সিরিয়ায় স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পালিয়ে যাওয়ার পর দেশটি পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে, দেশটিতে মার্কিন প্রশাসন কী চায় সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ বছরের পর বছর ধরে সিরিয়ায় মধ্য ও গণতন্ত্রপন্ত্রী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে অস্ত্রসহ নানান সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি তেলক্ষেত্রসহ বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। দেশটিতে কয়েকটি ঘাঁটি নির্মাণ করে ৯০০ সেনা মোতায়েন রেখেছে মার্কিন প্রশাসন।
সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে বলেছেন, বাশার আল আসাদের পতন সিরিয়ায় সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই সামনে এনেছে। মূলত বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া আইএসআইএলের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে বিদ্রোহী নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাইডেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত যে বিরোধী নেতারা এই মুহূর্তে সঠিক কথা বলছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সরকার মধ্যপন্থী হবে। তবে, তিনি সতর্ক করে এও বলেন যে এই কথাগুলি কাজে পরিণত হয় কি না তা যুক্তরাষ্ট্র দেখবে। সিরিয়ার জনগণের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পুনর্গঠনে মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে বলেও জানান বাইডেন।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হেইদি ক্যাস্ত্রো এক বিশ্লেষণ বলেন, বাইডেন হচ্ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। তার প্রশাসনের ইচ্ছা ও চাওয়া তার বিদায়ের সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। কেননা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া থেকে বেরিয়ে যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় উগ্রপন্থীদের উত্থান নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মার্কিন বিমান বাহিনী আইএসআইএল-এর সাথে যুক্ত ৭৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) বলেছে, এগুলি আইএসআইএল (আইএসআইএস) শিবির এবং অপারেটিভ। হামলার পর ক্ষতির মূল্যায়ন চলছে।
হেইদি ক্যাস্ত্রো বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা সিরিয়ার সম্ভাব্য নেতাদের প্রতি সতর্কবার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সেন্টকম কমান্ডার মাইকেল কুরিলা বলেছেন, সিরিয়ার সমস্ত সংস্থার জানা উচিত যে তারা যদি আইএসআইএল (আইএসআইএস) এর সঙ্গে অংশীদারত্ব করে বা সমর্থন করে তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের জবাবদিহি করবে।
সুতরাং, এটা দেখা যাচ্ছে যে, সিরিয়ায সামরিক শক্তি বজায় রাখা এবং আইএসআইএল (আইএসআইএস) প্রভাব খর্ব করা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে।
অভিযান শুরুর ১২ দিনের মাথায় রবিবার বিনাবাধায় রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। এদিন ভোরেই বাশার আল আসাদের পালিয়ে যাওয়ার খবর আসে। বিদ্রোহীরা রাজধানীতে প্রবেশের পর সিরিয়ায় নতুন যুগের শুরুর ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান হয়। তুরস্কসহ পশ্চিমা বিশ্ব সতর্কতার সঙ্গে আসাদের পতনকে স্বাগত জানিয়েছে।