রাজধানীতে জমে উঠছে পশু বেচাকেনা
ভারতীয় গরু না থাকায় স্বস্তি, ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি

কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শুরুতে আশঙ্কা থাকলেও জমে উঠছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো। ধীরে ধীরে বাড়ছে বেচাকেনা। আগের দু-তিনদিনের তুলনায় বুধবারও বৃহস্পতিবার (৪-৫ জুন) ঢাকার অধিকাংশ হাটেই পশু বেচাকেনা বেড়েছে। এদু’দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সরেজমিনে গাবতলী, ইস্টার্ন হাউজিং, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, দনিয়া ও রায়েরবাগের হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা উপস্থিতি বেশ ভালো। যারা কোরবানির পশু কিনতে হাটে আসছেন তাদের অনেকে পছন্দের পশু কিনে ফিরছেন। রাত থেকে বেচাকেনা আরও জমে উঠবে বলে আশা করছেন হাট সংশ্লিষ্টরা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগামী দুদিন হাটে ক্রেতা আরও বাড়তে পারে। এদিন বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার পাশাপাশি উৎসুক মানুষেরা অনেকেই হাটে ভিড় করছেন। তারা হাট ঘুরে বিভিন্ন গরু দেখছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদাম শুনছেন। অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে কোথাও কোথাও কিছুটা গাদাগাদিও তৈরি হচ্ছে।
মূলত রাজধানীর হাটগুলোতে গত শনিবার ও রবিবার দুপুরের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করে। সোমবার পর্যন্ত গত তিনদিন বেচাকেনা তেমন ছিল না। সে তুলনায় আজ গরু-ছাগল বেশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাট সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের কারও কারও সঙ্গে কথা হলে তারাও এবার দরদাম নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
হাটগুলোতে দেখা যায়, গাবতলী, দনিয়া ও যাত্রাবাড়ী হাটের নির্ধারিত স্থান রাস্তার দুই পাশ ও আশপাশের বাজার ছাড়িয়ে ত্রিপলের ছাউনি ও প্যান্ডেল টানিয়ে গরু-ছাগল রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে আসা পাইকার, ব্যবসায়ী ও খামারিরা নিজেদের গরু এসব ছাউনির নিচে বেঁধে রেখেছেন। হাটে প্রবেশের মূল গেটে দেখা গেছে ক্রেতা সমাগম। কেউ পছন্দের গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন, কেউ পশু কিনতে হাটে ঢুকছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি উৎসুক জনতার ভিড়ও একেবারে কম নেই। হাট কমিটির পক্ষ থেকে বারবার সতর্কতা জারি করার পরও হাটে আসা দর্শকদের সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
এবছর হাটগুলোতে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৫-৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড়-দুই-আড়াই লাখ টাকা দামের গরুও বিক্রি হচ্ছে। তবে যেসব গরুর দাম লাখ টাকার আশপাশে সেগুলোর চাহিদা বেশি দেখা গেছে।
রাজধানীর গাবতলী হাটে কথা হয় জোনায়েদ মোল্লা নামের একজনের সাথে। ঈদে কোরবানির জন্য পশুর হাট থেকে মাঝারি আকারের একটি গরু কেনেন তিনি। হাসিল আদায় কেন্দ্রের সামনে কথা হলে এই ক্রেতা বলেন, ‘বিক্রেতা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দাম চেয়েছিলেন। গরুটি পছন্দ হওয়ায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাম বলি। পরে আরও বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় বনিবনা হয়।
ছোট সাইজের একটি গরু ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছেন রবি শেখ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর দাম মোটামুটি নাগালের মধ্যে। বাজেট কম, তাই আগেভাগে গরু কিনে নিলাম। তাহলে আর শেষের দিকে ঝামেলা হবে না।
বাজার ঘুরে পাইকার ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে হাটে গরু-ছাগল আসা শুরু হলেও মঙ্গলবার টুকটাক বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার বেচাকেনা বেড়েছে। তবে বেচাকেনার পরিমাণ তুলনামূলক কম। পাইকাররা আশা করছেন, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার পশু বিক্রি বাড়বে।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে ঢাকার হাটে গরু নিয়ে আসা এক খামারি বলেন, মঙ্গলবার ছোট সাইজের ২৫টি গরু নিয়ে এসেছি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র তিনটা। যার মধ্যে একটি ৫০ হাজার, একটি ৭৪ হাজার এবং অন্যটি বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়। আর আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি করেছি ৪টা। আগের তুলনায় দাম ভালো পেয়েছি।
তিনি বলেন, কোরবানির পশু বিক্রি এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। আজ রাত থেকে বিক্রি বাড়তে পারে। এখন ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড় গরুর দরদাম চললেও বিক্রি কম।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা পাইকার রেজওয়ান মিয়া বলেন, শনিবার বিকেলে ২০টি গরু নিয়ে এসেছি। লাখ টাকার কম দামের গুরুর পাশাপাশি দুই-আড়াই লাখ টাকা দামের গুরুও এনেছি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু ৭০ হাজার, একটি ১ লাখ ৪ হাজার এবং অন্যটি ৯৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
তিনি বলেন, এবার গরুর দাম তেমন চড়া না হলেও পরিবহন খরচ অনেক বেড়েছে। তবে রাস্তায় কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তাছাড়া এতোদিন ভারত থেকে নিয়মিত ও চুরি করে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে জমজমাট থাকতো। ফলে এদেশের গরু ব্যবসায়ী ও খামারিদের সবমিলিয়ে লোকসান গুনতে হতো। কিন্তু এবার কোনো ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢোকেনি। এজন্য আমরা এবার একটু বেশিই আশাবাদী।’
রাজধানীর গাবতলী, ইস্টার্ন হাউজিং, দিয়া বাড়ি, যাত্রাবাড়ী সহ সকল হাটেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান দেখা গেছে। সেই সাথে পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, হাট, মোড়, ওভার ব্রিজের নিচে সেনাবাহিনীর সক্রিয় অবস্থান নিশ্চিন্ত নিরাপত্তার বিষয়ই জানান দিচ্ছে। সবমিলিয়ে এবারের কুরবানির হাটগুলো বেশ জমে উঠেছে- একথা বলাই যায়।
আপনার মতামত লিখুন