থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা, যাত্রীমনে স্বস্তি
গাজীপুর-বিমানবন্দর রুটে বিআরটি প্রকল্পে বাস চালু ১৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন খাতে হয়রানি কমাতে এবং যাত্রী জীবনে কিছুটা স্বস্তি দিতে দীর্ঘ ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) আওতায় ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সহজ যোগাযোগের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়- যার নাম দেওয়া হয় “বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি”।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ ও কয়েকগুণ নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়েও প্রকল্পটির কাজ শেষ করা যায়নি। যা নিয়ে তৎকালীন সড়ক বিভাগের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের চরম বিতর্কের মুখে পড়েন। বিতর্কিত সরকারের পতনের পর অবশেষে জনজীবনে ভোগান্তি কমাতে কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটির উদ্বোধন করতে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটি ‘স্বল্প পরিসরে’ উদ্বোধন করা হবে।
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ি বিআরটি স্টেশনে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক উদ্বোধনের বিষয়টি জানান। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন বলে জানা যায়।
মূলত বহুল আলোচিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর। দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বিআরটিতে বাস নামানোর কথা ছিল। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। দুই দফায় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়নি সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন কেউ সাহস করে মুখ খোলেনি।
এরপর আরও এক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটিও হয়নি। সবশেষ বলা হয়েছিল, চলতি বছরের আগস্ট মাসে কাজ শেষ হবে। পরে সরকার আবার ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা জানায়। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিআরটি প্রকল্পে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ফলে প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এদিক থেকে বিগগ সরকারের স্পষ্ট বর্থতা প্রতীয়মান হয়।তাই উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধানত যানজট কমানোর জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হলেও এই প্রকল্পের দীর্ঘ মেয়াদি কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটিতে যানজটে রীতিমতো নাকাল ও ক্ষুব্ধ গাজীপুরবাসী।
আজকের সভায় সচিব মো. এহছানুল হক বলেন, এ পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পে অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বহুদিন ধরে মানুষ এ সার্ভিসের প্রতীক্ষায় আছে। এর একটা অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে দুটি এসি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শিববাড়ি-এয়ারপোর্ট রুটে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।
তবে সড়কটি চালু হলেও বেশ কিছু সমস্যা থেকে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একদিনে সেসব সমস্যার সমাধান হবে না। এ মুহূর্তে সড়কের প্রতিটি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যা মানুষ পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নয়। শিগগিরই এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত আরও অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।’
আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প উদ্বোধনের পর ‘এসি বাস সার্ভিস’ চালুরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ সার্ভিসের আওতায় গাজীপুর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত রুটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলাচল করবে।
সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিন বলেন, প্রকল্পটি কবে চালু হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল। স্বল্প পরিসরে হলেও আগামী ১৬ ডিসেম্বর আমরা ওই প্রকল্পের আওতায় বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করতে পারছি। শুরু হলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে সমাধান করার চেষ্টা করবো।
এসময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান জনাব তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত দুটি বাস পরিচালনা করছি। কিন্তু দুটি বাসে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। যার কারণে বাসগুলো এখন গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচল করবে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার পর প্রাথমিকভাবে ১০টি বাস এই পথে চলাচল করবে। চাহিদা অনুযায়ী বাস বাড়ানো হবে।’
বাসের ভাড়া প্রসঙ্গে বিআরটিএ জানায়, প্রাথমিকভাবে শিববাড়ি থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ টাকা, বোর্ডবাজার ৩৫, টঙ্গীর কলেজ গেট ৫০ টাকা ও এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিরতি পথে এয়ারপোর্ট থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা, বোর্ডবাজার ৪০, চৌরাস্তা ৫৫ টাকা ও শিববাড়ি ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব শামীম আরা, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব বিনীতা রানী, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান, বিআরটি প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম, সওজ ঢাকা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আসলাম আলী, বিআরটিসি’র পরিচালক অনুপম সাহা।
উপস্থিত ছিলেন, ডিএমপি’র উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ফজলুল করিম এবং গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদসহ সড়ক বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সভা শেষে গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে বিআরটিসির একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
আপনার মতামত লিখুন