খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫, ১৮ চৈত্র, ১৪৩১

অনৈতিক সম্পর্ক, গর্ভপাত, অর্থ পাচার

বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে বিসিএস ক্যাডার জিনিয়া, দুদকে ১৩ অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১:১৫ অপরাহ্ণ
বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে বিসিএস ক্যাডার জিনিয়া, দুদকে ১৩ অভিযোগ

প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক সম্পর্ক ও গর্ভপাত, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচার সহ ভয়াবহ সব অপকর্মের বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অপরাধ করতে তারা আমলা, পুলিশ, রাজনীতিবিদ ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

গত রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি এমন অভিযোগ দায়ের করেন। ৪০ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে মোট ১৩টি সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।

অভিযোগে বলা হয়, “পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, প্রতারণা, মানুষকে ভয় দেখিয়ে এবং নিরীহ ব্যক্তিদের মামলায় যুক্ত করাসহ অবৈধভাবে টাকা উপার্জন, পাচার ও হয়রানি করে আসছেন। অনুসন্ধান সাপেক্ষে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া জরুরি।”

অভিযোগ থেকে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তির উত্থান মূলত ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা হয়ে ওঠে। নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান ব্যবসা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়াও হয়ে ওঠে তার পেশা। অপরাধ সম্পন্ন করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করায় সাহারা খাতুন নিজেই তাকে একবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।

অভিযোগ এসেছে, ওই ব্যক্তি (আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন) নিজেকে ডক্টর দাবি করলেও তা ভুয়া। অপরাধের টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে তার এবং জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে। ৯৬টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায় আশরাফুজ্জামান মিনহাজের। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অ্যাকউন্টগুলো বন্ধ করে দেন তিনি। মিনহাজ উদ্দিন নামে এই প্রতারক অধিকাংশ সময়ে থাকেন বিভিন্ন সার্কিট হাউজে। জিনিয়া জিন্নাত ও তাহমিনা আক্তার তিন্নি, এক নারী জজ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে জায়গা বুঝে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। তবে এসব নারীদের মধ্যে জিনিয়া জিন্নাতই কেবল ওই ব্যক্তিকে মিনহাজ উদ্দিন নামে তার স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেন টাঙ্গাইলের সহকারী কমিশনার ভূমি নাজমুল হাসানের কাছে। জিনিয়া জিন্নাত ও ওই ব্যক্তির একাধিক নামের পাশাপাশি একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে জিনিয়া জিন্নাতের পিতা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হলেও ওই কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তিনি। আর জিনিয়া জিন্নাতের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতেও সহায়তা করেছেন এই প্রতারক জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন।

অভিযুক্ত মিনহাজ উদ্দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরের আছাদ মিয়ার বাড়ির মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। আর পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত বরিশালের বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামের রত্তন আলী শরীফের মেয়ে। রত্তন আলী শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করলেও অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

প্রভাবশালী নারী, সচিব, ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ ও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনে পেশা।

ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৪০ পৃষ্ঠার দুটি আলাদা ফাইলে মোট ১৩টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। একনজরে ৪০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ১৩টি অভিযোগ:

>>>ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হওয়া রতন আলী শরীফ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তবুও তার কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। বিভিন্ন সরকারি গেজেটে তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে অসংগতি রয়েছে।

>>>অনৈতিক সম্পর্কের কারণে গর্ভপাত: ২০১৮ সালে টাঙ্গাইলে কর্মরত অবস্থায় অনৈতিক সম্পর্কে গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন।

>>>সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণা: ইউএনও থাকাকালে কথিত স্বামীকে দিয়ে অবৈধ কার্যকলাপ চালান। সরকারি গাড়ি ও গানম্যান ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন মিনহাজ।

>>>চাকরিজীবীদের হয়রানি ও বেতন আত্মসাৎ: সরকারি ড্রাইভারদের বেতন পরিশোধ না করা এবং চাকরিচ্যুত করা।

>>>অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন: প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সুবিধা আদায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন।

>>>মামলা-বাণিজ্য ও হয়রানি: নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করতেন।

>>>ভুয়া পরিচয়পত্র ও একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার: বিভিন্ন নাম ও পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

>>>বিদেশে অর্থ পাচার: কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

>>>সরকারি সম্পদ ও গাড়ি ব্যবহারের অনিয়ম: ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ও সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ-১:
১৩টি অভিযোগের প্রথমটিতে বলা হয়, পিতা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও সেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কন্যা জিনিয়া জিন্নাত বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর বর্তমানে তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব। অনুসন্ধান সাপেক্ষে চাকরি থেকে অপরাসরণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জিনিয়া জিন্নাতের পিতা রত্তন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। শেখ হাসিনার দেওয়া বীর প্রতীক উপাধিতে তিনি করপোরাল ব্যবহার করেছেন, মানে তিনি সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি বিমানবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং অবসরে গেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে। আবার অন্য এক গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে রত্তন শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করেছেন অথবা নিজেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। আরও অভিযোগ আছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর তার কথিত স্বামীকে নিয়ে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তিনি।

অভিযোগ-২:
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, স্বামীর পরিচয় না থাকলেও অনৈতিক সম্পর্কে গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাত, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। জিনিয়া জিন্নাত টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সহকারী ভূমি কমিশনার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই শেষ করে দেওয়া ওই সন্তানের পিতা কে, নিশ্চিত হওয়া না গেলেও অতি গোপনে গর্ভের সন্তান হত্যার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জিনিয়া জিন্নাত। টাঙ্গাইলের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল গাইনি বিভাগের ওয়ার্ড নম্বর ডব্লিউ থ্রি’র (W-3) বি-১০ নম্বর বেডে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত দুদিন এ কারণে ব্যবহার করেন জিনিয়া জিন্নাত। রোগীর ছাড়পত্রে স্বামীর নাম নেই। এ জন্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ দিন ছুটি কাটান। ছুটি ভোগের প্রায় মাস পরে অসুস্থকালে ছুটি মঞ্জুরের নথিতে ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর স্বাক্ষর করেন তৎকালীন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। দেশে গর্ভের সন্তান হত্যা (দণ্ডবিধিতে ধারা ৩১২-৩১৬) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও জিনিয়া জিন্নাত ও তার অনৈতিক সঙ্গীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের নথিতে স্বামীর কোনো তথ্য নেই। যদিও এটি পুলিশ কেস তবুও গোপনে এমন অপরাধ ঘটিয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত।

অভিযোগ-৩:
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাত নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামী নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। করতেন গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি। সহযোগিতা করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্ত্রী জিনিয়া জিন্নাত নিজেই।

নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী তার সরকারি গাড়ি ও গানম্যান ব্যবহার করে নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। পরিচালনা করতেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুটি গাড়ি জব্দ করেন দুলালপুর থেকে এবং সেগুলো আলাদা ড্রাইভার দিয়ে নিজের হেফাজতে নেন, বিষয়টি নিয়ে জিনিয়া জিন্নাতকে শোকজও করা হয়েছিল; ফলাফল শূন্য। এ ছাড়া সেই কথিত স্বামী বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন। চালকদের পাঠিয়ে গাড়িতে বসে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতেন তার কথিত স্বামী। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত গাড়ীতে জ্বালানি নিয়ে টাকা না দিয়ে চালককে দিয়ে পাম্পের খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে রাখতেন। নেশা করার জন্য বারেও যেতেন ওই ব্যক্তি। এসব অপরাধে দ্বিমত করা চালকদের বেতন না দিয়ে অব্যাহতি দিতেন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে। এসব সার্বিক অপরাধে সহযোগিতা করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত। অভিযোগ আছে ঠিকমত অফিসও করতেন না জিনিয়া জিন্নাত।

অভিযোগ-৪:
চার নম্বরে অভিযোগে বলা হয়েছে, বেতন দেওয়ার পরিবর্তে অপরাধ জায়েজ করতে মিথ্যা অভিযোগে চালককে বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাত তার কথিত স্বামীর কথায় পৌরসভার সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভারকে বেতন ভাতা না দিয়ে ডিউটিকালে তার কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিতেন। এখনও তার কাছে ওই চালক রোবেল মিয়ার চার লাখের বেশি টাকা পাওনা। কথিত স্বামী পরিচয় দেয়া ব্যক্তির অপরাধ জায়েজ করতে রোবেল মিয়াকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরিচ্যুত করেন জিনিয়া জিন্নাত। চাকরি ফিরে চাইতে গেলে চালককে ঘাড় ধরে বের করে দেন।

অভিযোগ-৫:
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে সরকারি গাড়ি ও প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খরচ নিতেন চালক ইদ্রিসের কাছ থেকে। পরে বেতন না দিয়েই সেই চালককে অপসারণ করা হয়। জিনিয়া জিন্নাত নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে অফিস শেষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন। গাড়ির জ্বালানী এবং আনসার সদস্য ও তাদের যাবতীয় খরচ বহন করতে হতো চালককে। ওই চালককে নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী গিয়েছিলেন কথিত স্বামীর সাথে। কিন্তু শেষপর্যন্ত বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে বের করেন দেন সেই চালককে। চালক মো. ইদ্রিস আলীও প্রায় দুই লাখের ওপরে পাওনা।

অভিযোগ-৬:
ছয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সরকারি গাড়ি মেরামতের টাকা ও জ্বালানি খরচের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো চালককে মিথ্যা শোকজ দিয়ে সরকার চাকরি খেয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। এসবের পেছনে ছিলেন কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। নরসিংদীর শিবপুরে সরকারি গাড়ি মেরামতের খরচ না দিয়ে গাড়ির পার্টস ও ইঞ্জিন নাড়া-চাড়া করে চালক রোবেল গাড়ি নষ্ট করেছে এমনসহ নানা অভিযোগে শোকজ করেন জিনিয়া জিন্নাত। পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি নিয়ে তিনি তাতে সই করাতেন চালক রোবেলকে দিয়ে। পরে সেই টাকাও পরিশোধ না করে চালকের ওপর দোষ চাপান এবং মিথ্যা মামলারও হুমকি দেন। পরে শোকজের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি ফেরত, ক্ষতিপূরণ এবং জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামীর শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ-৭:
সাত নম্বর অভিযোগে বলা হয়, কোরবানির কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি কথিত স্বামী ও জিনিয়া জিন্নাত। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে কোরবানীর দিয়ে কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী। চরম খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ-৮:
আট নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাতের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহিরাগত হয়েও তার স্বামী লোকজন নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির চেয়ারে বসে খাবার গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির ওই অফিসের সাবেক সহকারী কশিমনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী এ ঘটনা ঘটান। তার কথিত স্বামী গোপালপুর ভ্রমণে যাবেন এ কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার সকল বন্দোবস্ত করার জন্য আগেই জিনিয়া জিন্নাত নির্দেশ দেন তৎকালীন ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানকে। সাধারণ ব্যক্তি হয়েও কথিত স্বামী কমিশনারের জায়গায় বসে সবাইকে নিয়ে খাবার গ্রহণ ও ছবি তোলেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নাজমুল হাসান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন ঘটনা অপরাধ ঘটালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযোগ-৯:
নয় নম্বরে বলা হয়, স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট তাই স্ত্রীর সহায়তায় মামলা বাণিজ্য করেন কথিত স্বামী। নীরিহ মানুষের নাম মামলায় যুক্ত করে সেই মানুষকে মামলা থেকে বাঁচানোর নামে টাকা আদায় তার ব্যবসা। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বহু মানুষকে হয়রানি করছেন তারা। নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় অন্তত ১০ জনকে তিনি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। এমন কী নিজের পিতা হারুনুর রশিদকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও জিনিয়া জিন্নাত চক্র।

অভিযোগ-১০:
১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের জবাবসহ শাস্তি এড়াতে ডিসি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে নিজের বিরুদ্ধে শোকজের নথি সরিয়ে ফেলেছেন জিনিয়া জিন্নাত। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম ও সরকারি ফোন নিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ে যাওয়াও বিষয়ে শোকজ করলেও সব শোকজের নথি ও জবাব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১ জুন ২০২৩ তারিখে ভারতে সরকারি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শোকজ করা হয়। শোকজ থাকলেও জবাব সরিয়ে ফেলেছেন। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে তাকে এসব শোকজ করা হয়, যা প্রভাব খাটিয়ে সরিয়ে ফেলেন।

অভিযোগ-১১:
১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ দুজন এতটা ভয়ঙ্কার ও দুর্নীতিবাজ ছিলেন যে জিনিয়া জিন্নাতের বদলীর খবরে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে।

অভিযোগ-১২:
১২ নম্বর অভিযোগে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রিসার্চার বলে নিজেকে দাবি করেছেন। কিন্তু তারই দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, যেখানে তিনি রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে সেখানেই তিনি ছাত্র ছিলেন তিনি ২০১১ সাল থেকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী হওয়ার আগেই শিক্ষক সেজে বসে আছেন।

অভিযোগ-১৩:
অন্যদিকে, জিনিয়া জিন্নাতের বাবা রত্তন আলী শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগে হয় তিনি নিজেকে যুদ্ধাহত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিতে নামের মিল নেই। তার ৯টি নামের রকম দেখা যায়, (১) জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, (২) লাল মুক্তি বার্তায় তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীর প্রতীক (বিমান), (৩) খেতাবপ্রাপ্ত গেজেটে (গেজেট নং-৫৪১) তার নাম কর্পোর্যােল রতন শরীফ পুলিশ, (৪) বিমান বাহিনী গেজেটে(গেজেট নং-৩৩৭) তার নাম ফ্লাঃ সাঃ রতন আলী শরীফ), (৫) বিমান বাহিনীর বীর প্রতীকের তালিকায় তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ পুলিশ, (৬) ১৯৭৩ এর গেজেটে (গেজেটে সিরিয়াল নং-২৯১) তার নাম রতন শরীফ (৭) বেসামরিক গেজেটে (গেজেট নং-১৩২১) তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ (বীরপ্রতীক), (৮) বীরত্বভূষণ সনদে (সনদ নং-২৯১) তার নাম কর্পোর্যাাল রতন শরীফ, (৯) খেতাবপ্রাপ্ত আরেক তালিকায় তার নাম কর্পোরাল (অব:) রতন শরীফ হিসেবে তার নাম লেখা।

অর্থাৎ একই ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রীয় নথিতে আটভাবে লেখা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তার পিতার নাম উল্লেখ নেই। এমন কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দাবী করা বীরত্বভূষণ সনদে তারিখও উল্লেখ নেই। নিজেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও চিকিৎসা সনদও পাওয়া যায়নি। এসব অসঙ্গতির পাশাপাশি অভিযোগ পাওয়া যায় ওই ব্যক্তি আসল রতন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা নয় এবং বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম ঠিকানা—মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, পিতা নুর মোহাম্মদ শরীফ, মাতা কদভানু, গ্রাম রাকুদিয়া, ডাকঘর রাকুদিয়া, থানা বাবুগঞ্জ, জেলা বরিশাল। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া তার সব তথ্য যাচাই সাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল, রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধা ফেরত এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও স্বীকারোক্তি:
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করেছেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত। বিভিন্ন স্থানে স্বামী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির নাম আশরাফুজ্জামান মিনহাজ বললে তিনি বলেন এ নামে কাউকে চেনেন না। ছবি দেখালে পরে স্বীকার করেন এই ব্যক্তি তার স্বামী।

এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।

চলছে ষড়যন্ত্র, মূল মাস্টারমাইন্ড চিহ্নিত

জয় বাংলা ব্রিগেড প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা !

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ১:০৮ পূর্বাহ্ণ
জয় বাংলা ব্রিগেড প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা !

গেল ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের। তারপর থেকেই দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকেই ভারতে পলাতক রয়েছে। আর সেই ভারত থেকেই চলছে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে আসছে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের মহাষড়যন্ত্র চলছে। সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে এমন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয়েছে কলকাতায় আয়োজিত এক ইফতার পার্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশের পর।

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কলকাতার রাজারহাটে এক ইফতার পার্টিতে অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাসিম, মেয়র জাহাঙ্গীর, সম্রাটসহ শতাধিক আওয়ামী ঘনিষ্ঠ পলাতক নেতা। উপস্থিত ছিলেন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও তার স্ত্রী।

পরদিন একই স্থানে ছাত্রলীগের শতাধিক পলাতক নেতার আরেকটি ইফতার অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্পষ্টভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাতের নির্দেশ দেন এবং তথ্যসূত্রের দাবি অনুযায়ী, তিনি নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন যে অস্ত্র ও অর্থের অভাব হবে না।

২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর “জয়বাংলা ব্রিগেড” নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বৈঠকে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয় বলে সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

সেখানে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উৎখাতের রূপরেখা ও প্রয়োজনে গৃহযুদ্ধের ডাক দেন বলে অভিযোগ। ওই বৈঠকে দেশ-বিদেশের ৫৭৭ জন অংশ নেন।

এর মধ্যে ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, এবং বাকি ৫০০ জনকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ নেতারাও একই এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। কলকাতা, দিল্লি, আগরতলা ও মেঘালয়ের মাটিও নির্বিঘ্নে ব্যবহার করছেন তারা।

গঠিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। গঠিত হয়েছে কোর গ্রুপ। মধ্য রমজান থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি বৈঠকের তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।

যদিও শেখ হাসিনা এখনও সরাসরি কোনো বিবৃতি দেননি, তবে সিআইডির দাবি অনুযায়ী, ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তাকে মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করা হবে। দেশের ভেতর ও বাইরে সক্রিয় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে অভিযুক্তদের।

সূত্র: https://www.facebook.com/watch/?v=625675083619141&rdid=ezVPoexOrUH9TrsP

অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চায় চীন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চায় চীন

অন্যান্য দেশে নিজেদের পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চায় চীন। এজন্য বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে দেশটির এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক)। বৃহস্পতিবার চীন সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ।

তিনি জানান, বাংলাদেশে চীনা উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তরে সহায়তা করবে তার ব্যাংক, যাতে অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চীনের এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশে চীনা অর্থায়িত অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পগুলোর প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। তবে, এবারই প্রথম তারা বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

চেন হুয়াইউ আজ চীনের হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং মানবসম্পদ দেশটিকে চীন ও বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির জন্য একটি উৎপাদনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে পারে।

তিনি বলেন, আমি শীর্ষ চীনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং আমার সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ চীনের পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ বড় আকারে নতুন বন্দর তৈরি করছে, যা শুধু দেশীয় অর্থনীতির জন্য নয়, বরং নেপাল ও ভূটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের জন্যও সহায়ক হবে।

এ সময় এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান চেন হুয়াইউ বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ও দূরপ্রাচ্যের এশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বাজারের জন্য উপযুক্ত।

তিনি বলেন, চীনের বিপুলসংখ্যক কোম্পানি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করছে এবং আমাদের ব্যাংক বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ ও উৎপাদন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের টেকসই সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো নির্মাণেও সহায়তা করবো আমরা।

ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের উদাহরণ তুলে ধরে চেন হুয়াইউ বলেন, চীনা ও পশ্চিমা উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে হলে বাংলাদেশকে তার ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের দ্রুত ছাড়করণ এবং নতুন অবকাঠামো প্রকল্প যেমন দাশেরকান্দি স্যুয়েজ প্লান্টে সহায়তা চান। একইসঙ্গে প্রকল্প ব্যয় কমাতে এক্সিম ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি ফি কমানোরও আহ্বান জানান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

চেন এ সময় জানান, তার ব্যাংক এসব প্রস্তাব যাচাই করে দেখবে।

একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে চীনা মুদ্রা রেনমিনবিতে (আরএমবি) সহজ শর্তের আরও বেশি ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন। চেন বলেন, উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুব শিগগিরই পুনরায় বৈঠকে বসবেন, যাতে এই বৈঠকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল সুপারকো

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ৩:০৭ পূর্বাহ্ণ
ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল সুপারকো

চলছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান। পবিত্র এই মাসের তৃতীয় দশকও শেষ হতে চলেছে। এ বছরের রমজান মাসটি ২৯ নাকি ৩০ দিনের হবে সে বিষয়েও চলছে আলোচনা। এমন অবস্থায় আসন্ন ঈদুল ফিতর আগামী সোমবার (৩১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো)।

বুধবার (২৬ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং জিও নিউজ।

(Dawn.com (@dawn_com) March 26, 2025)

পাকিস্তান স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো) বুধবার জানিয়েছে, আগামী ২৯ মার্চ পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাওয়ার এবং পরদিন ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন, জ্যোতির্বিদ্যাগত গণনা এবং আধুনিক পর্যবেক্ষণগত তথ্যের ভিত্তিতে শাওয়াল ১৪৪৬ হিজরি চাঁদ দেখার সম্ভাবনা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছে এই গবেষণা কেন্দ্রটি।

সুপারকোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সুনির্দিষ্ট জ্যোতির্বিদ্যার মডেল অনুসারে শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ (সংযোগ) আগামী ২৯ মার্চ বিকেল ৩:৫৮ মিনিটে দেখা যাবে। চাঁদের দৃশ্যমানতা নির্ভর করে চাঁদের বয়স, সূর্য থেকে এর কৌণিক বিচ্ছেদ, সূর্যাস্তের সময় উচ্চতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর।”

দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির সরকারি এই সংস্থার মতে, আগামী ২৯ মার্চ সৌদি আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভব এবং মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে পাকিস্তানের মতোই আগামী ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিরত উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আসন্ন ঈদুল ফিতরের বিষয়ে সুপারকোর এই পূর্বাভাস পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ দেশটির আবহওয়া বিভাগও আগামী ৩১ মার্চ ঈদের পূর্বাভাস দিয়েছে।

পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদুল ফিতরের জন্য তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুসারে, আগামী ৩১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চলবে।

জিও নিউজ বলছে, পাকিস্তানের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রুয়েত-ই-হিলালের কেন্দ্রীয় কমিটি পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য আগামী ৩০ মার্চ, ২০২৫ (রমজান ২৯, ১৪৪৬ হিজরি) রোববার সন্ধ্যায় আঞ্চলিক কমিটিগুলোর সাথে বৈঠক করবে। চাঁদ দেখা কমিটির এই সভা ধর্ম বিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও সামা টিভি জানিয়েছিল, জ্যোতির্বিদ্যার মডেল অনুসারে, আগামী ৩০ মার্চ পাকিস্তানে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আর তেমনটি হলে ২৯ রোজা শেষেই রমজান মাসের সমাপ্তি এবং পরদিন ৩১ মার্চ দেশটিতে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।