খুঁজুন
শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩২

সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুম হয়ে ভারতের কারাগারে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন বালি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ণ
সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুম হয়ে ভারতের কারাগারে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন বালি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালি। এরপর তাকে ভারতের কারাগারে কাটাতে হয় পাঁচ বছর। কীভাবে তাকে গুম করা হয় ও কীভাবে ভারতের কারাগারে নেয়া হয় তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সুখরঞ্জন।

ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে। অপহৃত হওয়ার পর তার কপালে কী জুটেছিল সে-বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাথে। সেখানেই বিশদ বর্ণনা তুলে ধরেন সুখরঞ্জন বালি। বাসসের সাথে তার সেই আলাপটি তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ ট্রিপল নাইন পাঠকদের জন্য।

স্বাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমি ঢাকায় কোর্টে গিয়েছিলাম। আমার সাথে দুজন ব্যারিস্টার ও দুইজন উকিল ছিলেন। আমাদের গাড়ি দেখে কোর্টের গেটে আটকে ফেলা হয়, তখন আমার সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের সাথে গেটের লোকদের তর্ক-বিতর্ক চলছিল। আমি গাড়িতে দু’জন ব্যারিস্টারের মাঝে বসা ছিলাম, এ সময় কিছু সাদা পোশাকের লোক আমাকে নামিয়ে টানাটানি করতে লাগলো।’

‘তারা বলছিল, যার জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে সেই লোক উনি। একেই আমাদের দরকার। সেই লোকরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনেহিঁচড়ে পাঁচ-ছয় হাত দূরে অপর একটি গাড়িতে তুলে আমার চোখ বেঁধে ফেলে এবং একটু পরে গাড়িটি ছেড়ে দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়িটি চালানোর পরে সাদা পোশাকের লোকেরা আমাকে হাঁটাতে থাকে। এ সময় আমি নিচের দিকে নামার মতো অনুভব করি। কিছুদূর হাঁটিয়ে একটা দরজা খুলে অন্ধকার জায়গায় আমাকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোনো আলো সেখানে ছিল না, অথচ তখন সকাল দশটা-এগারোটা বাজে।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমাকে একটি খালি রুমে আটকে দেয়া হয়। বাইরে কোনো শব্দ ছিল না, ঘরে কোনো জানালা বা কোনো ফাঁকা ছিল না যা দিয়ে কোনোরকম আলো ভেতরে আসতে পারে। তখন আমাকে মাঝে মাঝে অল্প করে খাবার দেয়া হতো। সেখানে কিছু লোক ছিল যারা আমাকে খাবার দিতো বা পাহারায় আসতো তারা নীল রংয়ের পোশাক পরা থাকতো।’

ভয়াবহ নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এর দুদিন পর আমাকে সেই রুম থেকে বের করে অন্য একটি রুমে নেয়া হয়। সেখানে আমাকে নিয়ে তারা জোর করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি নিতে চায়। সে রুমে অনেকগুলো ক্যামেরা লাগানো ছিল আমি দেখতে পাই। আমার ভাইয়ের হত্যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জড়িত কি-না জানতে চাইলে আমি যখন অস্বীকার করি এবং বলি যে যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের আমি চিনি। তাদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে পারবো, কিন্তু তারা বারবার আমাকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলে। একপর্যায়ে তারা আমাকে মারধরসহ কারেন্টের শক দেয়, নির্যাতন করে।’

সুখরঞ্জন বলেন, ‘তারা আমাকে একপর্যায়ে টাকা দিয়ে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে এরপরও রাজি না হলে তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। সেখানে টানা কয়েকদিন ছিলাম। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতো। তখন তিন-চারজন লোক জিজ্ঞাসাবাদ করতো।’

