খুঁজুন
শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩২

সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুম হয়ে ভারতের কারাগারে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন বালি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ণ
সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুম হয়ে ভারতের কারাগারে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন বালি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন সুখরঞ্জন বালি। এরপর তাকে ভারতের কারাগারে কাটাতে হয় পাঁচ বছর। কীভাবে তাকে গুম করা হয় ও কীভাবে ভারতের কারাগারে নেয়া হয় তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সুখরঞ্জন।

ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে। অপহৃত হওয়ার পর তার কপালে কী জুটেছিল সে-বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাথে। সেখানেই বিশদ বর্ণনা তুলে ধরেন সুখরঞ্জন বালি। বাসসের সাথে তার সেই আলাপটি তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ ট্রিপল নাইন পাঠকদের জন্য।

স্বাক্ষাৎকারে সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘২০১২ সালের নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে আমি ঢাকায় কোর্টে গিয়েছিলাম। আমার সাথে দুজন ব্যারিস্টার ও দুইজন উকিল ছিলেন। আমাদের গাড়ি দেখে কোর্টের গেটে আটকে ফেলা হয়, তখন আমার সঙ্গে থাকা আইনজীবীদের সাথে গেটের লোকদের তর্ক-বিতর্ক চলছিল। আমি গাড়িতে দু’জন ব্যারিস্টারের মাঝে বসা ছিলাম, এ সময় কিছু সাদা পোশাকের লোক আমাকে নামিয়ে টানাটানি করতে লাগলো।’

‘তারা বলছিল, যার জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে সেই লোক উনি। একেই আমাদের দরকার। সেই লোকরা আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনেহিঁচড়ে পাঁচ-ছয় হাত দূরে অপর একটি গাড়িতে তুলে আমার চোখ বেঁধে ফেলে এবং একটু পরে গাড়িটি ছেড়ে দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়িটি চালানোর পরে সাদা পোশাকের লোকেরা আমাকে হাঁটাতে থাকে। এ সময় আমি নিচের দিকে নামার মতো অনুভব করি। কিছুদূর হাঁটিয়ে একটা দরজা খুলে অন্ধকার জায়গায় আমাকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কোনো আলো সেখানে ছিল না, অথচ তখন সকাল দশটা-এগারোটা বাজে।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমাকে একটি খালি রুমে আটকে দেয়া হয়। বাইরে কোনো শব্দ ছিল না, ঘরে কোনো জানালা বা কোনো ফাঁকা ছিল না যা দিয়ে কোনোরকম আলো ভেতরে আসতে পারে। তখন আমাকে মাঝে মাঝে অল্প করে খাবার দেয়া হতো। সেখানে কিছু লোক ছিল যারা আমাকে খাবার দিতো বা পাহারায় আসতো তারা নীল রংয়ের পোশাক পরা থাকতো।’

ভয়াবহ নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এর দুদিন পর আমাকে সেই রুম থেকে বের করে অন্য একটি রুমে নেয়া হয়। সেখানে আমাকে নিয়ে তারা জোর করে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি নিতে চায়। সে রুমে অনেকগুলো ক্যামেরা লাগানো ছিল আমি দেখতে পাই। আমার ভাইয়ের হত্যায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জড়িত কি-না জানতে চাইলে আমি যখন অস্বীকার করি এবং বলি যে যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের আমি চিনি। তাদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে পারবো, কিন্তু তারা বারবার আমাকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলে। একপর্যায়ে তারা আমাকে মারধরসহ কারেন্টের শক দেয়, নির্যাতন করে।’

সুখরঞ্জন বলেন, ‘তারা আমাকে একপর্যায়ে টাকা দিয়ে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে এরপরও রাজি না হলে তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। সেখানে টানা কয়েকদিন ছিলাম। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতো। তখন তিন-চারজন লোক জিজ্ঞাসাবাদ করতো।’

অত্যাচারে তিনি অসুস্থ হয়ে যান জানিয়ে বলেন, ‘তাদের অত্যাচারে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তারা একদিন সকাল সাতটা কি আটটার দিকে আমাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলে। আয়নাঘর থেকে যখন গাড়িতে ওঠানো হচ্ছিল, তখন আমি ভয়ে ভয়ে জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে তারা বলেছিল, আমরা তোকে তোর দেশে নিয়ে যাবো। বল কোথায় নামিয়ে দিলে তুই তোর বাড়ি চিনে যেতে পারবি। তখন বলি, বাগেরহাটে নামিয়ে দিলে আমি আমার বাড়িতে যেতে পারবো। সারাদিন ধরে গাড়ি চালানোর পর মাঝে একবার ফেরিতে ওঠানো ও নামানো হয় সেটা আমি অনুভব করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করে; দীর্ঘক্ষণ চালানোর পর দুইজন লোক গাড়িতে ওঠে। এর কিছুক্ষণ পর দশ-বারো মিনিটের মতো হবে গাড়িটি চলতে চলতে থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে আমাকে নামানো হয় ও চোখ খুলে আমাকে সামনে এগোতে বলা হয়।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘জায়গাটা বাগেরহাট কি-না সেটা বুঝতে চেষ্টা করি। আমি বুঝতে পারি যে, ওটা বাগেরহাট নয় এবং স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সামনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী (বিএসএফ), যেটা বর্ডার এলাকা। সেখানে যারা আমায় নিয়েছে কান্না করতে করতে আমি বিএসএফ-এর হাতে তুলে না দিতে তাদের অনুরোধ করি। আমি বলি এদের হাতে তুলে দিয়েন না। প্রয়োজনে আমাকে মেরে ফেলেন। এ কথা বলতে বলতে আমি মাটিতে পড়ে যাই।’

সুখরঞ্জন বলেন, ‘আমাকে নেয়া গাড়ির লোকেরা জোর করে বিএসএফ-এর কাছে দিয়ে আসে আমায়। এ সময় আমি দেখতে পাই গাড়িতে ৬-৭ জন সবুজ পোশাকের পুলিশের সাথে দু’জন বিজিবি সদস্য আছেন। তখন বুঝতে পারি গাড়ি থামিয়ে যাদের নেয়া হয় তারাই বিজিবি।’

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নিরপরাধ নাগরিককে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরেকটি দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেয় কেমন করে?’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমি যেতে না চাইলে জোর করে তারা আমাকে ধরে বিএসএফ সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। বিএসএফ কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমাকে প্রচণ্ড মারপিট শুরু করে। বিএসএফ হিন্দিতে কথা বলছিল এবং আমি আমাকে না মারার জন্য বাংলায় বোঝাতে চেষ্টা করি। আমার কোনো কথা তারা বুঝতে পেরেছিল কি-না আমি আজও বুঝিনি। একপর্যায়ে বিএসএফ মোটা দড়ি দিয়ে পেছন দিক দিয়ে আমার হাত বেঁধে ফেলে।

হাত বাধার সেই দাগ এখনও স্পষ্ট আছে বলে বাসসের এই প্রতিবেদককে দেখান সুখরঞ্জন বালি।

সুখরঞ্জন বালি তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনায় বলেন, মোটা লাঠি দিয়ে বিএসএফ তাকে মারতে থাকে। এতে তিনি ডান হাতের কনুইতে প্রচণ্ড আঘাত পান। এখনো ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। বিএসএফ-এর মারের পরে তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা বেহুঁশ ছিলেন।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ‘আমি বিএসএফকে বলতে থাকি যে আমি ইচ্ছা করে এখানে আসিনি কিন্তু আমার কথা বুঝতে না পারায় তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।
আমাকে মারধরের আর কোনো কারণ বুঝিনি। বিএসএফ-এর ক্যাম্পটির বিষয়ে জানতে পারি এটি বৈকারী বাজার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানা এলাকা। এরপর বশিরহাট জেলে আমাকে বাইশ দিন রাখা হয়। সেখানে একদিন আমাকে কোর্টেও নেয়া হয়। এরপর আসা হয় দমদম জেলে।’

সুখরঞ্জন বলেন, দমদম জেলে থাকাকালীন সেখানে এক বন্দিকে (সম্পর্কে আমার ভাগনে হয়) আমি দেখি। সে আমাকে চিনতে পারেনি। আমি সুযোগ বুঝে তাকে আমার পরিচয় দিলে সে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে ‘মামা তুমি বেঁচে আছো? আমরাতো জানি তুমি মারা গেছো।’ সে ভাগনে কারামুক্তির পর আমার বাড়িতে ও নিকটাত্মীয়দের আমরা বেঁচে থাকা ও ভারতের দমদম জেলে বন্দি থাকার কথা জানায়।

তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির লোকেরা ভারতে প্রশাসন ও মানবাধিকার সংস্থার সাথে যোগাযোগ করলে মানবাধিকার সংস্থা সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ৫ বছর জেল খেটে আমি মুক্ত হয়ে দেশে ফেরত আসতে পারি।’ তিনি জানান, দমদমে থাকাকালীন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তার ইন্টারভিউ নিয়েছিল।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে সেই দৃশ্য আমি আমার বাড়ির পাশে টয়লেটের ভেতর লুকিয়ে থেকে নিজ চোখে দেখেছি। সেখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমি দেখিনি। তখন এ নামে কাউকে আমি চিনতামও না। উনি আমাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত দুই দু’বারের এমপি ছিলেন। তখন উনার সম্পর্কে জানি ও চিনতে পারি। তিনি যখন এমপি ছিলেন তখন আমাদের মনে হতো যেন আমরা মায়ের কোলে আছি। তিনি নিরাপরাধ নির্দোষ তার বিরুদ্ধে শত নির্যাতন সহ্য করেও আমি সাক্ষ্য দেইনি। আমাকে ক্ষুদিরামের মতো ফাঁসি দিলেও আমি প্রস্তুত ছিলাম।

সুখরঞ্জন বালি বলেন, ভারত থেকে দেশে ফিরেও আমি নিজ এলাকায় পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে যেতে পারিনি। নিরাপত্তার কারণে বাগেরহাটে আত্মীয় ও পরিচিতিদের সহায়তায় তাদের আশ্রয়ে ছিলাম। বলেন, ‘পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি (সাবেক জিয়ানগর) উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামে আমার বাড়ি।’

নিজের পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমার ছেলেও কাঠমিস্ত্রির কাজ করতো। তাতে যে আয় রোজগার ছিল তাতে আমি পরিবার নিয়ে ভালোই চলতাম।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দেয়াকে কেন্দ্র করে আমাকে অপহরণ করে গুম করে নির্যাতন নিপীড়ন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিজিবি সহায়তায় বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে টানা ৫ বছর কারাবন্দি করে অবর্ণনীয় সাজা ভোগে বাধ্য করা হয়। অনেক ভয় আতঙ্কের পরও সাঈদীর মৃত্যুর পর তার জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলাম। তারপর আবারও আমি নিরাপত্তার কারণে আড়ালে চলে যাই।

তিনি বলেন, তার ওপর ঘটে যাওয়া এতো ঘটনার পর তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেননি। নিজ পেশায়ও ফিরে যেতে পারেননি। ফলে অর্থ কষ্টে ও অভাবে দিন কাটছে তার ও পরিবারের।

সুখরঞ্জন বালি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অপহরণ, গুম এবং ৫ বছর কারাবন্দি থাকাসহ তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল অন্যায়ের বিচার চান তিনি। ক্ষতিপূরণ চান রাষ্ট্রের কাছে।

উল্লেখ্য, সুখরঞ্জন বালি পশ্চিমবঙ্গের এক কারাগারে আছেন, এ খবর প্রথম প্রকাশ করে ঢাকার একটি ইংরেজি পত্রিকা। সুখরঞ্জন বালি বাংলাদেশে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। তিনি ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর আইনজীবীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে তাকে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন অপহরণ করে নিয়ে গেছে।

ইংরেজি দৈনিকটির প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের হয়ে একজন ভারতীয় নাগরিক কারাগারে সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য নেন, যেখানে বালি বলেন যে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অপহরণ করে এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর কাছে তুলে দেয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাটের স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে যে এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) দাখিল করা হয়, তার কোথাও এমন কথা উল্লেখ নেই যে তাকে কেউ অপহরণ করেছিলেন বা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানায় সুখরঞ্জন বালির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন বিএসএফ-এর ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের এ কোম্পানির অধিনায়ক বি পি সিং।

সুখরঞ্জন বালি ভারতের কারাগারে বন্দি থাকার বিষয়ে তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য, কারামুক্ত হওয়ার পর সুখরঞ্জন বালির বক্তব্য এবং গুম কমিশনের ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের তথ্য একই চিত্র ফুটে উঠেছে।

জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে তাকে আমৃত্য কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজা ভোগকরাকালীন ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট কারা হেফাজতে হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দুই বারের নির্বাচিত এমপি ছিলেন।

