রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে সম্প্রতি বঙ্গভবন এলাকায় বিক্ষোভ, অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন তিন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিতর্কসহ সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার জন্য বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীতে বৈঠক করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সমন্বয় বাড়াতে তিন ধরনের কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি কমিটি সরকারের সঙ্গে, একটি সংগঠন গোছাতে এবং আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি হিসেবে কাজ করবে।
এদিনের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘চলমান পরিস্থিতির পর্যালোচনা, আসন্ন কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ এবং কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি’। এতে ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৮৮ জন। উপস্থিত ছাত্রনেতাদের অনেকে নানা বিষয়ে সমন্বয়হীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রথমত, এ সপ্তাহের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি ২০ থেকে ২২ সদস্যের হবে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক থাকবেন।
দ্বিতীয়ত, একটি অর্গানাইজিং (সাংগঠনিক) টিম থাকবে। এই টিম একাধিক সেলে বিভক্ত থাকবে এবং সেল অনুযায়ী কাজ করবে। এই অর্গানাইজিং টিম এ মাসের মধ্যে গঠন করার জন্য বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে অর্গানোগ্রাম দেওয়া হয়েছে, চার সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, সেটি এই সপ্তাহের মধ্যে বর্ধিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এ ছাড়া ১৫ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের ১০০ দিন উপলক্ষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি; পাশাপাশি ঢাকায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, রিফাত রশীদ, আরিফ সোহেল, উমামা ফাতেমা, আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ। বৈঠক শেষে আবদুল হান্নান বলেন, অতিদ্রুত একটা নির্বাহী কমিটি করা হবে। কয়েকটি সেল করা হবে, যাতে মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়। একটা সাংগঠনিক কমিটি হবে, যারা সংগঠন ঠিক করবে।
সমন্বয়কদের মধ্যে যাঁরা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আবদুল হান্নান বলেন, ‘যাঁরা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকবে, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সরকারের বাইরের অংশের সঙ্গে কী হচ্ছে, সেটা আলাপের বিষয় নয়। তাঁদের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা আছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে একটা রূপরেখা দেওয়া হবে।’
আরিফ সোহেল বলেন, তাঁদের সভায় নীতিনির্ধারণী ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে বিষয় নিয়ে তাঁরা মাঠে আছেন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে এগোবেন, সেটা আলোচনা হয়েছে। কমিটি কীভাবে গুছিয়ে নেওয়া হবে, সেটা আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি দুজন উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে আরিফ সোহেল বলেন, কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে, সেটা তাঁরা জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে দলীয় সরকার ও সংসদীয় সরকার নেই, তাই সে আলোচনা করে নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই কীভাবে নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে মানুষের মতামত নিতে হবে।
সহসমন্বয়ক মো. মোবাশ্বের বলেন, তাঁরা এখানে কোনো বুঝ নিতে আসেননি। তাঁরা সুস্পষ্ট উত্তর নিতে এসেছেন। একটা বুঝ দিলেই তাঁরা চলে যাবেন, এখন আর সেই সময় নেই। তাঁদেরকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান শুনতে হচ্ছে। সেটা তাঁদের জন্য ও তাঁদের ব্যানারের জন্য দুঃখের।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। আর এটাকে বিতর্কিত করলে গণ-অভ্যুত্থানের যে লেজিটিম্যাসি, সেটাকেও বিতর্কিত করা যাবে।