অত্যাচারে তিনি অসুস্থ হয়ে যান জানিয়ে বলেন, ‘তাদের অত্যাচারে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তারা একদিন সকাল সাতটা কি আটটার দিকে আমাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলে। আয়নাঘর থেকে যখন গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিল, তখন আমি ভয়ে ভয়ে জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে তারা বলেছিল, আমরা তোকে তোর দেশে নিয়ে যাবো। বল কোথায় নামিয়ে দিলে তুই তোর বাড়ি চিনে যেতে পারবি। তখন বলি, বাগেরহাটে নামিয়ে দিলে আমি আমার বাড়িতে যেতে পারবো। সারাদিন ধরে গাড়ি চালানোর পর মাঝে একবার ফেরিতে ওঠানো ও নামানো হয় সেটা আমি অনুভব করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে; দীর্ঘক্ষণ চালানোর পর দুইজন লোক গাড়িতে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পর দশ-বারো মিনিটের মতো হবে গাড়িটি চলতে চলতে থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে আমাকে নামানো হয় ও চোখ খুলে আমাকে সামনে এগোতে বলা হয়।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘জায়গাটা বাগেরহাট কি-না সেটা বুঝতে চেষ্টা করি। আমি বুঝতে পারি যে, ওটা বাগেরহাট নয় এবং স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সামনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ), যেটা বর্ডার এলাকা। সেখানে যারা আমায় নিয়েছে কান্না করতে করতে আমি বিএসএফ-এর হাতে তুলে না দিতে তাদের অনুরোধ করি। আমি বলি এদের হাতে তুলে দিয়েন না। প্রয়োজনে আমাকে মেরে ফেলেন। এ কথা বলতে বলতে আমি মাটিতে পড়ে যাই।’

সুখরঞ্জন বলেন, ‘আমাকে নেয়া গাড়ির লোকেরা জোর করে বিএসএফ-এর কাছে দিয়ে আসে আমায়। এ সময় আমি দেখতে পাই গাড়িতে ৬-৭ জন সবুজ পোশাকের পুলিশের সাথে দু’জন বিজিবি সদস্য আছেন। তখন বুঝতে পারি গাড়ি থামিয়ে যাদের নেয়া হয় তারাই বিজিবি।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নিরপরাধ নাগরিককে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরেকটি দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেয় কেমন করে?’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমি যেতে না চাইলে জোর করে তারা আমাকে ধরে বিএসএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। বিএসএফ কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে প্রচণ্ড মারপিট শুরু করে। বিএসএফ হিন্দিতে কথা বলছিল এবং আমি আমাকে না মারার জন্য বাংলায় বোঝাতে চেষ্টা করি। আমার কোনো কথা তারা বুঝতে পেরেছিল কি-না আমি আজও বুঝিনি। একপর্যায়ে বিএসএফ মোটা দড়ি দিয়ে পেছন দিক দিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে।

হাত বাধার সেই দাগ এখনও স্পষ্ট আছে বলে বাসসের এই প্রতিবেদককে দেখান সুখরঞ্জন বালি।

সুখরঞ্জন বালি তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনায় বলেন, মোটা লাঠি দিয়ে বিএসএফ তাকে মারতে থাকে। এতে তিনি ডান হাতের কনুইতে প্রচণ্ড আঘাত পান। এখনো ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বিএসএফ-এর মারের পরে তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা বেহুঁশ ছিলেন।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমি বিএসএফকে বলতে থাকি যে আমি ইচ্ছা করে এখানে আসিনি কিন্তু আমার কথা বুঝতে না পারায় তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।
আমাকে মারধরের আর কোনো কারণ বুঝিনি। বিএসএফ-এর ক্যাম্পটির বিষয়ে জানতে পারি এটি বৈকারী বাজার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানা এলাকা। এরপর বশিরহাট জেলে আমাকে বাইশ দিন রাখা হয়। সেখানে একদিন আমাকে কোর্টেও নেয়া হয়। এরপর আসা হয় দমদম জেলে।’

সুখরঞ্জন বলেন, দমদম জেলে থাকাকালীন সেখানে এক বন্দিকে (সম্পর্কে আমার ভাগনে হয়) আমি দেখি। সে আমাকে চিনতে পারেনি। আমি সুযোগ বুঝে তাকে আমার পরিচয় দিলে সে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে ‘মামা তুমি বেঁচে আছো? আমরাতো জানি তুমি মারা গেছো।’ সে ভাগনে কারামুক্তির পর আমার বাড়িতে ও নিকটাত্মীয়দের আমরা বেঁচে থাকা ও ভারতের দমদম জেলে বন্দি থাকার কথা জানায়।

তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির লোকেরা ভারতে প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে মানবাধিকার সংস্থা সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ৫ বছর জেল খেটে আমি মুক্ত হয়ে দেশে ফেরত আসতে পারি।’ তিনি জানান, দমদমে থাকাকালীন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার ইন্টারভিউ নিয়েছিল।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে সেই দৃশ্য আমি আমার বাড়ির পাশে টয়লেটের ভেতর লুকিয়ে থেকে নিজ চোখে দেখেছি। সেখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমি দেখিনি। তখন এ নামে কাউকে আমি চিনতামও না। উনি আমাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত দুই দু’বারের এমপি ছিলেন। তখন উনার সম্পর্কে জানি ও চিনতে পারি। তিনি যখন এমপি ছিলেন তখন আমাদের মনে হতো যেন আমরা মায়ের কোলে আছি। তিনি নিরাপরাধ নির্দোষ তার বিরুদ্ধে শত নির্যাতন সহ্য করেও আমি সাক্ষ্য দেইনি। আমাকে ক্ষুদিরামের মতো ফাঁসি দিলেও আমি প্রস্তুত ছিলাম।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ভারত থেকে দেশে ফিরেও আমি নিজ এলাকায় পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার কারণে বাগেরহাটে আত্মীয় ও পরিচিতিদের সহায়তায় তাদের আশ্রয়ে ছিলাম। বলেন, ‘পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি (সাবেক জিয়ানগর) উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামে আমার বাড়ি।’

নিজের পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমার ছেলেও কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো। তাতে যে আয় রোজগার ছিল তাতে আমি পরিবার নিয়ে ভালোই চলতাম।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দেয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে অপহরণ করে গুম করে নির্যাতন নিপীড়ন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিজিবি সহায়তায় বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে টানা ৫ বছর কারাবন্দি করে অবর্ণনীয় সাজা ভোগে বাধ্য করা হয়। অনেক ভয় আতঙ্কের পরও সাঈদীর মৃত্যুর পর তার জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলাম। তারপর আবারও আমি নিরাপত্তার কারণে আড়ালে চলে যাই।

তিনি বলেন, তার ওপর ঘটে যাওয়া এতো ঘটনার পর তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেননি। নিজ পেশায়ও ফিরে যেতে পারেননি। ফলে অর্থ কষ্টে ও অভাবে দিন কাটছে তার ও পরিবারের।

সুখরঞ্জন বালি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অপহরণ, গুম এবং ৫ বছর কারাবন্দি থাকাসহ তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল অন্যায়ের বিচার চান তিনি। ক্ষতিপূরণ চান রাষ্ট্রের কাছে।

উল্লেখ্য, সুখরঞ্জন বালি পশ্চিমবঙ্গের এক কারাগারে আছেন, এ খবর প্রথম প্রকাশ করে ঢাকার একটি ইংরেজি পত্রিকা। সুখরঞ্জন বালি বাংলাদেশে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। তিনি ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আইনজীবীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে তাকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

ইংরেজি দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের হয়ে একজন ভারতীয় নাগরিক কারাগারে সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য নেন, যেখানে বালি বলেন যে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অপহরণ করে এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর কাছে তুলে দেয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটের স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে যে এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দাখিল করা হয়, তার কোথাও এমন কথা উল্লেখ নেই যে তাকে কেউ অপহরণ করেছিলেন বা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন বিএসএফ-এর ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের এ কোম্পানির অধিনায়ক বি পি সিং।

সুখরঞ্জন বালি ভারতের কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়ে তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য, কারামুক্ত হওয়ার পর সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য এবং গুম কমিশনের ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের তথ্য একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে তাকে আমৃত্য কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজা ভোগকরাকালীন ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট কারা হেফাজতে হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই বারের নির্বাচিত এমপি ছিলেন।

‘নির্বাচনের দাবি জানানোও যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ৬:২০ অপরাহ্ণ
‘নির্বাচনের দাবি জানানোও যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে’

অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চেয়ে আসছে। কিন্তু, বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে যে, নির্বাচনের দাবি জানানোও যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিরাজনীতিকরণ দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক গভীর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। নির্বাচন বিষয়ে কেন সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে? এর ফলে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের সামনে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

এ সময় পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? যদি বর্তমান সরকার ব্যবস্থা না নেয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার অবশ্যই স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

৫ আগস্টের পর রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নতুন ২৫টি দলকে স্বাগত জানিয়ে এরপর তিনি বলেন, আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে দেশের স্বার্থে সব দল এক হয়ে কাজ করবে, এমন প্রত্যাশা আমরা রাখি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা করলে তা দেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে ঠেলে দেবে।

তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। ব্লেইম গেম দিয়ে এ সরকারের দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। নতুন যে সরকার গঠিত হবে, তারা পলাতক স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এ যেনো সাহসিকতার পুনর্জন্ম

দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, দুই ভারতীকে আটক করেছে এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ৬:১৪ অপরাহ্ণ
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, দুই ভারতীকে আটক করেছে এলাকাবাসী

দিনাজপুরের বিরলে সীমান্ত থেকে দুই বাংলাদেশি কৃষককে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এই ঘটনার জেরে দুই ভারতীয় নাগরিককে ধরে এনে আটকে রেখেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ নিয়ে দু’সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মজৈন সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশের নাগরিক বিনিময়ে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছেন, বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মজৈন সীমান্তে ধান কাটছিলেন মাসুদ ও এনামুল নামের দুই কৃষক। ধর্মজৈন সীমান্তের ৩২০ মেইন পিলারের সাব পিলার ১০ এর কাছ থেকে তাদের ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

ঘটনার পর দুই বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী দুই ভারতীয় দুই নাগরিককে ধরে আনে। আটক দুই ভারতীয় নাগরিক হলেন- অবিনাশ টুডু ও ফিলিপ সরেন। তাদেরকে কারুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়।পরে বিজিবি সদস্যরা সেখানে গেলে তাদেরকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন ধর্মপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর ইসলাম ও বিরল থানার এসআই কাওসার।

আটক বাংলাদেশিরা হলেন- ওই এলাকার ইসরাইল ইসলামের ছেলে এনামুল ইসলাম (৫০) ও এনামুল ইসলামের ছেলে মাসুম (১৫)।

এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ হতে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দুই দেশের নাগরিক বিনিময়ে পতাকা বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত নিলো পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ৬:১০ অপরাহ্ণ
নতুন সিদ্ধান্ত নিলো পাকিস্তান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছেই। পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলি হচ্ছে। যুদ্ধের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা দিনদিন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে। যেকোনো সময় সামরিক সংঘাতে জড়াতে পারে দুই দেশ। এমন অবস্থায় নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার (১ মে) এক প্রতিবেদনে জানায়, হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সব মাদরাসা ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গরম ও তাপপ্রবাহের জন্য মাদরাসা ছুটির কথা বলা হলেও পাকিস্তান কাশ্মীরের ধর্মবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক হাফিজ নাজির আহমেদ রয়টার্সকে জানান, হামলার আশঙ্কা থেকেই মূলত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে ভারতের সামরিক বাহিনী। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মাদরাসাগুলোকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে ভারত। আমরা শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।

জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দুই অঞ্চল আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তানে মোট ৪৪৫টি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ হাজারেরও বেশি।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সব ধরনের বাতিল হয়েছে ভিসা। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতও করেছে ভারত।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে একই ধরনের পদক্ষেপ দিয়েছে পাকিস্তানও। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জানান, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ‘রক্ত ফুটছে’। হামলায় জড়িত প্রত্যেককে কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু তাই নয়, সীমান্তে যেকোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় নিজের তিন বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছেন মোদি।

বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকরা বলছেন, পাকিস্তান যে কাশ্মীরা হামলা চালিয়েছে, তার জোরালো প্রমাণ এখনও দেখাতে পারেনি ভারত। এ অবস্থায় দিল্লি কোনো পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব মঞ্চে তার ন্যায্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চমলান সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা যদি বাড়তে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে।