সাম্প্রতিক ফর্মটাই বলে দিচ্ছিল মোটেও সহজ ম্যাচ হবে না রিয়াল মাদ্রিদের জন্য। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে আতালান্তাও কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্সই উপহার দিয়েছে। সমানতালে লড়েছে টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। তবে তিন তারকার জ্বলে ওঠার রাতে শেষ হাসি হাসল রিয়ালই। কিলিয়ান এমবাপেকে দিয়ে শুরু, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ও জুড বেলিংহ্যাম গোল করে তাতে পূর্ণতা দিয়েছেন।
আতালান্তার মাঠ গিউইস স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে জমজমাট এক ম্যাচ উপহার দিয়েছে স্পেন ও ইতালিয়ান দুই ক্লাব। যদিও বল দখল ও গোলের লক্ষ্যে শট সবদিকেই এগিয়ে ছিল স্বাগতিক আতালান্তা। তবে রিয়ালেরও যে জয়ে ফেরাটা বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল। ফলে প্রতিপক্ষের তুলনায় আক্রমণে বেশ পিছিয়ে থাকলেও তারা জয় নিশ্চিত করেছে ৩-২ গোলে।
আগের চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে রীতিমতো বিদায়ের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল লস ব্লাঙ্কোসরা। সেই শঙ্কা কিছুটা কমেছে কালকের জয়ে। একইসঙ্গে পয়েন্ট টেবিলের ২৪ থেকে তারা ১৮ নম্বরে উঠে এসেছে। যদিও এদিন ম্যাচে ৫৫ শতাংশ বল দখলে রেখে আতালান্তা শট নেয় ২০টি। এর মধ্যে তাদের ৯টি লক্ষ্যে ছিল।
বিপরীতে রিয়াল ১০টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ৬টি। তবে তাদের জন্য স্বস্তির এমবাপে, ভিনি ও বেলিংহ্যামের একসঙ্গে জ্বলে ওঠাটা!
ম্যাচে একাধিকবার লিড নিয়েও আতালান্তাকে ঠিক দমিয়ে রাখতে পারছিল না রিয়াল। তবে এদিন শুরু থেকেই কার্লো আনচেলত্তির দল ছিল আক্রমণাত্মক। এমবাপে শুরুর প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর দশম মিনিটে দলের পক্ষে লিড এনে দেন। ব্রাহিম দিয়াজের পাস পেয়ে বক্সে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান ফরাসি অধিনায়ক। এ নিয়ে তিনি রিয়ালের টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোলের দেখা পেলেন। একইসঙ্গে ইউসিএলে তার গোলেরও ফিফটি পূর্ণ হয়ে গেল।
তবে সেই এমবাপেই পরে রিয়ালকে দুঃসংবাদটা দেন। ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে কাঁধে চোট নিয়ে তিনি মাঠ ছাড়েন। ফলে তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন চোট থেকে ফেরা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগো। এরপরই ফের ধাক্কা খায় রিয়াল। বক্সে প্রতিপক্ষ ফুটবলারকে ফাউল করে অঁহেলিয়া চুয়ামেনি নিজের হলুদ কার্ডের সঙ্গে পেনাল্টিও উপহার দেন। আতালান্তার বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড চার্লস ডি কেটেলার স্পটকিকে গোল করে সমতা ফেরান। ১-১ স্কোর নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে মরিয়া রিয়াল ফের লিড নেয় ৫৬তম মিনিটে। যদিও এর আগে পরপর আক্রমণে তাদের রক্ষণে ভীতি ছড়িয়ে ফেরে স্বাগতিকরা। এরপর তাদের ভুলেই সুযোগ পেয়ে যান ভিনিসিয়ুস। বক্সে বল পেয়েই প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
চোট কাটিয়ে ফিরেই তিনি গোল ও অ্যাসিস্ট দুই জায়গাতেই দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। দ্বিগুণ লিড নেওয়ার মিনিট তিনেক পরই ফের রিয়ালের গোল। ভিনির বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে নিচু ও কোনাকুনি শটে জালে জড়িয়ে দেন ইংল্যান্ড মিডফিল্ডার বেলিংহ্যাম।
রিয়ালের উৎসবে বিরতি দিয়ে ম্যাচে ব্যবধান কমায় আতালান্তা। ৬৫তম মিনিটে বক্সে লুকাস ভাজকেসের বাধা সামলে আদেমোলা লুকমান নিচু জোরাল শট নেন। রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া যার নাগাল পাননি। ৩-২ স্কোর গড়ে একের পর এক আক্রমণে আতালান্তা স্প্যানিশ জায়ান্টদের চেপেও ধরেছিল প্রায়। তবে সুযোগ নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত তারা আর স্কোরলাইন বদলাতে পারেনি। রিয়াল স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
এই জয়ে রেকর্ড ১৫ বারের শিরোপাধারী রিয়াল ছয় ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ১৮ নম্বরে উঠে এসেছে। পরাজিত আতালান্তা পাঁচ থেকে নয়ে নেমে গেল। অন্যদিকে, এখনও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে লিভারপুল, সমান ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৮।