রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ শিক্ষার্থীর উদ্যোগে শুরু হওয়া একটি ব্যতিক্রমী সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প ‘নিশানদিহি’ সাঁওতাল নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মো: মাঈনুল ইসলাম (ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট), নিশাত আনজুম (গ্রাফিক ডিজাইন, ক্রাফ্ট এবং হিস্টোরি অফ আর্ট) এবং আখলিমা আক্তার শিলা (ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) এই উদ্যোগের মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
নিশানদিহির আওতায় রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার টেমা নামক সাঁওতাল গ্রামে ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নারীদের বিভিন্ন ধরনের গহনা, হাতের কাজ ও কুটিরশিল্পের নৈপুণ্য শেখানো হয়েছে, যা তারা স্থানীয় ও জাতীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
প্রোজেক্ট নিশানদিহির সদস্য আখলিমা আকতার শিলা জানান, “আমরা সাঁওতাল কমিউনিটির নারীদের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যেখানে তাদের জুয়েলারি তৈরির দক্ষতা শেখানো হয়েছে। আগে যেখানে তারা শুধুমাত্র কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এখন তারা নিজেরাই জুয়েলারি তৈরি করে এবং তা বিক্রি করছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল তাদের সাবলম্বী করে তোলা এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি সাধন করা, কারণ সাঁওতাল নারীরা দীর্ঘকাল ধরে নানা বাধার মুখোমুখি হয়ে পিছিয়ে পড়েছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা তাদের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছি, যাতে তারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে সামাজিক এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে।”
প্রোজেক্ট নিশানদিহির অন্যতম উদ্যোক্তা রাবির শিক্ষার্থী মো: মাঈনুল ইসলাম জানান, “সাঁওতাল নারীদের পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ তাদের আর্থসামাজিক ও শিক্ষাগত বাধাগুলো। আমাদের প্রকল্পের মূল লক্ষ্য তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রেখে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা।”
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি প্রিন্স টুডু জানান, “আমাদের আদিবাসী ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরোনো হলেও আমরা নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধার কারণে উন্নয়নের মূলধারায় প্রবেশ করতে পারিনি। প্রোজেক্ট নিশানদিহি আমাদের নারীদের জন্য নতুন এক কর্মসংস্থানের দিক উন্মোচন করেছে।”
এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। তারা বিশ্বাস করেন, সাঁওতাল নারীদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে নতুনভাবে পরিচিত করা সম্ভব হবে, যা তাদের জীবনমানের উন্নয়নসহ বৃহত্তর সমাজে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।