ভারত কত শুল্ক ধার্য করল তাতে কিছু যায় আসে না: ট্রাম্প

যেসব দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেসব দেশের বাণিজ্যনীতি ট্রাম্পের মতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যায্য তাদের ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হবে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প একটি স্মারকের মাধ্যমে তাঁর কর্মীদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশের জন্য পৃথক কাস্টম শুল্ক নীতি তৈরি করতে হবে। এতে দেশগুলোর বিদ্যমান শুল্ক, বিনিময় হার, বাণিজ্য ভারসাম্য এবং অন্যান্য নীতিমালা বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের সই করা স্মারকে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘পারস্পরিক বাণিজ্য ও শুল্ক’ নীতির জন্য ১৮০ দিনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ট্রাম্পের মনোনীত বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, তাঁর দল আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে এই পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
ট্রাম্প পারস্পরিক শুল্ক নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং উৎপাদন শিল্পকে চাঙা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পণ্য তৈরি করেন, তাহলে কোনো শুল্ক নেই। শুধু ন্যায্য কাজটিই করছেন। প্রায় সব ক্ষেত্রেই, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শুল্ক নিচ্ছে, কিন্তু সেই দিন শেষ। এই কাজ অনেক আগেই করা উচিত ছিল।’
হোয়াইট হাউস জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে অন্যান্য দেশগুলোর আরোপিত শুল্কই মূল সমস্যা নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু নীতিও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করছে।
যদিও এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে, তবে এই ঘোষণা বিশ্বব্যাপী নতুন বাণিজ্য আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রভাব ভারতের মতো দেশগুলোর ওপরও পড়তে পারে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর তুলনামূলক বেশি শুল্ক রয়েছে এবং তারা রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
ট্রাম্প ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে এই স্মারকে সই করেন। মোদি ইতিমধ্যেই মোটরসাইকেলের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের ওপর যতটুকু শুল্ক বসাবে, আমরা তাদের ওপরও ততটুকুই বসাব।’
ভারতসহ অন্যান্য দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যে দেশগুলোর সঙ্গে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত জাতি (এমএফএন) মর্যাদায় বাণিজ্য করে, তাদের জন্য কৃষিপণ্যের গড় শুল্ক মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু ভারতের গড় প্রযোজ্য এমএফএন শুল্ক ৩৯ শতাংশ।
ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত মার্কিন মোটরসাইকেলের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, অথচ আমরা ভারতীয় মোটরসাইকেলের ওপর মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ শুল্ক নিই।’
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির আগে থেকেই থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য পর্যালোচনা করছেন। ট্রাম্পের ঘোষণার আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুল্ক হার কম রেখেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যেখানে ইউরোপের গড় শুল্ক হার ৫ শতাংশ।
হোয়াইট হাউস তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরার সময় বিভিন্ন শুল্ক নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ির ওপর মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক নেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্রাজিল ইথানল আমদানির ওপর ১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একই পণ্যের ওপর মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক নেয়।
এই সপ্তাহের শুরুতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সব ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার নির্দেশ দেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলসহ কিছু দেশের জন্য থাকা ছাড় তুলে নেয়। এই শুল্ক আগামী মাসে কার্যকর হওয়ার কথা।
তিনি চীন থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্কও বাড়িয়েছেন এবং কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন, যা মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন