নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ঝড় চলছে। কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ না হলেও যশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আসন্ন নির্বাচনে লড়তে রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মপন্থা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
ইতোমধ্যে জামায়াত জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। এসব প্রার্থী দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানে সক্রিয় রয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর জেলা পর্যায়ের নেতা ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অবশ্য দলটির নেতারা বলেছেন, প্রার্থীদের যে তালিকা করা হয়েছে তা প্রাথমিক। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে সেটি পরিবর্তনও হতে পারে। জোটগত নির্বাচনের সম্ভাব্যতা তৈরি হলে শরিকদের বিষয়টিও বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেছেন, আমরা নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। জেলার ছয়টি আসনের সবকটিতেই আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই হয়ে গেছে।
নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জামায়াত যাদের নির্ধারণ করেছে, তারা হলেন- যশোর-১ (শার্শা) আসনে মাওলানা আজিজুর রহমান। তিনি এর আগেও নির্বাচন করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে মাত্র পাঁচ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। দিন বদল হওয়ায় ফের আজিজুরে ভরসা করছে জামায়াত।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের প্রার্থী মাওলানা আরশাদুল আলম। তিনি ঝিকরগাছা গাজীর দরগাহ মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক।
জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত যশোর-৩। জেলা সদরের এ আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সরকারি এমএম কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল কাদের। আসনে দলের প্রয়াত নেতা মাস্টার নুরুন্নবীকে প্রথমে প্রার্থী ভাবা হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর আব্দুল কাদেরকেই প্রার্থী করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে আব্দুল কাদেরের পরিচিতিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনের প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসুল নিজে। যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক। তিনি একজন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি। সুবক্তা হিসেবে দলীয় পরিসরের বাইরেও তার পরিচিতি আছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের প্রার্থী অধ্যাপক মোক্তার আলী। তিনি ১৯৯৬ সালেও এই আসন থেকে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি ভালো ফলাফল করতে পারেননি। অধ্যাপক মোক্তার আলী কেশবপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক।
অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন সামাজিক কর্মসূচিসহ নানা অনুষ্ঠানেও। আমরা এসব প্রার্থীকে ‘সম্ভাব্য’ বলছি। শেষ পর্যন্ত তাদের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ বা বেশি জনপ্রিয় কোনো নেতাকেও প্রার্থী করা হতে পারে।
দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে জেলার নেতারা বলেছেন, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে একটা নির্বাচনী ঐক্য করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দল। সেক্ষেত্রে জোট হলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে জামায়াত সর্বোচ্চ ছাড় দিতেও প্রস্তুত।
দীর্ঘদিন ধরে যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর পরপরই জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সেই কার্যালয় পুনরুদ্ধার করেন। এখন সেখানেই দলীয় কার্যক্রম চলছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই যশোরে জামায়াতের সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর আগের পৃথক তিনটি জেলা কমিটিকে একটিতে পরিণত করা হয়েছে। ১১টি সাংগঠনিক থানা, আটটি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন শেষ হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন বাকি থাকলেও তা চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে, সদর থেকে শুরু করে জেলার সর্বত্রই দলটি যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাতে ‘জামায়াত নির্বাচনী রাজনীতি করছে’ বলে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে জেলা সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতেও কার্যালয় খোলা হয়েছে। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কার্যালয় প্রতিদিন নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জামায়াত, তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও দায়িত্বশীলরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ছোট ছোট গ্রুপে মানুষকে উপস্থিত করে আলোচনা করছেন। বিভিন্ন দিবসে বা আয়োজনে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবায় নানা সহায়তা দিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন বিয়ে, বৌ-ভাত, আকিকা, মুসলমানিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও। জামায়াতের নারী সদস্যরাও এসব কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যশোরে একটি কর্মী সম্মেলনও করেছেন। রাজনীতি সচেতনদের ধারণা, সম্মেলনটি ছিল জামায়াতের নির্বাচনী শো-ডাউন। কারণ, সম্মেলনটিকে কেন্দ্র করে জেলা জামায়াত কয়েকদিন থেকেই স্থানীয় রাজনীতির পুরো ফোকাস দলের দিকে রাখতে নানা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। যশোর ঈদগাহে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনটি কার্যত জনসভায় রূপ নেয়। সেদিন ঈদগাহ ও এর আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ ছিল।
আপনার মতামত লিখুন