
১৮৭৬ সালের নভেম্বরে মূলত খেলার চেয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের একটি দল জেমস লিলিহোয়াইটের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফর করেছিলো। অস্ট্রেলিয়ার তখন কেন্দ্রীয় কোনো ক্রিকেট দল ছিল না। নানা রাজ্য দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডের দলটি খেলে অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করে।
জেমস লিলিহোয়াইট যদিও তার দলে এই সফরে কোনো অপেশাদার (অ্যামেচার) ক্রিকেটারকে রাখেননি। এর অর্থ, বিখ্যাত ডব্লিউ জি গ্রেস এই সফরে অন্তর্ভূক্ত হতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড ঘুরে আবার লিলিহোয়াইটরা অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলস লিলিহোয়াইটদের চ্যালেঞ্জ জানায় একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেরার জন্য। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ মেলবোর্নের বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড বা এমসিজিতে শুরু হয় ওই ম্যাচটি। যেখানে ইংল্যান্ড দলের ১১ জনের সবাই পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন।
যদিও ইংল্যান্ড দলে সেই ১১ জনের মধ্যে কোনো উইকেটরক্ষক ছিল না। কারণ, টেড পুলি নামে যে উইকেটরক্ষক ছিলেন, তিনি ছিলেন মূলত একজন জুয়াড়ি এবং জুয়ার কারবার করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ডে গ্রেফতার হন ক্রাইস্টচার্চের কারাগারে বন্দী হন।
তো ১৫ মার্চ, ১৮৭৭ সালে অল ইংল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার সম্মিলিত একাদশ মুখোমুখি হয় এমসিজিতে। শুরুতে এই ম্যাচটিকে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে প্রচারিত হয়নি। কিন্তু এটি দুটি প্রতিনিধিত্বমূলক দলের মধ্যে প্রথম ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে এবং শেষ পর্যন্ত এটাকেই ক্রিকেটের প্রথম অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচের মর্যাদা দেয়া হয়। সেই থেকে কেটে গেছে ১৪৮টি বছর।
সে হিসেবে ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ দিনটিকে বলা হয়, টেস্ট ক্রিকেটের জন্মতারিখ হিসেবে। ম্যাচটিতে টস জিতে স্বাগতিকরা ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ট্রেলিয়ান দলটিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ফ্রেডরিক স্পফোর্থ ছিলেন না। ইংল্যান্ডের অপেশাদার দলে ছিল সেরা সেরা ব্যাটাররা। কিন্তু পেশাদার দল নিয়ে খেলায় ডব্লিউ জি গ্রেসসহ অনেকেই ছিলেন না ওই ম্যাচে। অর্থ্যাৎ, দুই দলই পূর্ণ শক্তির ছিল না বলা যায়।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান, প্রথম সৌভাগবান ব্যাটার- যিনি টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বল মোকাবেলা করেন, প্রথম রান করেন এবং প্রথম হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি করেন। কেন্টে জন্ম নেয়া এই ব্যাটারকে প্রথম বল করেন ইংলিশ বোলার আলফ্রেড শ। পরের বল থেকে প্রথম রান সংগ্রহ করেন ব্যানারম্যান।
ওই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেন এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত তিনি ১৬৫ রান করেন। ব্যানারম্যানের প্রথম-শ্রেণির ক্যারিয়ারের এটাই একমাত্র সেঞ্চুরি। ১৬৫ রান করার পর জর্জ আলিয়েটের বল তার আঙুলে আঘাত করায় আহত হয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ২৪৫ রান। দলীয় স্কোরের মধ্যে ৬৭.৩ শতাংশ রান সংগ্রহ করেন ব্যানারম্যান, যা ১৩০ বছর পরও একটি রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। অস্ট্রেলিয়ার করা ২৪৫ রানের জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১৯৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ১০৪ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেট নেন ইংল্যান্ডের বোলার অ্যান্ড্রু শ।
জয়ের জন্য ১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ান বোলার টম কেন্ডালের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। টম কেন্ডাল ৩৩.১ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে একাই নেন ৭ উইকেট।
অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানে জয়লাভ করে: ঠিক ১০০ বছর পর একই মাঠে, তারা সেন্টেনারি (শতবর্ষ উদযাপন) টেস্টে ইংল্যান্ডকে ঠিক একই ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। যা এই ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচের স্মরণে আয়োজন করা হয়েছিল।
১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনার সূচনার দিন। এটি শুধুমাত্র একটি ম্যাচই ছিল না, বরং এটি ক্রিকেটের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। আজও টেস্ট ক্রিকেট ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে এবং এর সূচনা হয়েছিলো সেই ঐতিহাসিক দিনে।