎক্ষণিক বিচারের আওতায় আনা যায়।
এদিকে, ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং উসকানির বিরুদ্ধে ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে ধারাবাহিকভাবে এ বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
৩ ডিসেম্বর প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর বুধবার বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিজেপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনসহ বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরমধ্যে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়ে যায়। তার জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ‘চিন্ময়ের অনুসারীরা’ সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলা হয়, যাকে পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে বর্ণনা করে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এসব পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা।