‘আয়নাঘর’ শেখ হাসিনার গোপন কারাগার
ভয়ংকর আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর তার শাসনামলে কুখ্যাত আয়নাঘরে ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ্যে এসেছে। আর এই বিবরণগুলো এসেছে সেসব বন্দিদের কাছ থেকে যাদের হাসিনা আমলে দীর্ঘদিন আটক রাখা হয়েছিল সেই গোপন বন্দিশালায়। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কথা বলেছে আয়নাঘর থেকে মুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে। নিউইয়র্ক টাইমসের সেই প্রতিবেদনের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়া বহু মানুষ দাবি করেছেন, যে ভূগর্ভস্থ কক্ষে তাদের রাখা হত তার ওপর সকালে সামরিক কুচকাওয়াজের শব্দ শোনা যেত। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান ছিলেন সেই বন্দিদের এক জন।
জামান জানান, তিনি ৪৬৭ দিন বন্দি ছিলেন আয়নাঘরে। মারুফ একসময়ে কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার দাবি অনুযায়ী, ঢাকার সামরিক গ্যারিসনে অবস্থিত এই আয়নাঘর।
জামান দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হতো এবং মুখে বারবার ঘুষি মারা হতো। তাকে তার সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্লগে পোস্ট করা লেখাগুলোর কপি দেখানো হতো এবং নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করা হতো।
জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তাকে বলেছিল, ‘আমরা আপনার পোস্ট ছাপাতে এত টাকা খরচ করেছি। আপনার বাবা কি আমাদের এই সব টাকা ফেরত দেবেন?’
আয়নাঘরের আরেক বন্দি ছিলেন ব্যারিস্টার আহমদ বিন কাসেম। ২০১৬ সালে তাকে আটক করা হয়। কাসেমকে জানালাবিহীন নির্জন কারাগারে চব্বিশ ঘন্টা বেঁধে রাখা হয়েছিল। তাকে প্রায় সব সময় ধাতব হাতকড়া পরিয়ে রাখা হতো।
গোপন বন্দিশালার আরেক বন্দি ছিলেন সাবেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আজমি। আয়নাঘরে বিরামহীন যন্ত্রণা ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে।
আমান আজমি আট বছর বন্দি ছিলেন। আজমির অনুমান, ওই কয়েক বছরে অন্তত ৪১ হাজারবার তার চোখ বাধা হয়েছে এবং হাতকড়া পরানো হয়েছে।
আজমি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমি আল্লাহর আকাশ, সূর্য, ঘাস, চাঁদ, গাছ দেখিনি। সেখানে আমি যে অপমান এবং বেদনা অনুভব করেছি তা ব্যাখ্যা করতে পারব তার ভাষা নেই।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা জানান, বন্দি অবস্থায় তিনি মর্যাদাপূর্ণ মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন