সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে নেমেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী উগ্রবাদী ভারত। এইবার পঞ্চগড়ের শিশু কন্যা প্রমির ভারত প্রবেশ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় ব্যাপক মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে প্রমির মা-বাবা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
প্রমির বাবা-মা বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রমি ‘পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে প্রমি চোখের রোগে ভুগছে, ওর চোখের অসুখ, চিকিৎসার জন্য কয়েকবার ভিসার জন্য চেষ্টা করেছি, পায়নি। মেয়ে কি বুঝেছে জানি না, ভিসা না পেয়ে চিকিৎসার জন্য সে এক আত্মীয় ঠিকানা ধরে ভারত প্রবেশ করেছে।অথচ ভরতীয় মিডিয়ায় কি সব উল্টোপাল্টা সংবাদ প্রকাশ করে অস্থির করে ফেলছে।’
প্রিয়ন্তী রায় প্রমি গত ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভারতের উত্তর দিনাজপুরের ফতেপুর বিওপি হয়ে ভারত প্রবেশকালে ফতেপুর বিওপি জোয়ানদের হাতে আটক হয়। পরে বিএস এফ জোয়ানরা তাকে ভারতের চোপড়া থানায় হস্তান্তর করে। পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কোচবিহারের শহীদ বর্ধনা স্মৃতি শিশুকন্যা আবাসন হোমে পাঠায়। এই শিশু মেয়ের বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসীপাড়া গ্রামে। প্রমি পঞ্চগড় শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত কণ্ঠশিল্পীও বটে।
অথচ এই ঘটনায় রঙ্গ চটিয়ে ভারত মিডিয়া প্রচার করা হয়েছে। ‘অর্পিতা দাম (যদিও তার নাম প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) ইসকন ভক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে অত্যাচারের ভয়ে চলে আসে। বাবা ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। বর্তমানে প্যারালাইজড-মা খুবই অসুস্থ্, তারা আসতে পারবেনা। বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয়, তাই মেয়েকে নিরাপদ রাখতে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।’
অথচ ভারতে প্রচার হওয়া ভিডিও ক্লিপে প্রমির শারীরিক ভাষায় কোন প্রকার অভিযোগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
তবে নাবালিকা প্রমির ভারতীয় আত্মীয় (দাদু) অরানন্দ অধিকারী ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তাদের হুমকি দিচ্ছে, বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছে, মেয়েদের টর্চার করছে, অপহরণ করবে। প্রাণভয়ে চলে আসছে। বাবা মায়ের সামনে যদি মেয়েকে টেনে নিয়ে যায়, তাহলে ওরা সেখানে থাকে কি করে। দুঃখে চলে আসছে ইত্যাকার।’ এ ধরনের মিথ্যাচারে পঞ্চগড়ের সর্বত্র প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের সাংবাদিকদের প্রতি ঘৃণার স্রোত বইছে।
ভারতে আটক অর্পিতা (প্রিয়ন্তী রায় প্রমি) র বাবা জয়দেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করছি। কোন সমস্যা নাই। আমরা ইসকন ভক্তও না। আমরা সনাতনী। ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে, তা সম্পন্ন কাল্পনিক। আমরা পঞ্চগড় তথা বাংলাদেশ শান্তিতে রয়েছি, ভালো আছি। ভারতীয় গণমাধ্যম এর মিথ্যা প্রচারনার নিন্দা জানাচ্ছি।’ প্রমির মা অনুরাধা রানী বলেন, ‘ভারতের সাংবাদিকরা আমার মেয়ের চরম ক্ষতি করলো।’
পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শারদীয় দুর্গাপূজা মন্ডপ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী মনোরঞ্জন বনিক বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যা প্রচার করছে তা মিথ্যা, বানোয়াট।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, ‘ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারনা চরম অপ- প্রচার। খবর পেয়ে মেয়ের বাসায় গিয়ে খবর নেওয়া হয়েছে। তার বাবা-মা সম্পুর্ণ সুস্থ, তারা ইসকন ভক্তও না। মুলত প্রমি অসুস্থ, ভিসা ছাড়া চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আটক হয়েছে।’