কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে খেলনা পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ব্যাংকে হানা দেওয়া তিন ডাকাত। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আলোচনার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তারা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
জানা গেছে, আলোচনার মাধ্যমে ওই তিন ডাকাতকে আত্মসমর্পণ করানো হয়। পরে তাদের সেখান থেকে বের করে নিয়ে যায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ডাকাতরা ব্যাংকে ব্যবস্থাপকসহ যে আট থেকে দশজনকে জিম্মি করে রেখেছিল, তাদের ইতোমধ্যে সুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভল্টও সুরক্ষিত আছে।
এবিষয়ে র্যাব–১০ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়, “চুনকুটিয়া এলাকায় রুপালি ব্যাংকে ঢুকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন তিন ডাকাত। সেই তিনজন যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।”
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা জানালা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করে। একটি বন্দুক জানালা দিয়ে ফেলা হয়। বাকি অস্ত্র ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে একে একে ডাকাত দলের সদস্যরা বেড়িয়ে আসে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন ডাকাত সদস্যকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।”
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, “ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকূটের মাধ্যমে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। সেই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদেরকে দেখে সন্দেহ হচ্ছে অন্য কিছু। কারণ আটককৃত তিন ডাকাত হলেন শারাফাত (১৬), সিফাত(১৬) ও নিরব (২২)। তাদের বয়স খুবই কম। তাছাড়া তাদের কাছে খেলনা পিস্তল ছিলো। এতো অল্প বয়সে মাত্র ১৫ লক্ষ টাকার জন্য খেলনা পিস্তল নিয়ে দিনেদুপুরে এমন ঝুঁকি কেউ নিবে ? এখানে অন্য কোনো কাহিনী থাকতে পারে।”
এদিকে বিকেলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আওলাদ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘রূপালী ব্যাংকে ঢুকে পড়া ডাকাতেরা দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। একটি হলো: লুটকৃত ১৫ লাখ টাকা তারা নিতে চায়, অপরটি তাদের নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দিতে হবে। তাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে নেগোসিয়েশনের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তব এখন অবধি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি।
মূলত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ডাকাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে। এ সময় পাশের মসজিদের মাইক থেকে ডাকাতির খবর জানানো হলে স্থানীয় কয়েকশ লোক ব্যাংকের ওই শাখা ঘিরে ফেলেন ও বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাংকটি ঘেরাও করে রাখে।
এদিকে ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কেরানীগঞ্জ সহ আশেপাশের উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করে। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক–সংলগ্ন মূল সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ডাকাত দলকে আত্মসমর্পণের জন্য পাশের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টায় সন্ধ্যার দিকে আত্মসমর্পণ করে তারা।