অনৈতিকভাবে হাতিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা
টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ যেন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার টাকা কামানোর মেশিন !
গাজীপুরে টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকা অবস্থিত টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজকে চরম অনিয়ম, দূর্নীতি ও ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের প্রতীক বানিয়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বিতর্কিত অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক অনুসন্ধান ও নথি পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে উঠে এসেছে আলাউদ্দিন মিয়ার ভয়াবহ দূর্নীতি ও অপতৎপরতার চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- ২০০৯ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের পৃষ্ঠপোষকতায় বিধিবহির্ভূতভাবে স্কুল কমিটির অভিভাবক সদস্য থেকে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নেন আলাউদ্দিন মিয়া৷
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটিতে দেদারসে চালিয়ে গেছেন একের পর এক জালিয়াতি, দূর্নীতি, ও অনিয়মের। অদ্যবধি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে বিদ্যালয়টিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিলো সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ। কিন্ত তাদের অনেককেই প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করেন আলাউদ্দিন। বেতন স্কেলও দেয়া হয় প্রভাষক সমমানের। কিন্ত ক্লাস নেয়ানো হয় বিদ্যালয়টির স্কুল শাখার।
ওদিকে ২০১৮ সালের পরে বিদ্যালয়টিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করেননি অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন। তাদের দেয়া হয়নি কোন নিয়োগপত্র। জানা গেছে এসব নিয়োগে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। এই অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার ভয়ে রেজুলেশন বইও রেখেছেন গায়েব করে৷
সম্প্রতি গাজীপুর জেলা প্রশাসন নোটিশ জারী করে টঙ্গী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের, নিয়োগবিজ্ঞপ্তি, রেজুলেশন ও নিয়োগপত্র তলব করলেও তা দেখাতে পারেননি আলাউদ্দিন। ফলে গত ২ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের অন্যতম বড় জালিয়াতি হলো- টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ থেকে এমপিওভুক্ত যেসব শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বা মারা গেছেন তাদের নাম এমপিও শীট থেকে কেটে না দিয়ে সরকারের সাথে জালিয়াতি করে নিজের মত করে নিয়োগ দিচ্ছেন।
এমন অন্তত ২৫ জন শিক্ষকের নাম এখনও এমপিও শীটে তুলে রেখেছেন আলাউদ্দিন যার মধ্যে মারা গেছেন এমন শিক্ষকও আছেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী এমপিও ভুক্ত কোন শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিলে তার বদলে সরকারিভাবে সে পদে নতুন শিক্ষক আসবে। কিন্ত জালিয়াতি করে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন এমপিও শীট থেকে বিদায়ী শিক্ষকদের নাম না কেটে সেখানে অর্থ বাণিজ্যের বিনিময়ে নিজের মতো করে নিয়োগ দেন৷
এছাড়া আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- স্কুল মাঠের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে ৪৪ টি দোকানের প্রতিটি দোকান মূলত বিক্রি করেছেন ৩০-৩৫ লক্ষ টাকায়। কিন্ত দলিল করেছেন ১০/১২ লক্ষ টাকার। এভাবে তিনি ভয়াবহ জালিয়াতি করেছেন স্কুল ও সরকার উভয়ের সাথেই৷ এ খাতে তিনি হাতিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা৷
ওদিকে সরকারি খরচে নির্মিত স্কুলের মোজাইক করা কয়েকটি ভবন অপ্রয়োজনীয়ভাবে ভেঙ্গে নিজ স্বার্থে টাইলস বসিয়ে নিজের মন মতো বিল বানিয়ে অর্থ হাতিয়েছেন বলেও অভিযোগ আসে। শুধু তাই নয়, নিজের জন্য বানিয়েছেন রাজদরবার সমতূল্য সুবিশাল অফিস কক্ষ। সেই অফিস কক্ষের সাথে রয়েছে একটি গোপন ঘর যা আয়নাঘর হিসেবে খ্যাত। সেই আয়না ঘরেই নিজের যাবতীয় দূর্নীতির বৈঠকসহ বিভিন্ন অপকর্মের নীলনকশা করেন তিনি৷
মহামারী করোনাকালে স্কুল কলেজ যখন বন্ধ ছিলো তখন শিক্ষকদের বেতন না দিয়ে স্কুলের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে সকল ক্লাসকক্ষে রং করিয়েছেন নিজের মত বিল বানিয়ে, যদিও তখন ক্লাসই হচ্ছিলো না।
ওদিকে উন্নয়নের নামে এসব কাজে কোন রকম টেন্ডার না দিয়ে নিজেই গায়ের জোরে বিধিবহির্ভূতভাবে ঠুনকো কাজ দেখিয়ে বিদ্যালয় ফান্ডের মোটা অংকের টাকা সরিয়েছেন। এসব কাজে প্রায় ৮ কোটি টাকা গায়েব করার অভিযোগ আছে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের ভয়াবহ দূর্নীতি ও অপতৎপরতা থেকে রেহাই পায়নি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। প্রতি বছর দশম শ্রেনীর প্রায় ১০০ পরীক্ষার্থীকে পরিকল্পিতভাবে ৫ থেকে ৮ বিষয়ে ফেল করিয়ে প্রত্যেককে একপ্রকার জিম্মি করে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে কোচিং ফি আদায় করেন জালিয়াত অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন।
এমনকি ২০ হাজার টাকা না দেয়ায় ফেল করানো হয়েছে এমন অসংখ্য শিক্ষার্থীর আবেদনের নথিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানা গেছে, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের সহযোগিতায় ও তাকে মাসোয়ারা দিয়ে আবু জাফর আহমেদ ও আমজাদ হোসেন নামের ২জন শিক্ষক সনদ জালিয়াতি করেও স্কুলটিতে বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন।
আর এভাবেই বছরের পর বছর ধরে গোটা টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজকে নিজের জালিয়াতি, দূর্নীতি, ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছেন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া। অনৈতিকভাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে এভাবেই হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
তাই এ ব্যাপারে অতিদ্রুত তদন্তপূর্বক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজকে আলাউদ্দিনের রাহু মুক্ত করার দাবি সচেতন মহলের৷
আপনার মতামত লিখুন