ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনুষ্ঠানে আ’লীগ নেতা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের হল রুমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে পুরুস্কার বিতরণ করেছেন ফরিদপুর জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি খান মোনায়েম হোসেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতার পুরস্কার বিতরণের একাধিক ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের মূখে আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। অনেকেই বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও আর কাউকে কাউকে এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করতেও দেখা গেছে। কেউ কেউ এ নিয়ে ঠাট্টা ও তামাশার ছলেও কথা বলতে শোনা যায়।
উপজেলা পরিষদের মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠেয় ওই অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানটিতে কেরাত প্রতিযোগিতা, ইসলামী সঙ্গীত ও মেহেদী ডিজাইন স্কিল (শুধুমাত্র মেয়ে) প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকালে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে তারুণ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। পরে বিচারকদের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারি শিক্ষার্থীদের প্রত্যেক গ্রুপ থেকে সাতজন করে তিন গ্রুপের মোট ২১ জনকে ক্রেস্ট, সনদ ও আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করার ব্যবস্থা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। ওই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করতে দেখা যায় জেলা কৃষকলীগ ও গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা খান মোনায়েম হোসেনকে। পুরষ্কার দেবার সময় অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের ওই নেতার পাশে মঞ্চে আলফাডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রইস উদ্দিন ও মো. মুআজের নামের অন্য এক যুবককে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর রশীদ, আলফাডাঙ্গা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মুসফিক, রজিন ইসলাম, মো. মনিরুল, মাছুরা রহমান, মো. তালহা, তাসনিমসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
রইস উদ্দিন আলফাডাঙ্গা পৌর সদরের ৮ নং মিঠাপুর পৌর সদরের বাসিন্দা, তিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন নেতা দাবি করে ইতিমধ্যে একটি কথিত কমিটি গঠন করে এ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ৫ই আগসটের আগে রইসকে আলফাডাঙ্গায় বৈষম্যবিরোধী আন্দলোনের কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এমনকি তাদের এই অনুমোদিত কমিটির ব্যাপেরে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে রইস উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আলফাডাঙ্গা টিম রবিবার উপজেলা হল রুমে এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকে দাওয়াত করিনি, অভিভাবক হিসাবে অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন। আপনারা সাংবাদিকরা এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করবেন না।
ফরিদপুরে ৫ আগস্টের আগে টানা আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করা এবং আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের হামলার শিকার হওয়া একাধিক ছাত্র প্রতিনিধি সূত্রে যানা যায়, এমন কোন কমিটি তারা আদৌ আলফাডাঙ্গা সহ ফরিদপুর জেলায় কোথাও নেই এবং বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামেও এদের কোন অংশ গ্রহণ নেই।
ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি সোহেল রানা জানান, যেহেতু জেলা কমিটি হয়নি সুতরাং এ কমিটির ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা তবে যারা এমন কাজ করেছে, তারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের দোসরদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মোনেয়েম খান আলফাডাঙ্গা থানায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়া এবং কটুক্তি করা নিয়ে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে বহু মানুষকে ফাঁসিয়ে জেল খাটিয়েছিলেন। তাঁকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে স্টেজে পুরষ্কার দিতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ফরিদপুর জেলায় একাধিক সমন্বয়ক।
এদিকে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা খান মোনায়েম হোসেনের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, ‘খান সাহেব ওই অনুষ্ঠানে একজন সাধারণ অবিভাবক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় মঞ্চের কয়েকজন অতিথি ও উপস্থিত কিছু অবিভাবকের অনুরোধে তিনি কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।’
আপনার মতামত লিখুন