গুজবের কারখানা নাকি ষড়যন্ত্র ?
‘আসতেছি আমি… বিচার করব’ বললেন শেখ হাসিনা, ১ ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ

দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা, খুন এবং নির্যাতনের বিচার করবেন; সোমবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় দলীয় কর্মীদের সেই আশ্বাস দিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি।”
গত বছরের ৫ই আগস্ট পালিয়ে দেশত্যাগের পর থেকেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুকে পেজ থেকে তা নিয়মিত সরাসরি সম্প্রচারও করা হচ্ছে। অবশ্য যাকে সবাই গুজব ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলছেন।
৭ই এপ্রিল, সোমবার রাতে নতুন করে তেমনই এক ভার্চুয়াল আলোচনা ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই আলোচনাপর্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমস্যার কথা শোনেন আওয়ামী লীগের নেত্রী। কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করেন, তাদের পরিবারের ওপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চলেছে। তখন নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা জানান, তিনি এই সব ঘটনার বিচার করবেন।
শহিদ নেতা-কর্মীদের পরিবার এবং আহতদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করছি, খুনিদের বিচার আমি একদিন করবই। হয়তো সেই কারণেই আল্লাহ আমাকে বারে বারে মৃত্যুর মুখ থেকে রক্ষা করে বাঁচিয়ে রেখেছেন।”
এ সময় তিনি বলেন, “খুনের মামলা কখনও তামাদি হয় না।” কর্মী-সমর্থকদেরও বলেছেন, “হামলাবাজদের খুঁজে খুঁজে শাস্তি দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ্ সেই জন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন। চিন্তা করবেন না। আসতেছি আমি।”
১ ঘণ্টা ১১ মিনিটের ওই আলোচনায় আওয়ামী লীগের সরকারের আমলের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানেন শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সমালোচনা করেন তিনি।
ভার্চুয়াল আলোচনায় জুলাইয়ে নিহত আবু সাঈদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ওরা আসলে ওর লাশটাই চেয়েছিল। শুনেছিলাম, মাথায় আঘাত লেগেছিল। কিন্তু ওকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিতে দেয়নি। তার আগেই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি করে।”
আওয়ামী লীগের এই নেত্রী উল্লেখ করেন, “আমরা আমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করিনি। কিন্তু ইউনূস করছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেশটাকে যখন উন্নয়নশীল দেশে তুলে ধরলাম। তখনই এমন গভীর চক্রান্ত হয়ে গেল। বাংলাদেশকে জঙ্গিদের দেশে পরিণত করা হল। আর দিনশেষে এমন ব্যক্তি ক্ষমতা দখল করল, যার মানুষের প্রতি কোনও দয়া মায়া নেই আর ছিলও না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, “মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে মোটা অঙ্কের সুদ নিত। সেই টাকায় উনি বিদেশে পাঠিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। আমরা ভাবতাম গরীব মানুষের ভাল করছে। তাই একসময় অনেক সহযোগিতা করেছিলাম। পরে সেই মানুষের টাকা নিয়ে তছরুপ করেছে। ওনার ক্ষমতার লোভেই আজ বাংলাদেশ জ্বলছে।”
ড. ইউনূসকে এ সময় ‘সুদখোর’ এবং ‘মানবতাবিরোধী’ বলেও সমালোচনা করেন তিনি। পুরো বক্তৃতায় বার বার উঠে এসেছে হামলাকারীদের বিচারের কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা এই জঘন্য কাজ করেছে, তাদের বিচার বাংলাদেশে হতেই হবে। সেটি আমরা করবই। শহিদ পরিবারগুলোকে বলব, আপনারা ধৈর্য্য ধরুন।”
বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান-সহ অন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দেওয়ার বার্তাও দেন শেখ হাসিনা।
আপনার মতামত লিখুন