খুঁজুন
বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৫ চৈত্র, ১৪৩১

৭ কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ৯:৫৯ অপরাহ্ণ
৭ কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে নিয়ে যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, তার নাম হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)। গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অডিটরিয়ামে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ অন্যদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই নাম চূড়ান্ত হয়।

তবে এর কার্যক্রম শুরু হতে বেশ সময় লাগবে। এজন্য আগামী ২০৩১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই নাম চূড়ান্ত হলেও ২০৩১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধীনে স্বতন্ত্র নজরদারি সংস্থা কাঠামো থেকে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে সাত কলেজ। এদিকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাস কোথায় হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে, তিতুমীর কলেজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হতে পারে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে এই সাত কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ২ লাখ, শিক্ষক ১ হাজারের বেশি।

সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হচ্ছে কলেজগুলোর ঐতিহ্যকে ধারণ করেই। বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধুমাত্র কলেজগুলোর সময় ও জায়গা শেয়ার করবে। সাত কলেজের যে পাঁচটিতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ছিল সেটি তেমনই থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু কলেজের সময় ও জায়গা শেয়ার করবে। এতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষকদের অবস্থান একই থাকবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি হবে নতুন মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়। যা নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাধিক শিক্ষক কাজ করছেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল। রবিবার সকাল থেকেই দলে দলে শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে। গোলটেবিল বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুরু হয় আলোচনা। ইউজিসি চেয়ারম্যান, সদস্যসচিব ও কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এরপরই বেশিসংখ্যক প্রার্থীর সুপারিশের ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সম্মতি দেওয়া হয়। তবে কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সাত কলেজ হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। নাম নির্ধারণে যেন কোনো সমস্যা না হয় এজন্য তালিকাভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের ইনভাইটেশন দেওয়া হয়েছে। তবে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের এই নামে কোনো ধরনের আপত্তি নেই বলে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়। আবার তিতুমীরের একাধিক শিক্ষার্থী আপত্তিও জানায়। তবে নতুন নামকরণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দে স্লোগানে ইউজিসি ভবনে শোরগোল তোলেন। তাদের নতুন পরিচয় ডিএসইউ নিয়েও মাতামাতি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি সরকারের অনুমোদনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। সব উদ্যোগের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে ইউজিসির উপপরিচালক (পাবলিক ইউনিভার্সিটি) জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইউজিসির চেয়ারম্যান গতকাল সকালে সাত কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছিলেন। সেখানে তিনি সাত কলেজের সমন্বয়ে গঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ ঘোষণা করেন। কবে থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র তো নাম ঠিক হলো। এখন আইন নিয়ে কাজ করতে হবে। এরপর সংসদে এ আইন পাশ করে তবেই বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ঢাবির সিন্ডিকেট অনুমোদন দিলেই অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাঠামো চূড়ান্ত হবে।’

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার একটি গণমাধ্যমে বলেন, সরকারি সাত কলেজকে নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)। এই নামটি চূড়ান্ত করার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইমেলের মাধ্যমে বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নিয়েছে। পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ২৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই ২৮টি টিম নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতামত দিয়েছে। গতকাল ইউজিসিতে এই ২৮টি টিমের লিডারদের সঙ্গে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

রবিবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর নিয়ে কথা বলার সময় আজাদ মজুমদার সাত কলেজ নিয়ে আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কাঠামো হবে, সেটার একটি রূপরেখা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অনুমোদন করলে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের যে কাঠামো সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একজন অন্তর্বর্তী প্রশাসক থাকবেন। এই সাত কলেজের যারা অধ্যক্ষ রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেই একজন হবেন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসক। যিনি মনোনীত হবেন, তার কলেজটাই হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গত জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামটি চূড়ান্ত হলো।

সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর আন্দোলন টিমের ফোকাল পয়েন্ট ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘সাত কলেজকে নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে, সেটির নাম ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বা ডিসিইউ হতে যাচ্ছে। মোট ৪০টি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেখান থেকে দুটি নামে আসে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামকরণের পক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু পরে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামটিই চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

রাজধানীর সরকারি ৭টি কলেজ হলো:
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

এই ৭টি কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ২ লাখ। একসময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হতো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। ২০১৪ সালের শেষ দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিতায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাত সরকারি কলেজকে অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ করার কথা জানানো হয় গত ২৭ জানুয়ারি। তার আগেই গত ডিসেম্বরে সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়।

ঐ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একটি নজরদারি সংস্থা কাঠামো করার প্রস্তাব দেয়, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকার সরকারি সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বা সমকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে আর পুরো কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য।

উল্লেখ্য, রাজধানীর সরকারি ৭টি নামকরা কলেজকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর নিকট থেকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত ভিসি আ.ফ.ম. আরেফিন সিদ্দিকী অন্তর্ভুক্ত করেন। নানা অনিয়ম, শোষণ, নিপীড়নের জেরে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাবির নানান বিতর্কিত অধ্যায়ের শেষে অবশেষে ৭টি কলেজ মুক্তি পেতে চলেছে।

গাজীপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ঘোড়ার মাংস বিক্রি বন্ধ

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ণ
গাজীপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ঘোড়ার মাংস বিক্রি বন্ধ

গাজীপুরে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জালাল উদ্দিনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর হায়দরাবাদ এলাকায় গিয়ে মাংস বিক্রেতা শফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি না করতে কঠোরভাবে সতর্ক করেন। এসময় সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহীন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

ডা. শাহীন মিয়া জানান, ২০১১ সালের পশু জবাই ও মান নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যতিত এবং লাইসেন্স ছাড়া পশু জবাই ও মাংস বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে এক বছরের জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। দেশে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি অপ্রচলিত। তাই নানা মহল থেকে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রির আপত্তি উঠায় মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত হায়দরাবাদে অভিযান চালায়। এসময় মাংস বিক্রেতা শফিকুল ইসলামকে ডেকে এনে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়।

অন্যথায় বুধবার (১৯ মার্চ) থেকে ২০১১ সালের পশু জবাই আইনে গ্রেপ্তার ও জেল জরিমানার কথা জানিয়ে তাকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অভিযানকালে এলাকাবাসীও ভ্রাম্যমান আদালতকে আশ্বস্থ করেন এ এলাকায় আর ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন ধরে গাজীপুর মহানগরীর হায়দরাবাদ এলাকায় দুবাই ফেরত আনম নূরুল্লাহ মামুন তার বন্ধু শফিকুল ইসলামকে নিয়ে ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি প্রচলন শুরু করেন। এ মাসের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় আড়াইশ টাকা কেজির মাংস মূহুর্তেই তিন থেকে সাড়ে তিনশত টাকা কেজি হয়ে যায়।

ঘোড়ার মাংস বিক্রির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে এনিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত প্রকাশ পায় এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনা হলে মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়।

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ কাঠামো প্রত্যাখ্যান তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

মহানগর প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ
‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ কাঠামো প্রত্যাখ্যান তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর বহুল আলোচিত সরকারি ৭টি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি প্রশাসনিক কাঠামোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিতুমীর কলেজকে এই কাঠামোর আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় কলেজটি শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতুমীর ঐক্যের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মো. বেল্লাল হোসেনের সই করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যে নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভায় আমাদের কলেজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও চারজন প্রতিনিধির মধ্যে তিনজনই অকুণ্ঠচিত্তে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট ও সম্মতি ব্যতীত তারা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজি নয়। একইসঙ্গে এ ধরনে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত স্বার্থান্বেষী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের মিটিংকে প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিত তিনজন শিক্ষার্থীর নাম যথাক্রমে আমিনুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ রনি, মো. মেহেদী হাসান। অন্যদিকে, একজন প্রতিনিধি রেজায়ে রাব্বি জায়েদ, সভায় উপস্থিত হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির পক্ষে অবিচল থাকার ঘোষণা দেন।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি, ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন। প্রাতিষ্ঠানিক স্বকীয়তা রক্ষায় তারা সবসময় প্রস্তুত। আমরা যেকোনো অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

এর আগে, এদিন দুপুরে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নাম চূড়ান্ত করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভবনে শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

সাতটি সরকারি কলেজ হচ্ছে:
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।

বিপর্যস্ত অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

দেশের সংকটাপন্ন ১১ ব্যাংকের ৬টি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যেভাবে

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ১০:২৬ অপরাহ্ণ
দেশের সংকটাপন্ন ১১ ব্যাংকের ৬টি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যেভাবে

বিগত সরকারের আমলে সকল সেক্টরের পাশাপাশি ব্যাংক খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে দেশের অর্থনীতি ২০২৪ এ এসে পঙ্গু হয়ে যায়। অন্যান্য খাতের মধ্যে বাংলাদেশের ১১টি ব্যাংক স্মরণকালের ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। সংকটাপন্ন ব্যাংক গুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