ফরিদপুরে এনসিপির কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ.লীগের সভাপতির মেয়ে দোলা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
ফরিদপুরে এনসিপির কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ.লীগের সভাপতির মেয়ে দোলা

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্বে ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহামুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।

তবে এ বিষয়ে যুক্তি তুলে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা জানান, আমার পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজের দিক থেকে একটা ব্যাখ্যা আমার মানুষজন এবং রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন আমি করে আসতেছি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে সকল আন্দোলনের আমি অতি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরোনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলা ও একজন প্রতক্ষ্যদর্শী আমি।

তিনি আরও জানান, সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায় ? তিনি আরও জানান, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে, বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করেছেন।

ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মেয়ে এনসিপি কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ প্রসঙ্গে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল রানা জানান, তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম মোহাম্মাদ নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুঁড়েছে। তার মায়ের কর্মকান্ড আমাদের অজনা নয়। আর সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা জানান, আসলে দায়িত্ব দেয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেয়া হলে ভাল হতো। সঠিক যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এনসিপি’র মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সদস্য সচিব আক্তার হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে। এছাড়া, ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দুইজন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের টিমকে বলা হয়েছে, উক্ত টিমকে উল্লেখিত অঞ্চলের কেন্দ্রীয় কমিটির নিম্মোক্ত সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটির প্রস্তাবনার নির্দেশনার প্রদান করা হল। ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগ্নি। তার বাবার নাম সৈয়দ গোলাম দস্তগির। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি মুভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বধিকারী।

পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে চীন, কড়া হুঁশিয়ারি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে চীন, কড়া হুঁশিয়ারি

কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কার্যত যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। টানা সাত দিনের মতো ঘটেছে গোলাগুলির ঘটনা। এক দেশ অপর দেশের বিরুদ্ধে নিয়েছে নানা পদেক্ষেপ। চলমান উত্তেজনাকর এই অবস্থায় মধ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে পুরোনো মিত্র চীন।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে নিযুক্ত চীনা কনসাল জেনারেল ঝাও শিরেন বলেছেন, সব পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকবে বেইজিং। অবশ্য তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। পাকিস্তান ও ভারতের উচিত সংলাপ ও কূটনৈতিক পথে শান্তির রাস্তা খোঁজা।

বৃহস্পতিবার (১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

লাহোরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কেন্দ্রীয় পাঞ্জাব শাখার নেতাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় পিপিপি কেন্দ্রীয় পাঞ্জাবের অর্থ সম্পাদক আহমাদ জাওয়াদ রানার বাসভবনে।

ঝাও বলেন, চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কৌশলগত সহযোগিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা অবকাঠামোতে দীর্ঘদিনের। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে ছিল, আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে—বিশেষ করে নিরাপত্তা, কৌশলগত সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে জাতীয় ও আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনায় ঝাও বলেন, চীন-পাকিস্তানের বন্ধুত্বের শিকড় গভীরে গাঁথা। প্রত্যেক চীনা নাগরিক পাকিস্তানকে ভালোবাসে এবং পাকিস্তানিরাও চীনকে একইরকম ভালোবাসা ও সম্মান দেখায়।

ঝাও বলেন, পাকিস্তান শুধু প্রতিবেশী বা মিত্র নয়, চীনের কাছে এক পরীক্ষিত বন্ধু। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও কৌশলগত সহযোগিতাই আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি।

বৈঠকে দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হন।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য আমিরাতের ভিসা খুলতে অনুরোধ উপদেষ্টার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য আমিরাতের ভিসা খুলতে অনুরোধ উপদেষ্টার

Oplus_131072

বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার নিজ দপ্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আল হামুদি এর সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ আহ্বান জানান৷

বৈঠকে তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি, ভিসা চালু, বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের আর্থসামাজিক বিকাশে ভূমিকা রাখছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশেও বর্তমানে বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ও সেদেশের ব্যবসায়ীরা এদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে লাভবান হতে পারে। এসময় তিনি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করার আহবান জানান।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষ শ্রমিক কোটায় এখনও বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া হচ্ছে। এজন্য এদেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত সেমি গভর্নমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আব্দুর রহিম খান উপস্থিত ছিলেন।