খুঁজুন
মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৬ পৌষ, ১৪৩১

রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ

নরপিশাচরা এখনও মানবরূপেই আছে

মোঃ ইলিয়াস কাশেম
প্রকাশিত: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
নরপিশাচরা এখনও মানবরূপেই আছে

লেখক: ইলিয়াস কাশেম
(সাংবাদিক,কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক)

বিভৎস চেতনা হৃদয়ে লালন-পালনকারীরা রাজনীতির মতো একটি মহতি শব্দকে অপবিত্র করে ফেলেছে।দেখতে শুনতে ওদের মানুষের মতো দেখালেও,ওরা আদতে সেই বিভৎস চেতনা খেকো আওয়ামিলীগই বটে।জালিমের অনুসারীরা কখনও প্রকৃত বিবেকবান মানুষ হতে পারেনা,এই মহাসত্য বলার অপরাধে যদি আমার ফাঁসিও হয়!সেও হাসিমুখে মেনে নিব,কিন্তু এই মহাসত্যকে অস্বীকার করতে পারবোনা।

এরা হৃদয়ে ভিনদেশী চেতনা গোপনে লালন-পালন করে দেশপ্রেমিক বলে যতই গলা ফাটিয়ে মরুক,এদের হৃদয়ে জালিয়াতির সিলমোহর মেরে দেয়া হয়েছে মহান রব আল্লাহ্ র পক্ষ থেকে। এটা আমার দীর্ঘদিনে নিজ চোখে দেখে আসা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।এরমধ্যে কেউ কেউ আছেন সরল হৃদয়ের মানুষ,কিন্তু এরা খুব সহজেই মিথ্যাকে সত্য বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।আর এই ভুলকেও তারা কোনদিন ভুল ভাবতেও চেষ্টা করেননা,আর কেউ কেউ চেষ্টা করলেও অন্তর্দৃষ্টি তাদেরকে আচ্ছন্ন করেই সেই একই পথ অনুসরণ করাতে থাকে।

সরকারের উদারনীতির ফলে এরা মরতে গিয়েও বেঁচে ফিরে আসছে ধিরে ধিরে।শাসককে নমনীয় হতে হয় প্রকৃত মানুষের জন্য,যারা ভুল করেই ভুল করেছে অথবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভুল পথে নিজেকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তাদের জন্য। কিন্তু যারা ভুল করবার জন্যই পৃথিবীতে জন্মেছে,সমাজ,ধর্ম ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করে আপনাদের সরলতার সুযোগ নিচ্ছে,তাদের প্রতি পুরো রাষ্ট্র যন্ত্রকে সাধারণ জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে কঠোর থেকে কঠোর হস্তে দমন নীতি গ্রহণ করতে হবে।জাতির রূপ ও মনমানসিকতার পরিমাপ অনুযায়ী সরকারকে প্রয়োজন মাফিক জায়গা বুঝে কঠোর ও নমনীয় কিংবা সংবেদনশীল আচরণ করা শিখতে হবে।মনে রাখতে হবে,এ জাতি শক্তের ভক্ত নরমের যম।বাংলাদেশের মতো জায়গায় যদি আল্লাহ্ র ফেরেশতাও শাসন ভারের দায়িত্ব নিয়ে বসেন,সেই ফেরেশতাকেও মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে এরা পাগল করে ছাড়বেন,এটা নিশ্চিত।

যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে এতদিন অবাদে ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব চলেছে,সেখানে রাতারাতি আপনাদের পক্ষে এই দেশ সুদ্ধ করবার চিন্তা নেহাতই বেমানান ও অসম্ভব বিষয়। কারণ দেশে এখনও ঘুষ-দুর্নীতিবাজরা জনসংখ্যার গড় হিসেবে সংখ্যা গরিষ্ঠ।পাশাপাশি পরাজিত অপশক্তি তো প্রতিশোধের রক্তলাল চোখে ঘুমহীন ষড়যন্ত্রের জাল,মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে উদ পেতে বসেই নয়,অবিরাম দৌড়ের উপর আছেই।এদিকে আমাদের কথিত বন্ধু রাষ্ট্রও বসে নেই,অর্থ দিয়ে,অস্ত্র দিয়ে,পেশিশক্তির সহযোগিতা দিয়ে,যেখানে যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু দিয়েই বদ্ধমূল অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

মনে রাখতে হবে,তাদের গোপনে বহুমূল্যে কেনা বাংলাদেশের পুতুল শাসকের পতন মানেই তাদের বিশ্বসেরা অবমাননা ও কর্তৃত্ববাদীর চরম পরাজয়।কাজেই বাংলাদেশ ভালো থাকলে ওদের শান্তিতে চরম আঘাত ও অশান্তি সৃষ্টি করে। ওদের মানসিকতা ফেরাউনের প্রেতাত্মা ভর করে আছে,যেকোনো মূল্যে ওরা এখন চেষ্টা করবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানতে।এছাড়াও খুব সম্ভব এরা দাজ্জালে অনুসারীই হবে। ওদের কোন ভাবে বিশ্বাস ও মানবিক বিবেচনায় আওয়ামিলীগের রাজনীতির পূনঃবাসন মানেই,ওদের সাধারণ ক্ষমা মানেই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরাধীনতা নিশ্চিত করে দেয়ার পথ পাকাপোক্ত করা।

অতিরিক্ত স্বাধীনতা মানুষকে উলঙ্গ হতে উৎসাহ যোগায়।আগে একদল খেয়েছে,এখন সবদল যার যার মতো খাচ্ছে।শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে,কেউ মানতে নারাজ কাউকেই।এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়া একটি অনির্বাচিত ও অস্থায়ী সরকারে পক্ষে এককভাবে কোন মতেই সম্ভব হবেনা।সমস্যা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়নি,তেমনি সমাধানও কারও পক্ষেই রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়।দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও অস্থায়ী,অনির্বাচিত,সুশীল ও অন্তর্বতীকালী সরকারের পক্ষে অসম্ভব বিষয়।

হাতেগোনা কিছু সমস্যা হয়তোবা মোকাবেলা করা যাবে,কিন্তু এদেশে দীর্ঘ সতেরো বছরে লক্ষ লক্ষ সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে,সেই সাথে আরও কিছু সমস্যার বীজ বপন করা হয়েছে।এতগুলো সমস্যার সমাধানে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে,সরকার আসবেন,সাংবিধানিক এক মেয়াদ সময়েও এ-সব সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হবেনা।এদিকে জমিনে আগাছা সৃষ্টির মতো সমস্যা তো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সৃষ্টি হতেই থাকে,তাকে সেবা যত্ন কিংবা পরিচর্চার প্রয়োজন পড়ে না।পৃথিবীতে বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি জনসংখ্যা সংবলিত দেশ রয়েছে,সে-সব দেশের মাটি এতটা আগাছা কিংবা পরগাছা জন্মানোর মতো উর্বর নয়,যতটা উর্বর বাংলাদেশের মাটি।

সেইসব দেশে মানুষ সৃষ্টি হয় মোটামুটি একটা হিসাব কষেই,আবার মানুষের শিক্ষা,সংস্কৃতি,সভ্যতা,সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসও গড়ে উঠে বেশ হিসাব করেই।আমাদের দেশের মতো এত নারী-পুরুষের ঘনবসতি প্রেম ভালবাসা ও যত্রতত্র মানব চাষের সংস্কৃতি সেইসব দেশে এতটা অবাদ নয়,তবে সবকিছুতেই অবাদ স্বাধীনতার ফল তারা ভোগ করেই অভ্যস্ত।সেইসব দেশগুলোতে আইন ও সংবিধান তৈরি হয় সাধারণের অবাদ স্বাধীনতা ভোগ করবার মহতি উদ্দেশ্য নিয়ে এবং গভীর জ্ঞানগর্ভ চেতনাকে প্রধান্য দিয়েই।কিন্তু আমাদের দেশে আইন ও সংবিধান তৈরি হয় নির্দ্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দল,পরিবার কিংবা গোষ্ঠীকে উদ্ধারের কারিশমা মাথায় নিয়ে,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বিচার বিভাগকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে সেইসব আইন ও সংবিধান প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট ফাঁকফোকর সৃষ্টি, আইনপ্রনয়নকারীরা ইচ্ছা করেই রেখে যান।যাতে করে নিজেদের সুবিধা মতো প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘুষদুর্নীতির সুযোগ থাকে, আবার সেই সুযোগ সৃষ্টি করা হয় প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ইচ্ছে মাফিক নিজেদের দল,পরিবার কিংবা গোষ্ঠী উদ্ধার করতে।

সমস্যার সমাধান যেখান থেকে শুরু হবার কথা,সমস্যার সৃষ্টিও সেই একই জায়গা থেকেই শুরু হচ্ছে।তবে সমস্যা সমাধানের চেয়ে সমস্যা সৃষ্টি দৌড়ে সবসময়ই আমাদের দেশ এগিয়ে থাকে।তারপর সেই সমস্যা এতটা দ্রুত বেগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে,যা কি-না সাধারণের একেবারে দোরগোড়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিস্তৃত লাভ করে বসে।একটি সময় সমাধানের জন্য যেই আইন বা সংবিধান সৃষ্টি করা হয়,সেই আইন বা সংবিধান নিজেই সমস্যার সবচেয়ে বড় ঠিকাদার হিসেবে দাঁড় হতে বাধ্য হয়।

অনিরাপদ ও বিশৃঙ্খলা দমন করা যায়না,নিজেদের ষড়-রিপু যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেরাই দমন করতে ব্যর্থ হয়।দেশ স্বৈরশাসক মুক্ত হলেও,আমাদের সমাজ,বিবেগ ও মনুষ্যত্ব এখন আত্নস্বৈরচার হিসাবে দেখা দিয়েছে।এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা শুধু মাত্র রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব!যদি এদেশের মানুষের আত্ন-পরিসুদ্ধি অর্জন সম্ভব না হয়।নিজের জীবনের প্রতি মায়া সামান্য একটি কীটপতঙ্গ কিংবা যেকোনো প্রাণীরও আছে,সেখানে একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া,ধর্ম নিয়ে রক্তারক্তি করাটা মানব জাতিকে বর্বর ও হিংস্র প্রাণী হিসেবেই কি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন না?সভ্য ও সুশিক্ষিত আমরা নাইবা হলাম!অন্তত পক্ষে মানুষ তো হতে চেষ্টা করতে পারি।মানব দেহে আজকাল কিভাবে নরপিশাচ ও শয়তান ইবলিস এসে জায়গা নিতে সক্ষম হলো!সেই এখন সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়।শতভাগ নিরপরাধ ও নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আগম করার পরও আমরা কেন শতভাগ অমানুষ হয়েই অনন্তকালের যাত্রায় গমন করতে এতটা মরিয়া!পৃথিবীর একমাত্র মানুষ ব্যতীত আর কোন প্রাণীর শুধু মাত্র জীবিকা ছাড়া বিলাসী জীবন যাপনের প্রয়োজন পড়েনা,এজন্যই কি আমরা সৃষ্টির সেরা নিজেদের দাবি করতে পারি!আমি আর এখন কাউকেই প্রশ্ন করিনা,শুধু আশ্চর্য হই নিজেকে নিয়েই,এ-সব দেখার জন্য,মেনে নেবার জন্যই কি তাহলে আমার /আমাদের আগমন এই মানব জনমে?

এই সমাজে আমি আর নিজেকে শিক্ষিত ভাবিনা,এটাও বেশ আতংকের বিষয়।পাঠ্য পুস্তক আমাদের অশিক্ষা দান করলো কি-না জানিনা,তবে শিক্ষক সমাজ,পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজিকতা আর ধর্মও কি আমাদের সাথে শুধুই বিনিময় মুদ্রা অর্জনের প্রতিযেগিতা করে যাচ্ছেন না!সহসাই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচালে এক জীবন পাড়ি দিয়ে কত শত কোটি মানুষই এ জগৎ সংসারে এসে আবার ফিরেও গিয়েছেন।কিন্তু আজ তাদের কোথায় কি অবস্থান,কেউ জানতে পারছিনা।মৃত্যু আমাদের অতীব জরুরি শিক্ষা, সেই শিক্ষা থেকে আমরা এখনও যদি নিজেদের যোজন যোজন দুরত্বে পড়ে থাকিই,তবে আর পাঠ্য পুস্তক,শিক্ষক সমাজ,পরিবার,ধর্ম,সমাজিকতা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি কথায় কথায় আঙ্গুল তুলতে পারি কি আমরা?

এই সমাজ নিয়ে ভাবতে গেলে মস্তিষ্কে পঁচন ধরে যায়,হৃদয়ে বিদ্রোহের অনল জ্বলে উঠে।সমাজের মানুষগুলোর দৃষ্টিতে যখন চকচক করে বিভৎস,কুৎসিত ও পৈশাচিক নজর।বিবেগ,বিবেচনা ও বিচারিক শক্তিতে যখনই জন্তু জানোয়ারের স্বরূপ উন্মোচিত হতে দেখি,তখন কিভাবে মনে হবে এখনও এই সমাজেরই একজন দিব্যি মানুষ হয়েই বেঁচে আছি আমিও !যে সমাজের মানুষগুলো অন্যের নির্দোষ ও নিষ্পাপ চেহারার দিকেও চরম অবিচারের আঙ্গুল তোলে,তখনও সেই একই মানুষ তার নিজের অন্ধ বিবেগ,বিবেচনা ও বিচারের দিকে নিজেকে একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবেই দেখে,চোখে মুখে জ্বল জ্বল করে নোংরা হাসি, তবুও কেন আমি এই সমাজ নিয়ে এতটা ভাবতে চেষ্টা করি!এখানে হুবহু সত্যেররূপে যখন মানুষ চরম মিথ্যাকেই আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন ঘরে ঘরে,তখনও কি নিজেকে একজন সমাজবাদী, মানবহিতৈষী হিসেবে মেনে নিতে পারি! অর্থসম্পদের অন্ধ মোহে আজকাল যখন দেখি একই পিতার ঔরসজাত এবং একই মায়ের পেটের ভাই -বোনগুলোও নিজ রক্তকে ভুলে লোভের দাসত্ব করতে,তখনও কি পরিবার বাদী হিসেবে আর কোন কিছু ভাবতে পারি আমি?ধন্য এই সমাজ ব্যবস্থা!ধন্য এই পরিবার ব্যবস্থা!আমি কখনও স্বজ্ঞানে অজ্ঞান হতে পারিনি বলেই শত্রু-মিত্র নির্ণয় করতে এখনও শিখিনি!অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে গন্য করাই আমার আদর্শ,সে হোক দুর কিংবা অতি কাছের মানুষ।একমাত্র জন্মদাতা পিতামাতা ব্যতীত নিঃস্বার্থ দরদী কাউকে খুঁজে পাওয়া যে সমাজে দুঃসাধ্য বিষয়,সেই একই সমাজে এত প্রেম-ভালোবাসা,এত আপনের ছড়াছড়ি বেমানান ও বিষাদ নয় কি?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ণ
১

অতিরিক্ত সচিবের পদ পেলেন ১২ কর্মকর্তা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:১৯ অপরাহ্ণ
অতিরিক্ত সচিবের পদ পেলেন ১২ কর্মকর্তা

যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। পদোন্নতির পর তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে।

গত (২৪ ডিসেম্বর) থেকে তাদের পদোন্নতি কার্যকর করা হবে বলে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পদোন্নতিপ্রাপ্তরা হলেন- কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) সৈয়দ মেহদী হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সিপিপি পরিচালক (যুগ্মসচিব) আহমাদুল হক, ভূমি সংস্কার বোর্ডের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (যুগ্মসচিব) মো: রেজাউল কবীর, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোজাফফর আহমেদ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) হাওলাদার মো: রকিবুল বারী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এ টি এম কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. কামাল উদ্দীন বিশ্বাস, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব জালাল উদ্দিন আহম্মেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: শাহজাহান মিয়া, ২০টি চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) শবনম মোস্তারী এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক (যুগ্মসচিব) আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতির আদেশে উল্লিখিত কর্মস্থল থেকে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দপ্তর/কর্মস্থল ইতোমধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম/ঠিকানা উল্লেখ করে যোগদানপত্র দাখিল করবেন।

অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

পরে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো বিরূপ//ভিন্নরূপ তথ্য পাওয়া গেলে তার ক্ষেত্রে এ আদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন//বাতিল করার অধিকার কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে।

সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরাসরি সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর অথবা নিম্নবর্ণিত ই-মেইলে অনলাইনে যোগদানপত্র দাখিল করতে পারবেন (ই-মেইল sa1@mopa.gov.bd)

ফিরে দেখা ২০২৪

তাবলীগের সংঘাত, হাফেজদের বিশ্বজয়, ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত যত ঘটনা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৮ অপরাহ্ণ
তাবলীগের সংঘাত, হাফেজদের বিশ্বজয়, ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত যত ঘটনা

সময়ের নিয়মেই শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ২০২৪। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো ২০২৪ সালও ছিল ঘটনাবহুল। আন্দোলন, অস্থিরতা, অভ্যুত্থানের নতুন কিছু স্মৃতি যুক্ত হয়েছে এ বছর। মুক্তির স্বাদ, বিজয় রক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ সময়কে করেছে আরও কঠিন। আন্দোলন-অভ্যুত্থানের বছরে দেশের ইসলামী অঙ্গনের বেশ কিছু ঘটনাও ছিল আলোচিত। কোনোটা স্বস্তির, আবার কোনো ঘটনা বিব্রতকর। কিছু ঘটনা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালে ইসলামী অঙ্গনে আলোচিত ঘটনা প্রবাহ স্মৃতির অ্যালবামে যুক্ত করতে সালতামামির এই আয়োজন—

বছরজুড়ে আন্তজার্তিক কোরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজদের বিশ্বজয়

বিজ্ঞাপন

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক কোরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন একাধিক কোরআনের হাফেজ। অনেকেই সরাসরি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন, কেউ কেউ ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন।

ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল কোরআনের হাফেজদের জয়রথ। সর্বশেষ ডিসেম্বরেও বিজয়ী হয়েছে দুইজন কোরআনের হাফেজ।

বিজ্ঞাপন

এক নারীসহ ১৫জন বিশ্বজয়ী কোরআনের হাফেজের তালিকায় রয়েছেন রাজধানীর মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামীর দুই হাফেজ, হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ও হাফেজ আনাস মাহফুজ।

এছাড়াও বিজয়ী হয়েছেন রাজধানীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী হাফেজ বশির আহমাদ ও হাফেজ আনাস বিন আতিক।

আরও বিজয়ী হয়েছেন তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর দুই শিক্ষাথী হাফেজ মুশফিকুর রহমান ও হাফেজ হুজাইফা।

তাহফিজুল কুরআন ওয়াসসুন্নাহর আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এই তালিকায় হাফেজ সাদিকুর রহমান, হাফেজ জাকারিয়া, হাফেজ আকমাল আহমাদের নাম রয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠান থেকে মিশরে কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ তানভির আহমাদ, আবুধাবীতে হদর তিলাওয়াতে বিজয়ী হয়েছেন হাফেজ আম্মার বিন মাসুম।

এই তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আরও দুইজন হাফেজ হলেন হাফেজ আবু রায়হান ও হাফেজ মাহমুদুল হাসান। কিরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন কারি আবু জর গিফারী।

তরুণ হাফেজদের বাইরেও এ বছর কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন নারী হাফেজ হুমাইরা মাসউদ।

দেশের ইতিহাসে প্রথম আলেম উপদেষ্টা

২০২৪ সালে অন্যতম আকর্ষণীয় ঘটনা ছিল স্বাধীনতার পর দেশের সরকার ব্যবস্থায় প্রথম কোনো আলেম উপদেষ্টার নিয়োগ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের প্রতিনিধি রাখা হয়। উপদেষ্টা তালিকায় রাখা হয়েছে দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে

আ ফ ম খালিদ হোসেন ইসলামি অঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয়। আ ফ ম খালিদ হোসেনের মূল নাম আবুল ফয়েজ মুহাম্মদ খালিদ হোসেন। তিনি ১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে আ ফ ম খালিদ হোসেনের দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড ও সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০ টি। এছাড়াও তিনি ৪টি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক।

বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ

২০২৪ সালের দুঃখজন একটি ঘটনা ছিল বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মাঝে সংর্ঘষ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব মাওলানা রুহুল আমিনকে ঘিরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বেশ কিছুদিন অনুস্থিত ছিলেন খতিব মাওলানা রুহুল আমিন। অসুস্থতার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন জানিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররমে জুমা পড়াতে আসেন।

তবে সেদিন পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী জুমা পড়ানোর দায়িত্ব ছিল ড. আবু সালেহ আহম্মেদ পাটোয়ারীর। খতিব রুহুল আমিন জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদে এলে মুসল্লিরা তার পেছনে নামাজ পড়তে অস্বীকৃতি জানান।

এ সময় খতিব জটিলতায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন মুসল্লি ও সাবেক খতিবের সমর্থকরা। এ সময় মসজিদের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। দরজা জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বায়তুল মোকাররমে নতুন খতিব

সেপ্টেম্বরে বায়তুল মোকাররমে খতিব নিয়ে সংঘর্ষ, জটিলতার পর অক্টোবরে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দেশের ইসলামী অঙ্গনের পরিচিত মুখ মাওলানা আবদুল মালেককে

এর আগে আন্তর্জাতিক ও দেশের ইসলামী অঙ্গনে পরিচিত থাকলেও খতিব হিসেবে নিয়োগের পর দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন বিনয়ী ও শ্রদ্ধাভাজন এই আলেম।

মুফতি আবদুল মালেক দেশ-বিদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসলামিক স্টাডিজ, হাদিস ও ফিকহের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারী একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। বিশ্বখ্যাত মুফতি বিচারপতি তাকী ওসমানী তার ওস্তাদ। আরব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি পণ্ডিত ও সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুদ্দীন অনুষদের অধ্যাপক শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর (রহ.) অধীনে তিনি দুই বছর হাদিস ও ইসলামি আইন বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা পরিচালনা করেন।

আবদুল মালেক মক্কা, মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি ইতোমধ্যে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন আখ্যান। এতে অন্য সবার মতো স্বতঃর্স্ফূত অংশগ্রহণ ছিল দেশের মাদরাসার শিক্ষার্থীদের। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজধানীর প্রায় সব মিছিলে তাদের সরব ‍উপস্থিতি ছিল। আন্দোলনের সময় মাদরাসার ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে কওমি শিক্ষার্থী ও আলেমদের সংগঠন ‘সাধারণ আলেম সমাজ’

যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বৈরাচার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্গ গড়তে সাহায্য করেন মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজ। এই আন্দোলনে প্রায় ৭০ জনের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থী শহিদ হন।

বিভিন্ন মামলায় মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেমদের জামিন

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিভিন্ন সময় দেশের আলেমদের ওপর নিপীড়ন ও জেল, জুলুমের ঘটনা ঘটেছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি করা হয়। দুই, তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন অনেকেই। এই তালিকায় মাওলানা মামুনুল হকের নাম ছিল শীর্ষে

২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মাওলানা মামুনুল হক। তিন বছর পর ২০২৪ সালের মে মাসে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর আরও একাধিক আলেম কারাগার থেকে মুক্ত হন।

তাবলিগের শূরায়ে নেজামপন্থিদের ইসলামী মহাসম্মেলন

মাওলানা সাদের বিতর্কিত অবস্থানকে ঘিরে ২০১৭ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের মাঝে বিভাজন দেখা দেয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বিভাজন দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। দ্বন্দ্বের পর থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ইজতেমা করছেন তাবলীগের একাংশ শুরায়ে নেজাম, যাদের সঙ্গে মাওলানা জোবায়েরসহ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ রয়েছেন।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করে আসছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। তারা ২০২৫ সালের প্রথম পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য এবং মাওলানা সাদকে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমগণ এবং শুরায়ে নেজাম ইসলামি মহাসম্মেলনের ঘোষণা দেন ৫ নভেম্বর। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী ময়দানে আয়োজিত ওই সম্মেলনে মাওলানা সাদকে আসতে না দেয়া, সাদ অনুসারীদের পৃথক পর্ব না রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।

ইজতেমার মাঠে সংঘাত

২০২৪ সালে দুঃখজন আরেকটি ঘটনা ছিল বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগের সাথীদের মাঝে সংঘাত। দিল্লির নিজামুদ্দীনের মাওলানা সাদ অনুসারী ও শূরায়ে নিজাম (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) এর অনুসারীদের মাঝে সংঘাতের ঘটনা ঘটে

এতে আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করা শূরায়ে নিজামপন্থিদের (মাওলানা জুবায়েরপন্থি) ওপর গভীর রাতে মাওলানা সাদ অনুসারীদের অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠে। তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের পক্ষ থেকে শূরায়ে নিজামপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রথমে ইটপাটকেল ছোঁড়ার অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ৩ জন নিহতের সংবাদ পাওয়া যায়।

সংঘাতের ঘটনায়  শূরায়ে নিজামপন্থিদের পক্ষ থেকে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাদপন্থী নেতা মাওলানা মুয়াজ বিন নূর

৪ বছর পর মিজানুর রহমান আজহারীর দেশ ও মাহফিলে ফেরা

২০২৪ সালে আলোচিত আরেকটি ঘটনা ছিল সাড়ে চার বছর পর মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফেরার ঘটনা। পারিপার্শ্বিক কারণ ও গবেষণার কাজের জন্য ২০২০ সালে দেশ ছাড়লেও আওয়ামী দুঃশাসনেরকালে তাকে আর দেশে ফিরতে দেখা যায়নি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে ২ অক্টোরব দেশে ফেরেন তিনি। এক সপ্তাহ দেশে থেকে আবারো মালয়েশিয়ান যান। এবার ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে মাহফিলে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে মাহফিলে অংশ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের পেকুয়ায় এক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বয়ান করেন তিনি। রাত সাড়ে ৯টায় মঞ্চে ওঠেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ৯টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা বয়ান করেন তিনি। মাহফিলে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হওয়ায় অতিরিক্ত মানুষের চাপে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটসেবা কিছুটা ব্যহত হয়।

মাহফিলে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য

২০২৪ সালে আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনার তালিকায় উঠে এসেছে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের অসংযত বক্তব্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাহফিলের মঞ্চে বক্তাদের বক্তব্যে বরাবরই অসংযত বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। যা ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিব্রত করেছে। এর কারণে মাহফিলের ভাবগাম্ভীর্যও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

এ বছর মাহফিলের মঞ্চে সিনেমার নায়িকার নাম উচ্চারণ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন বক্তা আমির হামজা। সর্বশেষ ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। মাহফিলের মঞ্চে পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ইসলামী বক্তা তাহেরীও। পরবর্তীতে এক মাহফিলে পুলিশের আগমনের কারণে তার পালিয়ে যাওয়ার সংবাদও এসেছিল গণমাধ্যমে।

হজের খরচ ও হাজীদের মৃত্যু

২০২৪ সালে মাত্রাতিরিক্ত হজের খরচের বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। কোটা খালি রেখে শেষ হয় এ বছরের হজের নিবন্ধন। হজের সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে অধিক সংখ্যায় হজযাত্রীর মৃত্যু ঘটে এ বছর। এবার হজে ৬৫ জন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়

আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি হজের খরচ কমানোর জন্য দুটির বদলে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন খাবার খরচ ছাড়াই।

সরকারি এ হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানায় বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো। তাদের দাবি, হজের খরচ কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে হজ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সৌদি রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় হজ খরচ বেশি একটা কমানো যায়নি।

এছাড়া, বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন ‘হজ এজেন্সিজ অব এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব)-এর কমিটি ভেঙে দেয়া হয় দুর্নীতির অভিযোগে। এরপর হাব দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হাবে সরকার থেকে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটির একাংশ। এরপর বেসরকারি হজ প্যাকেজ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিতেও দেখা যায়।

 বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা

আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মানুষজন হতাহতও হন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইভেন্ট খুলেও মাজার ভাঙার আহ্বান জানাতে দেখা যায়।

এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে হামলার ঘটনা এবং সিলেটের শাহপরান মাজারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার ঘটনা বেশি আলোচিত ছিল। গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজার ভাঙার জন্য ফেসবুকে প্রচারিত একটি ইভেন্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ইসলামী বইমেলা

২০২৪ সালে অন্যতম আলোচিত ও নজরকাড়া বিষয় ছিল এবারের ইসলামী বইমেলা। প্রতি বছর রবিউল আওয়াল মাসে ইসলামী বইমেলা সংঘটিত হলেও এবার কিছুটা দেরিতে হয়েছিল ইসলামী বইমেলা। এবার ইসলামী বইমেলা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। দীর্ঘ দিন ইসলামী বইমেলা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় প্রতিবাদ জানায় ইসলামী প্রকাশনীগুলো।

এর প্রেক্ষিতে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গীকে সাজানো হয় বইমেলা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররমের পূর্ব চত্বরে সাজানো হয়  ইসলামী বইমেলার পূর্ণ আয়োজন। দক্ষিণ গেটে রাখা হয় হকারদের প্রকাশনীগুলো।

এবারের ইসলামী বইমেলা সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করতে সক্ষম হয়। এবারের মেলায় মোট ১৫১টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ, তাফসীর, হাদিসগ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক বিভিন্ন বই ছিল মেলায়। এছাড়াও মেলায় প্রকাশিত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে একাধিক ম্যাগাজিন।

জুলাই বিপ্লবে হতাহত ও ফেনীর বন্যার্তদের পাশে আস-সুন্নাহ

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয় ফেনী জেলা। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফেনীতে ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ৪২ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের চিকিৎসাসেবায় এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন পরবর্তীতে আরও ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।