৫০ লাখ ডলারে মার্কিন গোল্ড কার্ড
তাহলে কি আওয়ামী লুটেরাদের আশ্রয়স্থল হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ?

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকেই পাগলা ঘোড়া বলেন। সম্প্রতি তার এক বক্তব্যে সেই পাগলা ঘোড়া ছুটে চলেছে আরও দ্রুত গতিতে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ লাখ ডলারে গোল্ড কার্ড বিক্রি হবে! আর এমনটা হলে- ছাত্র জনতার যুগান্তকারী আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লুটেরাদের জন্য নির্বিঘ্ন আশ্রয়স্থল হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
একদলীয় শাসনব্যবস্থায় বিনা ভোটে টানা ১৬ বছরেরও বেশি সময়ে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে দলটির মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অবৈধ উপায়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এই অবৈধ টাকা বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রে তারা যে আরাম-আয়েশেই বাকি জীবন কাটাবেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ৫০ লাখ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা) তিনি মার্কিন ‘গোল্ড কার্ড’ বিক্রি করবেন। এ কার্ডে মিলবে সেখানে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি। দেওয়া হবে গ্রিনকার্ডের সুবিধাদি। খুলে যাবে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ। যা বড় বড় রাঘব বোয়াল, লুটেরাদের জন্য এক সুবর্ন সুযোগ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণা এবং উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা হবে আওয়ামী লুটেরাদের জন্য পোয়াবারো। তারা তাদের অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ নিয়ে সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য এখন নির্বিঘ্ন আশ্রয়স্থল হবে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এটা রীতিমতো কালোটাকা সাদা করার ডিজিটাল অনুমতি। নিশ্চিত থাকুন, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম হবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা গোল্ড কার্ড বেচতে যাচ্ছি। যার দাম হতে পারে ৫০ লাখ ডলার। এটা আপনাকে গ্রিনকার্ডের সুযোগ-সুবিধা দেবে, সঙ্গে করে দেবে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ। ধনী লোকজন এ কার্ড কিনে আমাদের দেশে আসতে পারবে।’ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ কর্মসূচির বিস্তারিত প্রকাশিত হবে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ইবি-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসাকে ‘গোল্ড কার্ডে’ পরিণত করার ভাবনার কথা জানান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ইবি-৫ কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বিদেশিদের গ্রিনকার্ড মিলত, যার মাধ্যমে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়া যেত।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘ইবি-৫ কর্মসূচি, এটি পুরোপুরি বাকোয়াজ, মিথ্যা আর জালিয়াতিতে ভরা। এর মাধ্যমে খুব কম অর্থে গ্রিনকার্ড মেলে। এজন্যই প্রেসিডেন্ট এই বাজে ইবি-৫ কর্মসূচির জায়গায় অন্য কিছুর কথা বলেছেন। আমরা ইবি-৫ কর্মসূচি বাতিল করে এর বদলে গোল্ড কার্ড আনতে যাচ্ছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের গোল্ড কার্ড বিক্রির এ উদ্যোগে বাংলাদেশের কারা লাভবান হবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়া এবং সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ আছে। আমেরিকায়ও এ ধরনের সুযোগ ছিল। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বেশি টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
তিনি এখনো বিস্তারিত নীতিমালা ঘোষণা করেননি। নীতিমালা দেখার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা সহজ হবে। তবে সাধারণ ধারণা থেকে আমরা দেখেছি, অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ যাদের রয়েছে, মূলত তারাই এ ধরনের সুযোগ লুফে নেয়। আমাদের দেশেও যারা ক্ষমতার সঙ্গে থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। নিঃসন্দেহে তারা এ সুযোগ কাজে লাগাবেন।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির আঞ্চলিক সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন ৫০ লাখ ডলারে মার্কিন ‘গোল্ড কার্ড’ বিক্রি করবেন। এখনো তিনি নীতিমালা ঘোষণা করেননি। হয়তো শীঘ্রই তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাবে অসংখ্য দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তি।
আমরা জানি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টাকার বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এমনকি সেসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অর্থের উৎস দেখাতে হয় না। মূলত ওই দেশগুলো নিজেদের স্বার্থেই এৃনটা করে থাকেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পও সম্ভবত তাই চাইছেন। যে কোনো মূল্যে তার দেশে টাকা আনতে তিনি টাকার বিনিময়ে গোল্ড কার্ড বিক্রি করবেন। মূলত দুর্নীতিবাজ এবং কালোটাকার মালিকরাই এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে পলাতক সরকারের বাহিনী সবাই হয়তো ওইদিকেই পা বাড়াবে।
বাস্তবতা হলো- ১৬ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া এই সুযোগ লুফে নেবেন। বলা যেতে পারে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ ঘোষণা পলাতক আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের জন্য পোয়াবারোর মতোই। তারা এখন সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। তাদের জন্য এখন নির্বিঘ্ন আশ্রয়স্থল হবে যুক্তরাষ্ট্র।
গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি এবং নেতারা অবৈধ উপায়ে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন, তাদের কাছে ৫০ লাখ ডলার কোনো টাকাই নয়। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ তারা ওখানে বিনিয়োগ করবে। দেশ থেকে টাকা নিয়ে যাবে। নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। দুর্নীতির টাকায় তারা এই দেশেও ভালো ছিল, এখন ওখানে আরও ভালো থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন