বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং এর আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১৪ নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য হল থেকে বহিষ্কারসহ বিভিন্ন মেয়াদে পৃথক শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গাজীপুরস্থ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পৃথক কারণ দর্শাণোর নোটিশ (শোকজ) জারি করেছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক এবং বোর্ড অব ডিসিপ্লিন (ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি) এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাসের সই করা পৃথক পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এবং এর আগে ও পরে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। সেই প্রেক্ষিতে গত ৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডিসিপ্লিন (শৃঙ্খলা কমিটি) এর উল্লেখিত বিষয়ের ১ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি Ordinance Relating to Discipline) এর ধারা ৫ মোতাবেক ওই ১৪ শিক্ষার্থীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত বৃহষ্পতিবার ওই নোটিশ ইস্যু করা হয়। কারণ দর্শানোর জবাব পত্র ইস্যুর ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দাখিলে ব্যর্থ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বর্ণিত শান্তি একতরফাভাবে কার্যকর করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডিসিপ্লিন (ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি) এর সিদ্ধান্তক্রমে এ নোটিশ জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি সূত্রে আরো জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ওই ১৪ শিক্ষার্থীকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কারসহ তাদের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার ও সকল একাডেমিক সনদ জব্দ, ছাত্রত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের চারিত্রিক সনদপত্রে শাস্তি প্রাপ্তির কথা উল্লেখ থাকবে।
অভিযুক্ত ওই ১৪ শিক্ষার্থীরা হলেন:
১.ডুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান মিঠুন,
২.সাধারণ সম্পাদক পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান মান্না,
৩.সহ-সভাপতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইপিই) বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতাপ কুমার,
৪.ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন,
৫.সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই) বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন রিফাত,
৬.কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সিদ্দীকুর রহমান,
৭.টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) বিভাগের শিক্ষার্থী মোজ্জামেল হোসেন শাহীন,
৮.মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই) বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তুহিন,
৯.ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুল আলম শান্ত,
১০.টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম,
১১.কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ প্রিন্স,
১২.কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী পারভেজ মিয়া মাহিন,
১৩.টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) বিভাগের শিক্ষার্থী তাসিন মাহমুদ এবং
১৪.মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (এমই) বিভাগের শিক্ষার্থী এম এম সায়মুন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আরোপিত শাস্তির ব্যাপারে কোন আপত্তি থাকলে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি এর ধারা ৬ মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিলের নিকট আপিলের সুযোগ পাবে এবং সেইক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
ডুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক এবং বোর্ড অব ডিসিপ্লিন (ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি) এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার দাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তদন্ত শেষে ১৪ শিক্ষার্থীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দাখিলে ব্যর্থ হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বর্ণিত শান্তি একতরফাভাবে কার্যকর করা হবে। অভিযুক্তের জবাব সন্তোষজনক হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা।