একটি বিশেষ দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উপদেষ্টাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে, সংশোধন না হলে নাম প্রকাশ করা হবে: আবু তাহের
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নীল নকশার নির্বাচন আয়োজনের ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারী উপদেষ্টাদের নাম ও তাদের কথোপকথনের রেকর্ড তাদের কাছে রয়েছে। সময়মতো সংশোধন না হলে জনগণের সামনে সব প্রকাশ করা হবে।
পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট দেওয়া, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেখানে সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এমনটা বলেন।
ডা. মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সরকারের ৪-৫ জন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে সকল নিয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসনকে একটি দলীয় সরকারে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর একটি বিশেষ দলের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য ‘প্রচণ্ড চাপ’ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
‘কোনো একটি দলের লোককে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিভিল এবং পুলিশ প্রশাসনে বসিয়ে যেই নীলনকশার নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র চলছে, এতে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখি না’, যোগ করেন তিনি।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো পরিকল্পিত নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না। আমি সরকারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আজকে হুঁশিয়ারি দিতে চাই না—আজকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, প্রশাসনের যে অবস্থা এবং যে ষড়যন্ত্র চলছে এটাকে বন্ধ করুন।’
আবু তাহের বলেন, ‘নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য লোকদেরকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করুন। আর যদি না হয়, কোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আমাদের কাছে নাম আছে। তাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। মিটিংয়ে তারা কী বক্তব্য রাখেন, তার খবর আছে। আমরা জনগণের কাছে আপনাদেরকে এখন প্রকাশ করছি না। সুযোগ করে দিতে চাই, আপনাদের সংশোধনের জন্য সময় দিতে চাই। যদি সময়মতো সাবধান না হন, তাহলে জনসম্মুখে নাম প্রকাশ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারাই জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। আপনারাই রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানুষের অধিকারের যে সুযোগ আছে, তার সাথে বেইমানি করছেন। আজকে যারা ১৫ বছরের বেইমানির জন্যে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, দেশে থাকলেও সূর্যের মুখ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না, আপনাদের পরিণতি তার চেয়েও খারাপ হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাহের বলেন, ‘আপনি ভালো মানুষ, কিন্তু আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক আপনাকে বিভ্রান্ত করছে এবং অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। আপনি তাদের সরান, নাহলে জনগণই তাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘এখনকার যুবকদের মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে চেতনা তৈরি হয়েছে, তাতে আপনারা কয়েক মিনিটও টিকতে পারবেন না।’ তিনি জুলাই-বিপ্লবের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করার জন্য উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটি এম মাছুম বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পরই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। সরকার একটি দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ভারসাম্য নেই। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। বিগত দিনের খুনি, লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীদের বিচার জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল লুটপাটের সঙ্গে জড়িত। তাই তাদেরও বিচার করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে সংস্কার করতে হবে। পুরাতন সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে পিআর পদ্ধতিতে ভোট দিতে হবে। সবার ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশ নতুন পরিচয় পেয়েছে। ১ হাজার ৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন। সংস্কার, বিচারসহ ৫টি মৌলিক দাবি মানতে হবে। দেশে আর কোনও দিন ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন। একই কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৭টি দল।





আপনার মতামত লিখুন