সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই ষড়যন্ত্র !
যাদের সহায়তায় দেশ ছাড়লেন হাসিনার চাচা শেখ কবির

সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা এবং গোপালগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন গোপনে দেশ ছেড়েছেন। রবিবার (৮ জুন) সকালে একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন।
হাসিনার ম্যানেজার খ্যাত এই কবিরের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে শীর্ষপদ দখলের গুরুতর অভিযোগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তুতির কথাও জানা যাচ্ছিল।
শেখ কবির হোসেনের বিদেশ যাত্রা ছিল সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত। ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নির্দেশেই শেখ কবির হোসেন রবিবার সকালে সিঙ্গাপুরে গেছেন। তবে ভিন্নমত রয়েছে অভ্যন্তরীণ সূত্রের।
তাদের মতে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী একটি চক্রের সক্রিয় সহযোগিতাতেই তিনি বিমানবন্দর অতিক্রমে সক্ষম হন।
এদিকে এমন বিতর্কিত স্বৈরাচারের দোসরের এই প্রস্থানকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং আইনের প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
তথ বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শেখ কবির হোসেন দেশের অন্তত ২৩টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে:
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একাধিক বীমা কোম্পানি
সেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যবসায়ী ও শিল্প সংগঠন
এমনকি কিছু গণমাধ্যমেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে তিনি নীতিনির্ধারণে সরাসরি সক্রিয় ছিলেন না বরং তার নাম ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে একাধিক ব্যবসায়ী ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুবিধা আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষভাবে বিতর্কিত ব্যবসায়ী চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ক্ষমতাসীন মহলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার নাম যুক্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা শেখ কবির হোসেনকে ‘মুখপাত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে কোম্পানি দখল, সরকারি প্রকল্পে প্রভাব বিস্তার এবং আর্থিক সুবিধা আদায়ে সক্রিয় ছিলেন।
তথ্য অনুযায়ী, শেখ কবির হোসেন একই সময়ে একাধিক তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং একাধিক কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন। যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এই সাংঘর্ষিক ভূমিকা তাকে শুধু ক্ষমতার অপব্যবহারের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেনি, বরং সুশাসন ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার প্রশ্নেও বিতর্ক তৈরি করেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই শেখ কবির হোসেন অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান। তিনি একে একে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বোর্ড মিটিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তার অনুপস্থিতি এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করে।
শেখ কবির হোসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই ও শেখ হাসিনার চাচা হওয়ায় দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন পরিবারের ছায়াতলে ছিলেন। এই পারিবারিক পরিচয়ের জোরেই তিনি একে একে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শীর্ষপদ দখলে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার এই হঠাৎ বিদেশ গমন নিয়ে নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সরকারের সরাসরি অনুমতিতে একজন প্রভাবশালী ও বিতর্কিত ব্যক্তির এমন প্রস্থান— বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই — আইন, প্রশাসন ও নৈতিকতার প্রশ্নে এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় নিশ্চিতভাবেই বড় ধাক্কা খেয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন