চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র দেশদ্রোহিতায় অভিযুক্ত উগ্রবাদী বিতর্কিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় এক আইনজীবী নিহত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, চিন্ময় কৃষ্ণের উগ্রবাদী ইসকনের সমর্থকেরা তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। কারণ ওই আইনজীবীর শরীরে মারাত্মকভাবে কোপের চিহ্ন রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, নিহত আইনজীবীর নাম সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফ (৩৫)। তিনি সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি)। সাইফুল লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে আসছিলেন।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিক্ষোভকারীরা এক আইনজীবীকে চেম্বারের নিচ থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অবস্থায় আরও ৮ জন চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হলেন শ্রীবাস দাশ, শারকু দাশ, ছোটন, সুজিত ঘোষ, উৎপল ও এনামুল হক। গুরুতর আহত হওয়া আরেকজনের নাম এখনো জানা যায়নি। অন্যদিকে জেনারেল হাসপাতালে আরও ১৯ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মূলত বেলা সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন না মঞ্জুর করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে দেয়। তারা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করে।
তখন পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী চেষ্টা করেও উগ্রবাদী সমর্থকদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যান আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের করে কারাগারে নিতে পারেনি। পরে পৌনে বেলা তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধ্য হয়ে সাউন্ড গ্রেনেড, ক্যাঁদানে গ্যাসের (টিয়ার) শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এর পর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরে চিন্ময় কৃষ্ণকে বহনকারী প্রিজন ভ্যান কারাগারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে কট্টরপন্থী চিন্ময় অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
ঘটনাস্থলের এক প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী বলেন, পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী আলিফকে বিক্ষোভকারীরা বেধড়ক কোপায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কোপানোর সময় তারা জয় শ্রীরাম বলে স্লোগান দিচ্ছিলো।
চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিবেদিতা ঘোষ জানান, আহত অবস্থায় সাত/ আটজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার লিয়াকত আলী গণমাধ্যমে বলেন, একজন মারা গেছে। তবে কীভাবে মারা গেছে এখনো জানি না।
সন্ধ্যা ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আদালত এলাকায় আইনজীবীরা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছিলেন। আগামীকাল বুধবার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন তারা।