খুঁজুন
রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ২১ বৈশাখ, ১৪৩২

খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ
খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার (৫ মে) লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন। ওইদিন সকাল ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে প্রথমে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন।এরপর একই ফ্লাইটে তিনি বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেইট দিয়ে বেরিয়ে সরাসরি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যাবেন।

শনিবার (৩ মে) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী দলের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীয়ের সকাল ৯টায় বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আগমন ঘিরে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সিলেটের যাত্রীদের নামিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ওসমানী বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। এই সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক খালেদা জিয়া সিলেট বিমানবন্দরে অবস্থান করবেন। সেখানে অবস্থানকালে সিলেটে অবস্থানরত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

খালেদা জিয়া সিলেটে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সিলেটের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, খালেদা জিয়া সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরলেও এখানে কোনো সভা কিংবা সমাবেশে অংশ নেবেন না। আমার কাছে যেটুকু তথ্য রয়েছে তাতে বলতে পারি তিনি বিমান থেকে নামবেন না। স্থানীয় শীর্ষ নেতারা দু-একজন তার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করে আসবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন তার দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমান। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, এপিএস মাসুদুর রহমান ও দুই গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম ও রূপা হক।

২০১৮ সালে খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। করোনা মহামারির সময় বিগত সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর লন্ডন ক্লিনিক থেকে গত ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধ যুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন খালেদা জিয়া।

বর্তমানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।

শাস্তির মুখে বেসরকারি ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ৬:০৫ অপরাহ্ণ
শাস্তির মুখে বেসরকারি ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়

স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকায় ১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা পেয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এ এস এম কাসেমের সই করা চিঠিতে বলা হয়ে, ১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমতির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করেনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকার মোহাম্মদপুরের দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাতমসজিদ রোডের ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, রাজারবাগের দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, গুলশানের প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বনানীর প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, শ্যামলীর আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

পান্থপথের সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, সিলেটের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ফেনীর ফেনী ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা আছে। আমরা আইন মেনে সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারায় চার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ, দুটির অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাকি ১২ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বাড়ানো হয়েছিল।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী- স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমে সাত বছর, পরে আরও পাঁচ বছর সময় পায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে ইউজিসি।

এবার পাকিস্তানের সব বন্দরে ভারতীয় জাহাজ নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১:৩৮ অপরাহ্ণ
এবার পাকিস্তানের সব বন্দরে ভারতীয় জাহাজ নিষিদ্ধ

সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনায় পাকিস্তান তাদের সব বন্দরে ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। শনিবার (৩ মে) নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বন্দর ও শিপিং শাখা এ আদেশ জারি করে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (৩ মে) বিকেলে পাকিস্তানের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বন্দর ও শিপিং শাখা থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ‘‘প্রতিবেশী দেশের (ভারতের) সঙ্গে সাম্প্রতিক সমুদ্র পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সমুদ্র সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অবিলম্বে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো কার্যকর করা হলো—

‘ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে পাকিস্তানের কোনো বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলো কোনো ভারতীয় বন্দরে যাবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টি আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে।’’

এর আগে পাকিস্তানি জাহাজ বন্দরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। দেশটির নৌপরিবহন মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়তে দেওয়া হবে না এবং ভারতীয় পতাকাবাহী জাহাজগুলোও পাকিস্তানের কোনো বন্দরে যাবে না। ভারতীয় সম্পদ, পণ্য ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জনস্বার্থে এবং ভারতীয় শিপিংয়ের স্বার্থে এই আদেশ জারি করা হলো।’

ভারতের এই পদক্ষেপের পরপরই পাকিস্তানের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ভারতের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এতে ভারত অভিযোগের আঙুল তোলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যদিও পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারপরও ভারত পাকিস্তানি উড়োজাহাজের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া, সিন্ধু নদীর পানিচুক্তি স্থগিত করাসহ আরও অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়। পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে অনুরূপ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

যুদ্ধের শঙ্কায় বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
যুদ্ধের শঙ্কায় বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরিরা

পহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে বেসামরিক নানা বিধিনিষেধ ঘোষণার পরও কাশ্মীরের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, পরিস্থিতি হয়তো এর চেয়ে খারাপ হবে না। কিন্তু গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গুলি বিনিময়ের কারণে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষেরা।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি পোস্ট এবং পাকিস্তান শাসিত লিপা সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গত সপ্তাহে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। তবে এখনে পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এহসান-উল-হক শামি পাকিস্তান শাসিত লিপা উপত্যকার বাসিন্দা। ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং সেখানকার বেশিরভাগ মানুষই আইন মেনে চলেন।

নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাড়ি শামির। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ে ২০১৯ সালে তার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি জানিয়েছেন, একইভাবে ২০০২ ও ১৯৯৮ সালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার বাড়ি।

পেশায় আইনজীবী এহসান-উল-হক শামি বলেন, পহেলগামের ঘটনার পর গত শুক্রবার ও শনিবার পাকিস্তান ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যবর্তী রাতে সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় চলে। এরপর শনিবার রাতে ফের গুলি বিনিময় শুরু হয়। ওইদিন রাত ১০টায় গুলি বিনিময় শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত চললেও সাধারণ মানুষকে কিন্তু নিশানা হতে হয়নি।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা উত্তর কাশ্মীরের কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত। শুক্রবার কুপওয়ারার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিলেন, কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে আগাম অনুমতি নিতে হবে।

আতঙ্কে সাধারণ মানুষ:
কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত সীমান্তে গুলি বিনিময়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কুপওয়ারার কারনাহ সেক্টরের বাসিন্দারা ব্যক্তিগত ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার তৈরির কাজ শুরু করেছেন বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করছেন।

পহেলগামের ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির নিচে বাঙ্কার তৈরির কাজ যারা শুরু করেছেন, তাদেরই একজন পীরজাদা সৈয়দ।

তিনি বলেন, সীমান্তে গোলাগুলির পরিণতি আমরা এরই মধ্যে দেখেছি। জীবনহানি হয়েছে, অতীতে কৃষিকাজের অভাবের কারণে মানুষও অনাহারে মারা গেছে। আল্লাহ করুন যেন কিছু না হয়, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যে কোনো সময় কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। সে কারণেই আমরা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বানাচ্ছি যাতে কিছু হলে আমরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারি।

কুপওয়ারার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সামরিক তৎপরতা’ এবং রাতের আকাশে জেট বোমারু বিমানের আওয়াজ তাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

কুপওয়ারার নিয়ন্ত্রণ রেখার জিরো লাইনে অবস্থিত টোড গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ২০১৭ সালে যখন গোলাবর্ষণ হচ্ছিল, তখন আমাদের এক আত্মীয়ের বাড়িতে একটা শেল এসে পড়েছিল এবং তার মৃত্যু হয়।

‘কিন্তু ২০২১ সালে যখন ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোরভাবে অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে রাজি হয়। তারপর গত চার বছর জীবন শান্তিপূর্ণ ছিল। এখানে কৃষিকাজ হয়েছে, বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছে, ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এখন আশঙ্কা হচ্ছে, আগের মতো পরিস্থিতি হয়ত ফিরে আসতে পারে।’

পীরজাদা সৈয়দ বলেন, দু’দিন আগে নামবরদার এসে এখানকার বাসিন্দাদের বাঙ্কার পরিষ্কার করতে এবং তার চারপাশের আগাছা বা কাঠের জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এই ঘোষণার কারণে সবাই হতবাক হয়েছে। কিন্তু বাঁচতে হবে তাই সকলে বাঙ্কার পরিষ্কার করতে বা সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করে দিয়েছে।
‘সারা রাত ঘুমাতে পারিনি’

এহসান-উল-হক শামি জানান, তার এলাকায় প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। বাড়ির কাজে এই বাঙ্কার ব্যবহার করা হয়। বাঙ্কারগুলো এমনিতে মজবুত কিন্তু সব ধরনের বিপদ এড়াতে সক্ষম নয়। তিনি বলেন, বাঙ্কারগুলো বেশ মজবুত। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটি বুলেট বা গোলা থেকে রক্ষা করতে পারলেও ভারী অস্ত্রের শেল সরাসরি বাঙ্কারে পড়লে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

‘আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটি ২০০২ এবং ১৯৯৯ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আছি। এই কারণে আশঙ্কা থেকে যায় যে, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারি। অবশ্য এমনিতেই গুলি চললে কারও পক্ষে ঘুমানো সম্ভব নয়।’

শামির মতো ওই অঞ্চলের অন্য বাসিন্দারাও বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। তার কথায়, প্রায় পুরো এলাকার মানুষই গোটা রাত জেগে ছিল। তারা একে অপরের মঙ্গল কামনা করেছে। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে যে এখন পর্যন্ত এই গোলাগুলিতে বেসামরিক জনগণের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

‘বাঙ্কারগুলো অবস্থান করার মতো যোগ্য নয়’

উরি সেক্টরেও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন মানুষ। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় ১৬টি বাঙ্কার নির্মাণ করা হলেও স্থানীয়দের অভিযোগ, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির ব্যবস্থা নেই।

ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, কেউ কেউ নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন, কিন্তু দরিদ্র মানুষরা যাবে কোথায়। এখন আমরা এই একই বাঙ্কারগুলোই পরিষ্কার করবো।

‘আল্লাহ দয়া করুন, যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্ত কিছু ঠিক থাকে আর গুলিবিনিময় বন্ধ হওয়ার পর জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়,’ বলেন কুদ্দুস।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।