খুঁজুন
রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

অনৈতিক সম্পর্ক, গর্ভপাত, অর্থ পাচার

বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে বিসিএস ক্যাডার জিনিয়া, দুদকে ১৩ অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১:১৫ অপরাহ্ণ
বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে বিসিএস ক্যাডার জিনিয়া, দুদকে ১৩ অভিযোগ

প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক সম্পর্ক ও গর্ভপাত, মামলা বাণিজ্য, হয়রানি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচার সহ ভয়াবহ সব অপকর্মের বিষয়ে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অপরাধ করতে তারা আমলা, পুলিশ, রাজনীতিবিদ ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।

গত রোববার (২৩ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি এমন অভিযোগ দায়ের করেন। ৪০ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে মোট ১৩টি সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি।

অভিযোগে বলা হয়, “পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, প্রতারণা, মানুষকে ভয় দেখিয়ে এবং নিরীহ ব্যক্তিদের মামলায় যুক্ত করাসহ অবৈধভাবে টাকা উপার্জন, পাচার ও হয়রানি করে আসছেন। অনুসন্ধান সাপেক্ষে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া জরুরি।”

অভিযোগ থেকে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান নামের ওই ব্যক্তির উত্থান মূলত ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগেই তার পরিবারের এক সদস্যকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন। এরপর ২০০৯ সালে সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর তার তার পরিবারের জামাই পরিচয় দিয়ে সচিব, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা হয়ে ওঠে। নিজে পুলিশ, আমলা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলায় ফেলে আবার মামলা থেকে বাঁচানোর নামে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে টাকা আদায় তার প্রধান ব্যবসা। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়াও হয়ে ওঠে তার পেশা। অপরাধ সম্পন্ন করতে যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের জামাই পরিচয় ব্যবহার করায় সাহারা খাতুন নিজেই তাকে একবার কারাগারে পাঠিয়েছিলেন।

অভিযোগ এসেছে, ওই ব্যক্তি (আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন) নিজেকে ডক্টর দাবি করলেও তা ভুয়া। অপরাধের টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে তার এবং জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে। ৯৬টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায় আশরাফুজ্জামান মিনহাজের। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে অ্যাকউন্টগুলো বন্ধ করে দেন তিনি। মিনহাজ উদ্দিন নামে এই প্রতারক অধিকাংশ সময়ে থাকেন বিভিন্ন সার্কিট হাউজে। জিনিয়া জিন্নাত ও তাহমিনা আক্তার তিন্নি, এক নারী জজ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পরিবারের এক সদস্য ও বিদেশে থাকা এক নারীকে জায়গা বুঝে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। তবে এসব নারীদের মধ্যে জিনিয়া জিন্নাতই কেবল ওই ব্যক্তিকে মিনহাজ উদ্দিন নামে তার স্বামী হিসেবে উল্লেখ করেন টাঙ্গাইলের সহকারী কমিশনার ভূমি নাজমুল হাসানের কাছে। জিনিয়া জিন্নাত ও ওই ব্যক্তির একাধিক নামের পাশাপাশি একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে জিনিয়া জিন্নাতের পিতা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হলেও ওই কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তিনি। আর জিনিয়া জিন্নাতের বাবাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানাতেও সহায়তা করেছেন এই প্রতারক জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন।

অভিযুক্ত মিনহাজ উদ্দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মিরওয়ারিশপুরের আছাদ মিয়ার বাড়ির মো. হারুন অর রশিদের ছেলে। আর পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত বরিশালের বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামের রত্তন আলী শরীফের মেয়ে। রত্তন আলী শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করলেও অভিযোগে বলা হয়েছে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

প্রভাবশালী নারী, সচিব, ম্যাজিস্ট্রেট, জজ, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ ও প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনে পেশা।

ভুক্তভোগী ব্যক্তি ৪০ পৃষ্ঠার দুটি আলাদা ফাইলে মোট ১৩টি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। একনজরে ৪০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ১৩টি অভিযোগ:

>>>ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হওয়া রতন আলী শরীফ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তবুও তার কোটায় বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। বিভিন্ন সরকারি গেজেটে তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে অসংগতি রয়েছে।

>>>অনৈতিক সম্পর্কের কারণে গর্ভপাত: ২০১৮ সালে টাঙ্গাইলে কর্মরত অবস্থায় অনৈতিক সম্পর্কে গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন।

>>>সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণা: ইউএনও থাকাকালে কথিত স্বামীকে দিয়ে অবৈধ কার্যকলাপ চালান। সরকারি গাড়ি ও গানম্যান ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন মিনহাজ।

>>>চাকরিজীবীদের হয়রানি ও বেতন আত্মসাৎ: সরকারি ড্রাইভারদের বেতন পরিশোধ না করা এবং চাকরিচ্যুত করা।

>>>অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন: প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সুবিধা আদায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন।

>>>মামলা-বাণিজ্য ও হয়রানি: নিরীহ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করতেন।

>>>ভুয়া পরিচয়পত্র ও একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার: বিভিন্ন নাম ও পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

>>>বিদেশে অর্থ পাচার: কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।

>>>সরকারি সম্পদ ও গাড়ি ব্যবহারের অনিয়ম: ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ও সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ-১:
১৩টি অভিযোগের প্রথমটিতে বলা হয়, পিতা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও সেই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কন্যা জিনিয়া জিন্নাত বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর বর্তমানে তিনি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব। অনুসন্ধান সাপেক্ষে চাকরি থেকে অপরাসরণ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জিনিয়া জিন্নাতের পিতা রত্তন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। শেখ হাসিনার দেওয়া বীর প্রতীক উপাধিতে তিনি করপোরাল ব্যবহার করেছেন, মানে তিনি সেনাবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি বিমানবাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং অবসরে গেছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে। আবার অন্য এক গেজেটে দাবি করেছেন, তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে রত্তন শরীফ নিজেকে বীর প্রতীক দাবি করেছেন অথবা নিজেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। আরও অভিযোগ আছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পর তার কথিত স্বামীকে নিয়ে মামলা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তিনি।

অভিযোগ-২:
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, স্বামীর পরিচয় না থাকলেও অনৈতিক সম্পর্কে গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেছিলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাত, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে। জিনিয়া জিন্নাত টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সহকারী ভূমি কমিশনার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে গর্ভের সন্তানকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ভূমিষ্ট হওয়ার আগেই শেষ করে দেওয়া ওই সন্তানের পিতা কে, নিশ্চিত হওয়া না গেলেও অতি গোপনে গর্ভের সন্তান হত্যার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জিনিয়া জিন্নাত। টাঙ্গাইলের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল গাইনি বিভাগের ওয়ার্ড নম্বর ডব্লিউ থ্রি’র (W-3) বি-১০ নম্বর বেডে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত দুদিন এ কারণে ব্যবহার করেন জিনিয়া জিন্নাত। রোগীর ছাড়পত্রে স্বামীর নাম নেই। এ জন্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ১২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ দিন ছুটি কাটান। ছুটি ভোগের প্রায় মাস পরে অসুস্থকালে ছুটি মঞ্জুরের নথিতে ২০১৮ সালের ১২ নভেম্বর স্বাক্ষর করেন তৎকালীন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম। দেশে গর্ভের সন্তান হত্যা (দণ্ডবিধিতে ধারা ৩১২-৩১৬) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও জিনিয়া জিন্নাত ও তার অনৈতিক সঙ্গীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের নথিতে স্বামীর কোনো তথ্য নেই। যদিও এটি পুলিশ কেস তবুও গোপনে এমন অপরাধ ঘটিয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত।

অভিযোগ-৩:
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাত নির্বাহী কর্মকর্তার স্বামী নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। করতেন গাড়ি জব্দ, জরিমানা ও চাঁদাবাজি। সহযোগিতা করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্ত্রী জিনিয়া জিন্নাত নিজেই।

নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী তার সরকারি গাড়ি ও গানম্যান ব্যবহার করে নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট সেজে বেরিয়ে পড়তেন অভিযানে। পরিচালনা করতেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুটি গাড়ি জব্দ করেন দুলালপুর থেকে এবং সেগুলো আলাদা ড্রাইভার দিয়ে নিজের হেফাজতে নেন, বিষয়টি নিয়ে জিনিয়া জিন্নাতকে শোকজও করা হয়েছিল; ফলাফল শূন্য। এ ছাড়া সেই কথিত স্বামী বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন। চালকদের পাঠিয়ে গাড়িতে বসে থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে চাঁদা আদায় করতেন তার কথিত স্বামী। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত গাড়ীতে জ্বালানি নিয়ে টাকা না দিয়ে চালককে দিয়ে পাম্পের খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে রাখতেন। নেশা করার জন্য বারেও যেতেন ওই ব্যক্তি। এসব অপরাধে দ্বিমত করা চালকদের বেতন না দিয়ে অব্যাহতি দিতেন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে। এসব সার্বিক অপরাধে সহযোগিতা করতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাত। অভিযোগ আছে ঠিকমত অফিসও করতেন না জিনিয়া জিন্নাত।

অভিযোগ-৪:
চার নম্বরে অভিযোগে বলা হয়েছে, বেতন দেওয়ার পরিবর্তে অপরাধ জায়েজ করতে মিথ্যা অভিযোগে চালককে বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন জিনিয়া জিন্নাত। শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে জিনিয়া জিন্নাত তার কথিত স্বামীর কথায় পৌরসভার সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভারকে বেতন ভাতা না দিয়ে ডিউটিকালে তার কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিতেন। এখনও তার কাছে ওই চালক রোবেল মিয়ার চার লাখের বেশি টাকা পাওনা। কথিত স্বামী পরিচয় দেয়া ব্যক্তির অপরাধ জায়েজ করতে রোবেল মিয়াকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাকরিচ্যুত করেন জিনিয়া জিন্নাত। চাকরি ফিরে চাইতে গেলে চালককে ঘাড় ধরে বের করে দেন।

অভিযোগ-৫:
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে সরকারি গাড়ি ও প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খরচ নিতেন চালক ইদ্রিসের কাছ থেকে। পরে বেতন না দিয়েই সেই চালককে অপসারণ করা হয়। জিনিয়া জিন্নাত নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে অফিস শেষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কথিত স্বামীকে নিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রটোকল নিয়ে ঘুরতেন। গাড়ির জ্বালানী এবং আনসার সদস্য ও তাদের যাবতীয় খরচ বহন করতে হতো চালককে। ওই চালককে নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী গিয়েছিলেন কথিত স্বামীর সাথে। কিন্তু শেষপর্যন্ত বেতন না দিয়ে চাকরি থেকে বের করেন দেন সেই চালককে। চালক মো. ইদ্রিস আলীও প্রায় দুই লাখের ওপরে পাওনা।

অভিযোগ-৬:
ছয় নম্বর অভিযোগে বলা হয়, সরকারি গাড়ি মেরামতের টাকা ও জ্বালানি খরচের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো চালককে মিথ্যা শোকজ দিয়ে সরকার চাকরি খেয়েছেন জিনিয়া জিন্নাত। এসবের পেছনে ছিলেন কথিত স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। নরসিংদীর শিবপুরে সরকারি গাড়ি মেরামতের খরচ না দিয়ে গাড়ির পার্টস ও ইঞ্জিন নাড়া-চাড়া করে চালক রোবেল গাড়ি নষ্ট করেছে এমনসহ নানা অভিযোগে শোকজ করেন জিনিয়া জিন্নাত। পাশাপাশি সরকারি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি নিয়ে তিনি তাতে সই করাতেন চালক রোবেলকে দিয়ে। পরে সেই টাকাও পরিশোধ না করে চালকের ওপর দোষ চাপান এবং মিথ্যা মামলারও হুমকি দেন। পরে শোকজের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি ফেরত, ক্ষতিপূরণ এবং জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামীর শাস্তি চান ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগ-৭:
সাত নম্বর অভিযোগে বলা হয়, কোরবানির কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি কথিত স্বামী ও জিনিয়া জিন্নাত। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে কোরবানীর দিয়ে কসাইয়ের টাকাও পরিশোধ করেননি জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী। চরম খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ-৮:
আট নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, জিনিয়া জিন্নাতের নির্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহিরাগত হয়েও তার স্বামী লোকজন নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির চেয়ারে বসে খাবার গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমির ওই অফিসের সাবেক সহকারী কশিমনার (ভূমি) জিনিয়া জিন্নাতের কথিত স্বামী এ ঘটনা ঘটান। তার কথিত স্বামী গোপালপুর ভ্রমণে যাবেন এ কারণে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার সকল বন্দোবস্ত করার জন্য আগেই জিনিয়া জিন্নাত নির্দেশ দেন তৎকালীন ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানকে। সাধারণ ব্যক্তি হয়েও কথিত স্বামী কমিশনারের জায়গায় বসে সবাইকে নিয়ে খাবার গ্রহণ ও ছবি তোলেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন নাজমুল হাসান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন ঘটনা অপরাধ ঘটালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অভিযোগ-৯:
নয় নম্বরে বলা হয়, স্ত্রী ম্যাজিস্ট্রেট তাই স্ত্রীর সহায়তায় মামলা বাণিজ্য করেন কথিত স্বামী। নীরিহ মানুষের নাম মামলায় যুক্ত করে সেই মানুষকে মামলা থেকে বাঁচানোর নামে টাকা আদায় তার ব্যবসা। নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বহু মানুষকে হয়রানি করছেন তারা। নোয়াখালীতে নিজ এলাকায় অন্তত ১০ জনকে তিনি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। এমন কী নিজের পিতা হারুনুর রশিদকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন আশরাফুজ্জামান মিনহাজ ও জিনিয়া জিন্নাত চক্র।

অভিযোগ-১০:
১০ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, নিজের জবাবসহ শাস্তি এড়াতে ডিসি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে নিজের বিরুদ্ধে শোকজের নথি সরিয়ে ফেলেছেন জিনিয়া জিন্নাত। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে অনিয়ম ও সরকারি ফোন নিয়ে ভারতে ট্রেনিংয়ে যাওয়াও বিষয়ে শোকজ করলেও সব শোকজের নথি ও জবাব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ১ জুন ২০২৩ তারিখে ভারতে সরকারি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শোকজ করা হয়। শোকজ থাকলেও জবাব সরিয়ে ফেলেছেন। নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে তাকে এসব শোকজ করা হয়, যা প্রভাব খাটিয়ে সরিয়ে ফেলেন।

অভিযোগ-১১:
১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, জিনিয়া জিন্নাত ও তার কথিত স্বামী ঘুষ-দুর্নীতির অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ দুজন এতটা ভয়ঙ্কার ও দুর্নীতিবাজ ছিলেন যে জিনিয়া জিন্নাতের বদলীর খবরে নরসিংদীর শিবপুরের সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করে।

অভিযোগ-১২:
১২ নম্বর অভিযোগে জানা যায়, আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিন কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রিসার্চার বলে নিজেকে দাবি করেছেন। কিন্তু তারই দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, যেখানে তিনি রিসার্চার হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে সেখানেই তিনি ছাত্র ছিলেন তিনি ২০১১ সাল থেকে। অর্থাৎ শিক্ষার্থী হওয়ার আগেই শিক্ষক সেজে বসে আছেন।

অভিযোগ-১৩:
অন্যদিকে, জিনিয়া জিন্নাতের বাবা রত্তন আলী শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগে হয় তিনি নিজেকে যুদ্ধাহত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিতে নামের মিল নেই। তার ৯টি নামের রকম দেখা যায়, (১) জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, (২) লাল মুক্তি বার্তায় তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ বীর প্রতীক (বিমান), (৩) খেতাবপ্রাপ্ত গেজেটে (গেজেট নং-৫৪১) তার নাম কর্পোর্যােল রতন শরীফ পুলিশ, (৪) বিমান বাহিনী গেজেটে(গেজেট নং-৩৩৭) তার নাম ফ্লাঃ সাঃ রতন আলী শরীফ), (৫) বিমান বাহিনীর বীর প্রতীকের তালিকায় তার নাম কর্পোরাল রতন শরীফ পুলিশ, (৬) ১৯৭৩ এর গেজেটে (গেজেটে সিরিয়াল নং-২৯১) তার নাম রতন শরীফ (৭) বেসামরিক গেজেটে (গেজেট নং-১৩২১) তার নাম মো. রত্তন আলী শরীফ (বীরপ্রতীক), (৮) বীরত্বভূষণ সনদে (সনদ নং-২৯১) তার নাম কর্পোর্যাাল রতন শরীফ, (৯) খেতাবপ্রাপ্ত আরেক তালিকায় তার নাম কর্পোরাল (অব:) রতন শরীফ হিসেবে তার নাম লেখা।

অর্থাৎ একই ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রীয় নথিতে আটভাবে লেখা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিতে তার পিতার নাম উল্লেখ নেই। এমন কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দাবী করা বীরত্বভূষণ সনদে তারিখও উল্লেখ নেই। নিজেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও চিকিৎসা সনদও পাওয়া যায়নি। এসব অসঙ্গতির পাশাপাশি অভিযোগ পাওয়া যায় ওই ব্যক্তি আসল রতন শরীফ মুক্তিযোদ্ধা নয় এবং বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম ঠিকানা—মো. রত্তন আলী শরীফ বীরপ্রতীক, পিতা নুর মোহাম্মদ শরীফ, মাতা কদভানু, গ্রাম রাকুদিয়া, ডাকঘর রাকুদিয়া, থানা বাবুগঞ্জ, জেলা বরিশাল। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া তার সব তথ্য যাচাই সাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল, রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ সুবিধা ফেরত এবং কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও স্বীকারোক্তি:
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অস্বীকার করেছেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনিয়া জিন্নাত। বিভিন্ন স্থানে স্বামী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির নাম আশরাফুজ্জামান মিনহাজ বললে তিনি বলেন এ নামে কাউকে চেনেন না। ছবি দেখালে পরে স্বীকার করেন এই ব্যক্তি তার স্বামী।

এ বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী।

ঈদের দিন কারাগারে গলা ছেড়ে গাইলেন নোবেল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ
ঈদের দিন কারাগারে গলা ছেড়ে গাইলেন নোবেল

বাংলাদশের সংগীতাঙ্গনের সবচেয়ে বিতর্কিত নাম মাইনুল আহসান নোবেল। দেশের সংগীত পরিমণ্ডলে রাজসিক আবির্ভাবের পর একের পর এক বিতর্কিত কাণ্ডে নিজের জায়গা খুইয়েছেন তিনি। এখন নারী নির্যাতনের এক মামলায় তার ঠাঁই হয়েছে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে।

শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেরানীগঞ্জের এই কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে কারাবন্দি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মইনুল আহসান নোবেল। তিনি মঞ্চে উঠে গেয়েছেন নগর বাউল জেমসের গান; মাতিয়েছেন বন্দিদের।

ঈদের দিনে জেলের বন্দিদের জন্য গান গেয়ে হয়তো ‘আশা’ দেখিয়েছেন নোবেল। বন্দি মানুষগুলোর জন্যও হয়তো ঈদ হতে পারে আনন্দের। তবে, গায়ক নোবেল নিজেকে পরিশুদ্ধ করে ফিরে আসবে গানের জগতে, এমনটাই হয়তো চাইবেন তার ভক্তরা।

ঈদের দিন বিকাল সাড়ে তিনটায় কারা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বন্দিশালার মাঠে আয়োজিত হয় এই বিশেষ অনুষ্ঠান।

মঞ্চে নোবেল ‘অভিনয়’, ‘ভিগি ভিগি’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হয়ে গেলে’সহ তার জনপ্রিয় কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। নোবেলের কণ্ঠে গাওয়া এসব গান শুনে অন্য বন্দিরাও আবেগ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। গানে গানে তৈরি হয় এক ভিন্নরকম উৎসবমুখর পরিবেশ।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে। এরপর গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা রুজু করা হয়।

থানা সূত্র জানায়, মামলাটির তদন্তের সময় ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত কণ্ঠশিল্পী নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়।

অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা

৩ দিনে দেশে আসে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
৩ দিনে দেশে আসে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

ঈদ-উল-আজহার আগে মাত্র তিনদিনে ৬০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকার বেশি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন দিনে (১-৩ জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কোরবানির ঈদ সামনে থাকায় প্রবাসীরা পশু কেনা, পোশাক, উপহার এবং পারিবারিক খরচের জন্য স্বজনদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে জুনের শুরুতেই প্রবাসী আয়ের জোয়ার দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রবাহ কেবল ঈদকেন্দ্রিক নয়; বরং সরকারের প্রণোদনা, বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহ এবং হুন্ডি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলেই ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।

এ বছরের মে মাসে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে। যার পরিমাণ ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টানা প্রতি মাসেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত (১১ মাসে) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৭ হাজার ৫০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২৭.৫০৭ বিলিয়ন), যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ২১ হাজার ৩৭৪ মিলিয়ন (২১.৩৭৪ বিলিয়ন) ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গ্যারান্টিতে ঋণের টাকা শোধ করতে হবে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে

ধারের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে একীভূতকরণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
ধারের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে একীভূতকরণ

বেসরকারি খাতের দুর্বল পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করে একটি ইসলামী ধারার ব্যাংক করার সিন্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী জুলাই থেকে একীভূতকরণের পদক্ষেপ শুরু করে ১৫ অক্টোবর এই সাড়ে তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য যাচাই করা হবে। এর মধ্যে কোন ব্যাংক যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে ধার করা টাকা ফেরৎ দিতে পারে তবে সেই ব্যাংককে আর একীভূত করা হবে না। সেটিকে তার স্বকীয়ভাবে চলতে দেওয়া হবে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধারের টাকা ফেলৎ দিতে ব্যর্থ হলে একীভূতকরণ করা হবে। এ বিষয়গুলো তদারকি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি টিম গঠণ করবে। টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও লোক নেওয়া হবে।

গত বুধবার আলোচ্য পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিন্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিস্ট ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এবার একীভূত করার ব্যাংকগুলোর যে তালিকা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় দেওয়া ঋণ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টিতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারবে এবং আর্থিক দুর্বল সূচকগুলোতে উন্নতি করতে পারবে সেগুলোকে একীভূত করার আওতায় থেকে বের করে দেওয়া হবে। ওইসব ব্যাংক স্বকীয় মর্যার্দা নিয়ে চলতে পারবে।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন দুর্বল ৬টি ব্যাংককে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একীভূত করা হবে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের নামও ছিল। পরবর্তীতে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তারা বলেছে, ন্যাশনাল ব্যাংক ইসলামী ধারার ব্যাংক নয়, সে কারণে ওইসব ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে না। এছাড়া ব্যাংকটি নতুন ব্যবস্থাপনায় আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এসব কারণে তারা একীভ’ত হতে চাচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একীভূতকরনের তালিকা থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের নাম বাদ দেয়।

বিদেশি মালিকানায় পরিচালিত আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকও একীভূতকরণের আলোচনায় ছিল। তবে ব্যাংকটিতে বিদেশি মালিকানা থাকায় এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষ ব্যাংকটিতে নতুন করে তহবিল জোগান দিতে চায়। কিন্তু সাবেক মালিক ওরিয়ন গ্রুপের পক্ষে একটি মামলা করায় বিদেশি মালিক পক্ষ ব্যাংকে মূলধন জোগান দিতে পারছে না। এর আগে ওরিয়ন গ্রুপ ব্যাংকটি ব্যাপক লুটপাট করেছে। ফলে তাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়, একীভূতকরণের প্রথম ধাপ শেষে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর এমডিদের চুক্তি বাতিল হবে। আর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বাছাই করা সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পর্ষদ গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দেয়। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি হলে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।