>>>সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

১.পটভূমি এবং সহায়তা:
২০২৪ সালের আগস্টে, বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই ব্যাংকগুলো মূলত দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য ৩০,০০০ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করে, যাতে তারা তাদের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। এই ব্যাংকগুলোকে নতুন শাসনব্যবস্থায় পরিচালনার জন্য তাদের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।

২.যে ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধার করেছে:
এই ১১টি ব্যাংক থেকে ৬টি ব্যাংক ইতোমধ্যে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তারা মূলত জমা সংগ্রহ এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই অবস্থায় পৌঁছেছে।

পুনরুদ্ধারের পথে এগোনো ব্যাংকগুলো হল:
১.ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
২.সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (SIBL)
৩.EXIM ব্যাংক
৪.ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB)
৫.IFIC ব্যাংক
৬.আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

এই ব্যাংকগুলো আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে তরলতা সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তারা ইতোমধ্যে তাদের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

৩.অপ্রদর্শিত ঋণের (NPLs) উদ্বেগ:
ব্যাংকিং খাতে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো অপ্রদর্শিত ঋণের (Non-Performing Loans বা NPLs) বৃদ্ধি। অনেক ঋণ যা আগে গোপন ছিল তা এখন প্রকাশ পাচ্ছে, যা ব্যাংকগুলোর লাভজনকতা প্রভাবিত করতে পারে। প্রয়োজন হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ মাফ বা শোধে কিছু সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

৪.যে ব্যাংকগুলো এখনও সমস্যায়:
৫টি ব্যাংক এখনো সংকটে রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো তাদের জমাকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি, যার কারণে তাদের তরলতার সমস্যা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ তরলতা সহায়তা প্রোগ্রামের শেষ হয়ে গেলেও, এই ব্যাংকগুলো এখনও দৈনিক তরলতা সহায়তার জন্য আবেদন করছে। ঋণ পুনঃপ্রদান সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে, যার কারণে অন্যান্য ব্যাংকগুলো আরও ঋণ দিতে অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এই প্রোগ্রামটি বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে, কারণ এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

৫.আইনি পরিবর্তন (ব্যাংক রেজোলিউশন আইন):
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫ চূড়ান্ত করার কাজ করছে। এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক নিষ্ক্রিয় ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে পারবে, যেমন: অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ, নতুন বা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ, তৃতীয় পক্ষের কাছে শেয়ার বা সম্পদ হস্তান্তর, কিংবা ব্যাংকগুলো বিক্রি করা।

৬.ব্যাংকভিত্তিক বিস্তারিত:
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ:
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের পর ব্যাংকটি ভালোভাবে পুনরুদ্ধার করেছে। গত ৬ মাসে, ব্যাংকটি নতুন ১৭,০০০ কোটি টাকা জমা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।

IFIC ব্যাংক:
ব্যাংকটি ৪,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে এবং একটি বিশাল জমা প্রত্যাহারের পর তরলতা সংকট কাটিয়ে উঠেছে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB):
২,৪০০ কোটি টাকা নতুন জমা সংগ্রহ করেছে এবং জুলাই মাসে একটি বড় রাজনৈতিক অস্থিরতার পর তরলতা সমস্যা সমাধান করেছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (SIBL):
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ শেষ হওয়ার পর, ব্যাংকটি বড় ধরনের জমা প্রত্যাহারের পরও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।

৭.অন্যান্য সমস্যাগুলি:
যতটা পুনরুদ্ধার হয়েছে, ততটা অপ্রদর্শিত ঋণ বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধে সমস্যা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উচ্চমানের সম্পদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। তবে আগামীতে ব্যাংক থেকে সরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ এবং অপ্রয়োজনে নোট ছাপানো অনেক কিছুর সম্ভাবনা ও সমস্যার হার নির্ধারন করবে।

মূলত এটি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে চলমান পুনরুদ্ধারের একটি প্রক্রিয়া় পরিচালনার জন্য তাদের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, যেখানে ছয়টি ব্যাংক ইতোমধ্যে ফিরে এসেছ। এখন দেখার অপেক্ষা- বাকি ব্যাংকগুলো কবে নাগাদ বা কতো দ্রুত তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। অথবা আদৌ চলমান সংকট থেকে উত্তরণ হবে কি না, সংশ্লিষ্টদের নজর এখন সেদিকেই।