গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে প্রায় ১৫ মাস ধরে। এই সময়ে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত হয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। এ ছাড়া, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজায় নিখোঁজ হয়েছে অন্তত ১১ হাজার মানুষ। তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মঙ্গলবার (৭ জানায়ারি) সন্ধ্যার আগের ২৪ ঘণ্টায় অন্তত আরও ৩১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৮৮৫।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ১৯৬ জন আহত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘২৪ ঘণ্টায় তিনটি হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনী ৩১ জনকে হত্যা করেছে এবং ৫৭ জনকে আহত করেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে ও রাস্তায় আটকা পড়ে আছে, কারণ উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’
এদিকে, ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল ১ হাজার ৫৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা এবং ৩৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এক বিবৃতিতে পিআরসিএসের স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক বাশার মুরাদ বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরের মধ্যে প্যারামেডিকস, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী দল এবং অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালকর্মীসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে ইসরায়েল।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় পিআরসিএসের চারটি শাখাকে পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে উত্তর গাজার জাবালিয়া শাখা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
মুরাদ আরও বলেন, গাজা শহরের বৃহত্তম পিআরসিএস কেন্দ্র আল-আমাল কমপ্লেক্সও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেখানে ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে মেডিকেল ও প্যারামেডিক কর্মী এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরাও রয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের এই কর্মী আরও জানান, যুদ্ধ ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রসের সুরক্ষা আন্তর্জাতিক আইন নিশ্চিত করলেও গাজা উপত্যকায় পিআরসিএসের প্রায় ৮০ শতাংশ সক্ষমতা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে ইসরায়েল।
মুরাদ বলেন, ‘ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের ফলে রেড ক্রিসেন্টের ৩২ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই গাজা উপত্যকায় দায়িত্ব পালন করার সময় সরাসরি ও পরিকল্পিতভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।’
এর আগে, হামাস ২০২৪ (৭ অক্টোবর) ইসরায়েলে হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তেল আবিব। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তারা যুদ্ধ বন্ধ করেনি।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গাজায় প্রাণঘাতী যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি গণহত্যার মামলা চলছে।
আপনার মতামত লিখুন