খুঁজুন
শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৭ আষাঢ়, ১৪৩২

ইরানের রহস্যময় ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল, আসলে কী ছিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ৯:৪৭ অপরাহ্ণ
ইরানের রহস্যময় ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল, আসলে কী ছিল

বুধবার রাত। ইরানের আকাশপথ ছুঁড়ে বেরিয়ে গেল এক রহস্যময় আগুনের বল। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো সেই দৃশ্যের ঝলক। একপলকে কারও চোখে উল্কা, কারও কাছে অজানা ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল’। মধ্যরাত পেরোতেই প্রশ্ন— ইরান এবার কী দেখাল?

কৌতূহলের অবসান হলো দ্রুতই। জানা গেল, এটি কোনো উল্কা নয়, কোনো রহস্যময় যানও নয়— এটি ইরানের নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’। এর গতি শুনলে শিহরিত হতে হয়— শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি! ঘণ্টায় প্রায় ৭৬৭ মাইল গতির শব্দকেও ফেলে আসে ম্যাক ১৫ গতির এই ধ্বংসের তীর।

এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র একাদশ ধাপের অংশ। লক্ষ্য একটাই— ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বুক চিরে ভেতরে ঢুকে পড়া। আর ইরান তা করেছে নিখুঁতভাবে।

কিন্তু আঘাত একমুখী নয়। জবাব দিতে দেরি করেনি ইসরায়েলও। পাল্টা হামলার আঘাতে ইরানের ভূখণ্ডের গভীরে সামরিক স্থাপনাগুলো কেঁপে উঠেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমায়।

প্রতিশোধ আর পাল্টা প্রতিশোধের এই অগ্নিকুণ্ড টানা অষ্টম দিনে ঢুকে পড়েছে আজ শুক্রবার।

ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র:
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের এই ব্যবহারকে একটি ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। জানা গেছে, এই সলিড-ফুয়েল (কঠিন জ্বালানি) ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ভেদ করে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে। আইআরজিসি ওই সময় বলেছিল, ‘শক্তিশালী এবং অত্যন্ত কৌশলী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আজ রাতে ভীতসন্ত্রস্ত জায়নবাদীদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বারবার কাঁপিয়ে দিয়েছে, এটি তেল আবিবের যুদ্ধবাজ মিত্রদের কাছে ইরানের শক্তির একটি স্পষ্ট বার্তা। তারা এখনো বিভ্রম এবং মিথ্যা ধারণায় ডুবে আছে।’

আকাশে ‘রহস্যময়’ ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও ভাইরাল কয়েক ঘণ্টা পর আইআরজিসি উৎক্ষেপণের ভিডিও প্রকাশ করে। দ্রুতই সেটি ভাইরাল হয়। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা ক্ষেপণাস্ত্রের গতি এবং মাঝপথে আকস্মিক গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা দেখে বিস্মিত হন। ঘণ্টায় ১৩ থেকে ১৫ ম্যাক গতিতে এ ধরনের গতিবিধি এটিকে বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন।

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের গতির পাঁচ গুণেরও বেশি (ঘণ্টায় প্রায় ৬ হাজার ১০০ কিলোমিটার) গতিতে ছুটতে পারে। শুধু তাই নয়, এটি মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে। এই উচ্চ গতি এবং কৌশলী সক্ষমতা এটিকে শনাক্ত বা প্রতিহত করা কঠিন করে তোলে। আইআরজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় সমস্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় সংক্ষিপ্তভাবে হাইপারসনিক গতিতে পৌঁছায়। এ কারণে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র আসলে কী?
ফাত্তাহ একটি প্রিসিশন গাইডেড (নির্ভুল), টু-স্টেজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি কঠিন জ্বালানিতে চলে, অর্থাৎ সলিড ফুয়েল মিসাইল। এর পাল্লা ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার (প্রায় ৮৭০ মাইল)। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ও বাইরে উভয় স্থানেই চলতে সক্ষম। ২০২৩ সালে প্রথম ফাত্তাহ উন্মোচন করে ইরান। এটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমে একটি গোলাকার প্রপেল্যান্ট ব্যবহার করে সক্রিয় হয়। ওড়ার সময় সব দিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এতে এটিকে শনাক্ত এবং প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।

গতিতে কৌশলগত অগ্রগতি:
ফাত্তাহর মাধ্যমে ইরান কার্যকর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারত ছিল। ঐতিহ্যবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের বিপরীতে, হাইপারসনিক অস্ত্রগুলো উড়ন্ত অবস্থায় গতির সঙ্গে গতিপথ পরিবর্তনের মতো কৌশল ব্যবহার করে। এটি অধিকাংশ আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এড়াতে সক্ষম।

প্রেস টিভি জানিয়েছে, গত বুধবারের অভিযানটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে তীব্র ছিল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।

পাল্টা হামলা:
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালায়। ফিলিস্তিন ক্রনিকলের মতে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কারমানশাহের একটি সামরিক ঘাঁটিতে পাঁচটি হেলিকপ্টার, একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সুবিধা এবং সেন্ট্রিফিউজ তৈরির সঙ্গে যুক্ত একটি স্থানে আঘাত হানে।

তেহরানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলাগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল।

সংঘাতের শেষ কোথায়:
উভয় পক্ষই নতুন সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। এতে সংঘাত আরও বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে ব্যর্থ করে দিচ্ছে যে, তা নজিরবিহীন। এর বিপরীতে, ইরানের অভ্যন্তরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা, ইসরায়েলের দীর্ঘ পাল্লার অভিযানের সক্ষমতার প্রমাণ।

সামরিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু না হলে এই অঞ্চল আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করবে। অবশ্য আজ শুক্রবারই জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কূটনৈতিক সমাধান প্রচেষ্টার জন্য দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন।

বিচার বিভাগের জাতীয় সেমিনার রবিবার, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ণ
বিচার বিভাগের জাতীয় সেমিনার রবিবার, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

সুপ্রিম কোর্টের আয়োজনে ‘বিচারিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার আগামী রবিবার (২২ জুন) অনুষ্ঠিত হবে। রোববার বিকেল পৌনে ৫টায় রাজধানীর অভিজাত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লেলার। এরপর বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত ‘রোডম্যাপ’র ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরা হবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

বক্তব্য রাখবেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জাতীয় মুক্তি হবে না’

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ
‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জাতীয় মুক্তি হবে না’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, দেশবাসীকে একটা অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবার আহবান জানিয়ে বলেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জাতীয় মুক্তি হবে না। সেই নির্বাচন আরেকটা ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে।

যশোরে দলের রুকন শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বার্থে জাতীর স্বার্থে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

তিনি বলেন, মিমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে জাতীকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করার জন্য আগামী নির্বাচনে ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজিত করতে হবে।

২১ জুন শনিবার সকালে যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত রুকন শিক্ষা শিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর, সহকারি সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুস, বেলাল হোসাইন, কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, সহকারি সেক্রেটারি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। জেলার বিভিন্ন উপজেলার রুকনরা শিক্ষাশিবিরে অংশ নেন।

‘আমরা চাই তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১০:৪৪ অপরাহ্ণ
‘আমরা চাই তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়ে গেছে। পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার চায়, তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করবে সরকার— যেভাবে একজন অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই করা হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরকালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের রাজনীতি, সংস্কার, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন।

সাংবাদিক রাজিনি বৈদ্যনাথনের নেওয়া এ সাক্ষাৎকার শনিবার (২১ জুন) বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন : আপনার দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলি। আপনি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আপনি দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতা। আপনি বলেছেন, এই নির্বাচন যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক হয়। কিন্তু একটা সমালোচনা হচ্ছে যে, আপনি আওয়ামী লীগকে, অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে দিচ্ছেন না। কেন?

অধ্যাপক ইউনূস : আমরা বহুবার এটা ব্যাখ্যা করেছি, আবারও বলছি। প্রথমত, আওয়ামী লীগ না থাকলেও নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না; সম্প্রতি ঢাকায় জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর খুব ভালোভাবে এটা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক মানে কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, সব মানুষের অংশগ্রহণ। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ ভোট দিতে পারছে, ততক্ষণ এটা অন্তর্ভুক্তিমূলক।

প্রশ্ন : দেশের অনেক মানুষ এখনো আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।

অধ্যাপক ইউনূস : তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন তারা ভোট দিতে চায় কি না…

প্রশ্ন : তারা আওয়ামী লীগকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না।

অধ্যাপক ইউনূস : যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ভোটার—তাদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা আছে।

প্রশ্ন : কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নয়, যদি না আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ইউনূস : আমরা এখনো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করিনি।

প্রশ্ন : তাহলে আপনি বলছেন, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে…

অধ্যাপক ইউনূস : না, আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করি—আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যার মধ্যে নির্বাচনও পড়ে। এটা সাময়িক। নির্বাচনে তারা থাকবে কি না, সেটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

প্রশ্ন : তাহলে আগামী নির্বাচনের ব্যালটে তাদের থাকার সম্ভাবনা আছে?

অধ্যাপক ইউনূস : আবারও বলছি, এটা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়।

প্রশ্ন : আচ্ছা, যেহেতু আমরা আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা বলছি, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তো আপনি তাকে ফেরত আনতে চান, তাই না? তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা নিয়ে আপনি তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান?

অধ্যাপক ইউনূস : বিচার ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এটা চলমান একটা প্রক্রিয়া। পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার হবে। আমরা চাই তিনি বিচারের মুখোমুখি হোন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ব্যবহার করব—যেভাবে একজন অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই করব। এটা সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন : কীভাবে তাকে ফিরিয়ে আনবেন? মানে, আপনার তো নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনেক দেখা হয়।

অধ্যাপক ইউনূস : আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে। তাকে ধরে আনার কোনো ক্ষমতা তো আমাদের নেই।

প্রশ্ন : কিন্তু আপনি যেসব অভিযোগ করেছেন, শুধু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও, যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, দুর্নীতিসহ আরও অনেক অভিযোগ আছে — এসব সত্ত্বেও তিনি তাকে এতদিন থাকতে দেওয়ায় আপনি কি মোদির ওপর বিরক্ত নন?

অধ্যাপক ইউনূস : তার ভারতে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য তেমন কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে তার কণ্ঠস্বর, তিনি নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন, মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করেন।

প্রশ্ন : তাহলে আপনি মনে করেন ভারতকে আরও কিছু করা উচিত, যেন তিনি এই ভাষণগুলো না দিতে পারেন?

অধ্যাপক ইউনূস : সেটা আপনি বলছেন।

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের শত শত সমর্থক বা সহানুভূতিশীলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আপনি কি তাহলে ঠিক তাদের মতোই সমালোচকদের দমন করছেন?

অধ্যাপক ইউনূস : এটা বলা লজ্জাজনক হবে। আপনি যদি অন্তর্বর্তী সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি বাংলাদেশকে বোঝেন না, বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বোঝেন না। আপনি বোঝেন না আওয়ামী লীগ কী, আর অন্তর্বর্তী সরকার কী।

প্রশ্ন : এগুলো আমার কথা নয়, অনেকে বলছে।

অধ্যাপক ইউনূস : ঠিক আছে, কেউ বলেছে, কিন্তু আপনি তো বাংলাদেশে এসেছেন। তাই আমি বলছি এটা একদম ঠিক নয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরই দায়িত্ব রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা
প্রশ্ন : রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের বিষয়টি বিশ্ব অনেকটাই ভুলে গেছে। আমি কক্সবাজারের ক্যাম্পে গিয়েছি, নিজের চোখে দেখেছি তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। তারা খাবারের জন্য লড়াই করছে, অনবরত খাদ্য সহায়তা কমানো হচ্ছে, আর শিশুদের জন্য ভালো মানের শিক্ষাব্যবস্থা নেই। এটা আপনার দোরগোড়ায় থাকা একটি সংকট — আপনি তাদের সাহায্যের জন্যে কেন আরও বেশি কিছু করছেন না?

অধ্যাপক ইউনূস : আমরা? আমরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।

প্রশ্ন : কিন্তু এটা তো বাংলাদেশে ঘটছে, আর আপনি তো একজন নোবেলবিজয়ী — সবসময় দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস : অবশ্যই।

প্রশ্ন : তাই প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি আরও বেশি কিছু কেন করছেন না?

অধ্যাপক ইউনূস : আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সাথে দেখা করেছি, কী করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছি, এবং এদের ফেরার জন্যে সহায়তা চেয়ে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। সেক্ষেত্রে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। সবাই এখন শুধু খাবার ও অন্যান্য সহায়তা নিয়েই ব্যস্ত, কিন্তু এদের নিজ দেশে কীভাবে ফেরত পাঠানো যাবে, সে বিষয়ে কেউ আলাপ করছে না।

প্রশ্ন : কিন্তু প্রফেসর ইউনূস বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও তো বাস্তবসম্মত নয়। আমি রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছি, তারা জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কারণে তারা ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। তাহলে আপনারা কেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করার চেষ্টা করছেন না?

অধ্যাপক ইউনূস : সেটা কোনো সমাধান হবে না।

প্রশ্ন : কেন হবে না?

অধ্যাপক ইউনূস : ক্যাম্পের আশপাশে থাকা মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরূপ। কারণ তারা দেখছে আন্তর্জাতিক সাহায্য কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য আসছে, আর রোহিঙ্গারা যেন সহজেই বেঁচে আছে, যেখানে বাইরের লোকদের কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

প্রশ্ন : কিন্তু আপনি তো নিজের চোখে দেখেছেন পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

অধ্যাপক ইউনূস : বাংলাদেশের নীতিই হলো, তাদের ক্যাম্পের বাইরে স্থায়ী হতে না দেওয়া। আমাদের নিজেদেরই অনেক সমস্যা আছে। আমরা নতুন আরেকটা জনগোষ্ঠীর বোঝা বইতে পারবো না।

প্রশ্ন : তারা কষ্ট করা সত্ত্বেও?

অধ্যাপক ইউনূস : হ্যাঁ, সে কারণেই আমরা তাদের জায়গা দিয়েছি। আমরা তো বলিনি যে তোমরা আসতে পারবে না। আমরা তো সীমান্ত আটকে দেইনি। আমরা তাদের গ্রহণ করেছি। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশ্বাস দিয়েছিল, তারা দেখভাল করবে, তারা তাদের নিজেদের দেশে নেবে। এমনকি কোন দেশ কতজন নেবে, সেই সংখ্যাও ভাগ করা হয়েছিল।