খুঁজুন
শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক, ১৪৩১

রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ

নরপিশাচরা এখনও মানবরূপেই আছে

মোঃ ইলিয়াস কাশেম
প্রকাশিত: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪, ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
নরপিশাচরা এখনও মানবরূপেই আছে

লেখক: ইলিয়াস কাশেম
(সাংবাদিক,কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক)

বিভৎস চেতনা হৃদয়ে লালন-পালনকারীরা রাজনীতির মতো একটি মহতি শব্দকে অপবিত্র করে ফেলেছে।দেখতে শুনতে ওদের মানুষের মতো দেখালেও,ওরা আদতে সেই বিভৎস চেতনা খেকো আওয়ামিলীগই বটে।জালিমের অনুসারীরা কখনও প্রকৃত বিবেকবান মানুষ হতে পারেনা,এই মহাসত্য বলার অপরাধে যদি আমার ফাঁসিও হয়!সেও হাসিমুখে মেনে নিব,কিন্তু এই মহাসত্যকে অস্বীকার করতে পারবোনা।

এরা হৃদয়ে ভিনদেশী চেতনা গোপনে লালন-পালন করে দেশপ্রেমিক বলে যতই গলা ফাটিয়ে মরুক,এদের হৃদয়ে জালিয়াতির সিলমোহর মেরে দেয়া হয়েছে মহান রব আল্লাহ্ র পক্ষ থেকে। এটা আমার দীর্ঘদিনে নিজ চোখে দেখে আসা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।এরমধ্যে কেউ কেউ আছেন সরল হৃদয়ের মানুষ,কিন্তু এরা খুব সহজেই মিথ্যাকে সত্য বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।আর এই ভুলকেও তারা কোনদিন ভুল ভাবতেও চেষ্টা করেননা,আর কেউ কেউ চেষ্টা করলেও অন্তর্দৃষ্টি তাদেরকে আচ্ছন্ন করেই সেই একই পথ অনুসরণ করাতে থাকে।

সরকারের উদারনীতির ফলে এরা মরতে গিয়েও বেঁচে ফিরে আসছে ধিরে ধিরে।শাসককে নমনীয় হতে হয় প্রকৃত মানুষের জন্য,যারা ভুল করেই ভুল করেছে অথবা পরিস্থিতির শিকার হয়ে ভুল পথে নিজেকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে তাদের জন্য। কিন্তু যারা ভুল করবার জন্যই পৃথিবীতে জন্মেছে,সমাজ,ধর্ম ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করে আপনাদের সরলতার সুযোগ নিচ্ছে,তাদের প্রতি পুরো রাষ্ট্র যন্ত্রকে সাধারণ জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে কঠোর থেকে কঠোর হস্তে দমন নীতি গ্রহণ করতে হবে।জাতির রূপ ও মনমানসিকতার পরিমাপ অনুযায়ী সরকারকে প্রয়োজন মাফিক জায়গা বুঝে কঠোর ও নমনীয় কিংবা সংবেদনশীল আচরণ করা শিখতে হবে।মনে রাখতে হবে,এ জাতি শক্তের ভক্ত নরমের যম।বাংলাদেশের মতো জায়গায় যদি আল্লাহ্ র ফেরেশতাও শাসন ভারের দায়িত্ব নিয়ে বসেন,সেই ফেরেশতাকেও মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে এরা পাগল করে ছাড়বেন,এটা নিশ্চিত।

যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে এতদিন অবাদে ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব চলেছে,সেখানে রাতারাতি আপনাদের পক্ষে এই দেশ সুদ্ধ করবার চিন্তা নেহাতই বেমানান ও অসম্ভব বিষয়। কারণ দেশে এখনও ঘুষ-দুর্নীতিবাজরা জনসংখ্যার গড় হিসেবে সংখ্যা গরিষ্ঠ।পাশাপাশি পরাজিত অপশক্তি তো প্রতিশোধের রক্তলাল চোখে ঘুমহীন ষড়যন্ত্রের জাল,মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে উদ পেতে বসেই নয়,অবিরাম দৌড়ের উপর আছেই।এদিকে আমাদের কথিত বন্ধু রাষ্ট্রও বসে নেই,অর্থ দিয়ে,অস্ত্র দিয়ে,পেশিশক্তির সহযোগিতা দিয়ে,যেখানে যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছু দিয়েই বদ্ধমূল অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

মনে রাখতে হবে,তাদের গোপনে বহুমূল্যে কেনা বাংলাদেশের পুতুল শাসকের পতন মানেই তাদের বিশ্বসেরা অবমাননা ও কর্তৃত্ববাদীর চরম পরাজয়।কাজেই বাংলাদেশ ভালো থাকলে ওদের শান্তিতে চরম আঘাত ও অশান্তি সৃষ্টি করে। ওদের মানসিকতা ফেরাউনের প্রেতাত্মা ভর করে আছে,যেকোনো মূল্যে ওরা এখন চেষ্টা করবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানতে।এছাড়াও খুব সম্ভব এরা দাজ্জালে অনুসারীই হবে। ওদের কোন ভাবে বিশ্বাস ও মানবিক বিবেচনায় আওয়ামিলীগের রাজনীতির পূনঃবাসন মানেই,ওদের সাধারণ ক্ষমা মানেই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরাধীনতা নিশ্চিত করে দেয়ার পথ পাকাপোক্ত করা।

অতিরিক্ত স্বাধীনতা মানুষকে উলঙ্গ হতে উৎসাহ যোগায়।আগে একদল খেয়েছে,এখন সবদল যার যার মতো খাচ্ছে।শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে,কেউ মানতে নারাজ কাউকেই।এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়া একটি অনির্বাচিত ও অস্থায়ী সরকারে পক্ষে এককভাবে কোন মতেই সম্ভব হবেনা।সমস্যা যেমন একদিনে সৃষ্টি হয়নি,তেমনি সমাধানও কারও পক্ষেই রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব নয়।দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও অস্থায়ী,অনির্বাচিত,সুশীল ও অন্তর্বতীকালী সরকারের পক্ষে অসম্ভব বিষয়।

হাতেগোনা কিছু সমস্যা হয়তোবা মোকাবেলা করা যাবে,কিন্তু এদেশে দীর্ঘ সতেরো বছরে লক্ষ লক্ষ সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে,সেই সাথে আরও কিছু সমস্যার বীজ বপন করা হয়েছে।এতগুলো সমস্যার সমাধানে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে,সরকার আসবেন,সাংবিধানিক এক মেয়াদ সময়েও এ-সব সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হবেনা।এদিকে জমিনে আগাছা সৃষ্টির মতো সমস্যা তো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সৃষ্টি হতেই থাকে,তাকে সেবা যত্ন কিংবা পরিচর্চার প্রয়োজন পড়ে না।পৃথিবীতে বাংলাদেশের চেয়ে বহুগুণ বেশি জনসংখ্যা সংবলিত দেশ রয়েছে,সে-সব দেশের মাটি এতটা আগাছা কিংবা পরগাছা জন্মানোর মতো উর্বর নয়,যতটা উর্বর বাংলাদেশের মাটি।

সেইসব দেশে মানুষ সৃষ্টি হয় মোটামুটি একটা হিসাব কষেই,আবার মানুষের শিক্ষা,সংস্কৃতি,সভ্যতা,সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসও গড়ে উঠে বেশ হিসাব করেই।আমাদের দেশের মতো এত নারী-পুরুষের ঘনবসতি প্রেম ভালবাসা ও যত্রতত্র মানব চাষের সংস্কৃতি সেইসব দেশে এতটা অবাদ নয়,তবে সবকিছুতেই অবাদ স্বাধীনতার ফল তারা ভোগ করেই অভ্যস্ত।সেইসব দেশগুলোতে আইন ও সংবিধান তৈরি হয় সাধারণের অবাদ স্বাধীনতা ভোগ করবার মহতি উদ্দেশ্য নিয়ে এবং গভীর জ্ঞানগর্ভ চেতনাকে প্রধান্য দিয়েই।কিন্তু আমাদের দেশে আইন ও সংবিধান তৈরি হয় নির্দ্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দল,পরিবার কিংবা গোষ্ঠীকে উদ্ধারের কারিশমা মাথায় নিয়ে,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বিচার বিভাগকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে সেইসব আইন ও সংবিধান প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট ফাঁকফোকর সৃষ্টি, আইনপ্রনয়নকারীরা ইচ্ছা করেই রেখে যান।যাতে করে নিজেদের সুবিধা মতো প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ঘুষদুর্নীতির সুযোগ থাকে, আবার সেই সুযোগ সৃষ্টি করা হয় প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ইচ্ছে মাফিক নিজেদের দল,পরিবার কিংবা গোষ্ঠী উদ্ধার করতে।

সমস্যার সমাধান যেখান থেকে শুরু হবার কথা,সমস্যার সৃষ্টিও সেই একই জায়গা থেকেই শুরু হচ্ছে।তবে সমস্যা সমাধানের চেয়ে সমস্যা সৃষ্টি দৌড়ে সবসময়ই আমাদের দেশ এগিয়ে থাকে।তারপর সেই সমস্যা এতটা দ্রুত বেগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে,যা কি-না সাধারণের একেবারে দোরগোড়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিস্তৃত লাভ করে বসে।একটি সময় সমাধানের জন্য যেই আইন বা সংবিধান সৃষ্টি করা হয়,সেই আইন বা সংবিধান নিজেই সমস্যার সবচেয়ে বড় ঠিকাদার হিসেবে দাঁড় হতে বাধ্য হয়।

অনিরাপদ ও বিশৃঙ্খলা দমন করা যায়না,নিজেদের ষড়-রিপু যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেরাই দমন করতে ব্যর্থ হয়।দেশ স্বৈরশাসক মুক্ত হলেও,আমাদের সমাজ,বিবেগ ও মনুষ্যত্ব এখন আত্নস্বৈরচার হিসাবে দেখা দিয়েছে।এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা শুধু মাত্র রাষ্ট্রীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব!যদি এদেশের মানুষের আত্ন-পরিসুদ্ধি অর্জন সম্ভব না হয়।নিজের জীবনের প্রতি মায়া সামান্য একটি কীটপতঙ্গ কিংবা যেকোনো প্রাণীরও আছে,সেখানে একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া,ধর্ম নিয়ে রক্তারক্তি করাটা মানব জাতিকে বর্বর ও হিংস্র প্রাণী হিসেবেই কি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন না?সভ্য ও সুশিক্ষিত আমরা নাইবা হলাম!অন্তত পক্ষে মানুষ তো হতে চেষ্টা করতে পারি।মানব দেহে আজকাল কিভাবে নরপিশাচ ও শয়তান ইবলিস এসে জায়গা নিতে সক্ষম হলো!সেই এখন সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয়।শতভাগ নিরপরাধ ও নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে আগম করার পরও আমরা কেন শতভাগ অমানুষ হয়েই অনন্তকালের যাত্রায় গমন করতে এতটা মরিয়া!পৃথিবীর একমাত্র মানুষ ব্যতীত আর কোন প্রাণীর শুধু মাত্র জীবিকা ছাড়া বিলাসী জীবন যাপনের প্রয়োজন পড়েনা,এজন্যই কি আমরা সৃষ্টির সেরা নিজেদের দাবি করতে পারি!আমি আর এখন কাউকেই প্রশ্ন করিনা,শুধু আশ্চর্য হই নিজেকে নিয়েই,এ-সব দেখার জন্য,মেনে নেবার জন্যই কি তাহলে আমার /আমাদের আগমন এই মানব জনমে?

এই সমাজে আমি আর নিজেকে শিক্ষিত ভাবিনা,এটাও বেশ আতংকের বিষয়।পাঠ্য পুস্তক আমাদের অশিক্ষা দান করলো কি-না জানিনা,তবে শিক্ষক সমাজ,পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজিকতা আর ধর্মও কি আমাদের সাথে শুধুই বিনিময় মুদ্রা অর্জনের প্রতিযেগিতা করে যাচ্ছেন না!সহসাই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচালে এক জীবন পাড়ি দিয়ে কত শত কোটি মানুষই এ জগৎ সংসারে এসে আবার ফিরেও গিয়েছেন।কিন্তু আজ তাদের কোথায় কি অবস্থান,কেউ জানতে পারছিনা।মৃত্যু আমাদের অতীব জরুরি শিক্ষা, সেই শিক্ষা থেকে আমরা এখনও যদি নিজেদের যোজন যোজন দুরত্বে পড়ে থাকিই,তবে আর পাঠ্য পুস্তক,শিক্ষক সমাজ,পরিবার,ধর্ম,সমাজিকতা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি কথায় কথায় আঙ্গুল তুলতে পারি কি আমরা?

এই সমাজ নিয়ে ভাবতে গেলে মস্তিষ্কে পঁচন ধরে যায়,হৃদয়ে বিদ্রোহের অনল জ্বলে উঠে।সমাজের মানুষগুলোর দৃষ্টিতে যখন চকচক করে বিভৎস,কুৎসিত ও পৈশাচিক নজর।বিবেগ,বিবেচনা ও বিচারিক শক্তিতে যখনই জন্তু জানোয়ারের স্বরূপ উন্মোচিত হতে দেখি,তখন কিভাবে মনে হবে এখনও এই সমাজেরই একজন দিব্যি মানুষ হয়েই বেঁচে আছি আমিও !যে সমাজের মানুষগুলো অন্যের নির্দোষ ও নিষ্পাপ চেহারার দিকেও চরম অবিচারের আঙ্গুল তোলে,তখনও সেই একই মানুষ তার নিজের অন্ধ বিবেগ,বিবেচনা ও বিচারের দিকে নিজেকে একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবেই দেখে,চোখে মুখে জ্বল জ্বল করে নোংরা হাসি, তবুও কেন আমি এই সমাজ নিয়ে এতটা ভাবতে চেষ্টা করি!এখানে হুবহু সত্যেররূপে যখন মানুষ চরম মিথ্যাকেই আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করেন ঘরে ঘরে,তখনও কি নিজেকে একজন সমাজবাদী, মানবহিতৈষী হিসেবে মেনে নিতে পারি! অর্থসম্পদের অন্ধ মোহে আজকাল যখন দেখি একই পিতার ঔরসজাত এবং একই মায়ের পেটের ভাই -বোনগুলোও নিজ রক্তকে ভুলে লোভের দাসত্ব করতে,তখনও কি পরিবার বাদী হিসেবে আর কোন কিছু ভাবতে পারি আমি?ধন্য এই সমাজ ব্যবস্থা!ধন্য এই পরিবার ব্যবস্থা!আমি কখনও স্বজ্ঞানে অজ্ঞান হতে পারিনি বলেই শত্রু-মিত্র নির্ণয় করতে এখনও শিখিনি!অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে গন্য করাই আমার আদর্শ,সে হোক দুর কিংবা অতি কাছের মানুষ।একমাত্র জন্মদাতা পিতামাতা ব্যতীত নিঃস্বার্থ দরদী কাউকে খুঁজে পাওয়া যে সমাজে দুঃসাধ্য বিষয়,সেই একই সমাজে এত প্রেম-ভালোবাসা,এত আপনের ছড়াছড়ি বেমানান ও বিষাদ নয় কি?

শেখ হাসিনার পতনে ভারতের হৃদয়ে ভয়ংকর জ্বালা: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ
শেখ হাসিনার পতনে ভারতের হৃদয়ে ভয়ংকর জ্বালা: রিজভী

শেখ হাসিনার পতনে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছে। তাদের হৃদয়ে ভয়ংকর জ্বালা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।

বৃহস্পতিবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উদ্যোগে রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা অসম একটি চুক্তি করেছিলেন আদানি গ্রুপ লিমিটেডের সঙ্গে, ভারতে যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। অনেক বকেয়া রেখে গেছেন শেখ হাসিনা।

সেই বকেয়া কমানোর জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে, অনেক পরিশোধ করেছে, আরও কিছু বাকি আছে। প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার এই তিন মাসের মধ্যে তারা বিভিন্নভাবে জমা দিয়েছে।

তিনি বলেন, বকেয়া পরিশোধ করেছে, তারপরও উনারা সন্তুষ্ট নন। উনারা বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ দেয়, সেই বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।

হুমকি দিয়েছে যে, আমরা টোটালি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেব। কেন? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নেই এজন্য? এজন্যই কি আপনাদের এতো রাগ? এতো ক্ষোভ?

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বন্ধুত্ব, আপনাদের সঙ্গে গণতন্ত্র হত্যাকারীদের সম্পর্ক। আপনাদের সঙ্গে তো বাংলার জনগণের সম্পর্ক নেই। আপনারা খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন, আপনাদের হৃদয়ে ভয়ংকর জ্বালা, শেখ হাসিনা নেই সেজন্য।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা ভার্সেস ভারত; বাংলাদেশ আর ভারত নয়। ভারতের পলিসি মেকারদের সঙ্গে এই সম্পর্ক। শেখ হাসিনার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, তাহলে কত গভীর এই সম্পর্ক? এখানে জনগণ কোনো ম্যাটার নয়।

তিনি বলেন, এই দেশের মৃত্তিকা থেকে আবরার ফাহাদদের জন্ম হয়, আবু সাঈদদের জন্ম হয়, মুগ্ধর জন্ম হয়। কোনো দিন আপনারা সেটা পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতা প্রিয়, বাংলার মানুষ যেমন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ, ঠিক তেমনি তারা গণতন্ত্রপ্রিয়। সুতরাং, কর্তৃত্ববাদী, দুঃশাসন, একদলীয় দুঃশাসন এবং জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে আপনারা কখনোই আপনাদের প্রতিভূকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ৫২, ৬২, ৬৯, ৭১-এ বিপ্লবের রক্তধারা বাংলার তরুণদের কাছ থেকে শেখ হাসিনা কেড়ে নিতে পারেনি অনেক চেষ্টা করেও। অনেক রকম অপপ্রচার করেছে, অনেক ধরনের কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন দিয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছে, বিভিন্ন বই রচনা করেছে। আর আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্য যে রচনা করতে গেছে, তাদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে কথা বলতে গেছে তাকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। না হলে লাল দালানের মধ্যে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাঝখান দিয়ে আবার যখন তারুণ্য জেগে উঠল, কী অভূতপূর্ব আন্দোলন। এক ভাই মারা যাচ্ছে, আরেক ভাই তার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। পুলিশ নিজেই বলেছে এরা তো কমে না। একটা করে গুলি করে মারি, আরেকজন এসে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে কব্জা করতে চায়, যারা আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, যারা আমাদের ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করতে চায়, তাদেরকে বলে রাখা উচিত এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আবরার, প্রতিটি ঘরে ঘরে মুগ্ধ, এই বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আবু সাঈদদের যুগ যুগ ধরে জন্ম হয়েছে। এই বীরত্বগাঁথা আপনারা হয়তো জানেন না। আপনারা হয়তো জানেন না, কত বীরের আত্মদানের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ। আর আপনারা আধিপত্যবাদী নীতির মধ্য দিয়ে এই দেশকে চালাবেন, আপনারা এই দেশের ওপর প্রভুত্ব কায়েম করবেন, কখনই পারবেন না।

এ সময় জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শীবা শানু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইথুন বাবু, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলারে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলারে

গত অক্টোবরে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসায় বেড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। এ কারণে দীর্ঘদিন পর আবার বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছেছে। তবে নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ) এখনো ১৪ বিলিয়নের ঘরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৭৩ কোটি ডলার বা ২৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২ হাজার কোটি ডলার (২০ বিলিয়ন)।

গত মাসের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস রিজার্ভ ও বিপিএম-৬-এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, কোথাও প্রকাশ করা হয় না।

জানা গেছে, ৬ নভেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ (এনআইআর) রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪৮৮ কোটি মার্কিন ডলার। সেই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। এদিকে চলতি মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি দায় বাবদ দেড় বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হবে। ফলে সামনে রিজার্ভ কিছুটা কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, এটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। আশা করছি, রেমিট্যান্স বাড়ার এ প্রবাহ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। আকুর দায় পরিশোধ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। দুই মাস অন্তর আমাদের এই দায় পরিশোধ করতে হয়। যখন বিলটি পরিশোধ করা হয়, তখন রিজার্ভ কিছুটা কমে, এটাই স্বাভাবিক।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। আগস্ট মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২২২ কোটি মার্কিন ডলারে (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন)। একই ধারাবাহিকতা দেখা যায় পরের মাসগুলোতেও। সেপ্টেম্বর মাসে আসে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার, যা ছিল ৪ বছরের মধ্যে একক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে শপথ নিতে হবে: শফিকুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ণ
নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে শপথ নিতে হবে: শফিকুর রহমান

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

জামায়াত আমির বলেন, ৭ নভেম্বর ষড়যন্ত্রকারীরা দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু বীর জনতা সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবে, ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ৭ নভেম্বর ব্যর্থ হয়ে তারা কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তকে অরক্ষিত করে ফেলে।

তিনি বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অপশাসন-দুঃশাসনমুক্ত, বৈষম্যহীন, ইনসাফপূর্ণ, তারুণ্য সমৃদ্ধ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জনগণের জানমাল আমাদের কাছে পবিত্র আমানত। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এসেছি। কিন্তু আমরা এ দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত-নিপীড়িত রাজনৈতিক দল।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের দলকে দুই দফা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা বরাবরই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এসেছি। তারপরও আমাদের নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, ‘গরম ভাতে বিড়াল বেজার’।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, জামায়াত দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারই দেশে নেতিবাচক ও নির্মূলের রাজনীতির সূচনা করেছে। তারা আমাদের দিয়ে নাস্তা করারও ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিইনি।

আলোচনা সভায় দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মোহাম্মাদ রেজাউল করিমসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।