খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

এডিবির পূর্বাভাস

শিগগিরই কমছে না মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি ৬.৬ থেকে কমে হবে ৫.১%

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
শিগগিরই কমছে না মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি ৬.৬ থেকে কমে হবে ৫.১%

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই সঙ্গে দেশে চলমান মূল্যস্ফীতিও শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলেও আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। সংস্থাটির গতকাল প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের সেপ্টেম্বর সংস্করণে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়।

এতে চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমিয়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এডিবি। এর আগে এপ্রিলের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। এ অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংস্থাটির পূর্বাভাস সংশোধন করে কমানো হলো ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট।

এর আগে গত এপ্রিলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। কিন্তু এখন এডিবি বলছে, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমছে না। বরং তা উন্নীত হতে পারে ১০ দশমিক ১ শতাংশে। অর্থাৎ দেশের চলমান মূল্যস্ফীতির বর্তমান ধারা বজায় থাকবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এডিবির বক্তব্য হলো গত জুলাই ও আগস্টে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাব। এ দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসবে।

এ বিষয়ে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজস্ব ও আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ক্রয় ও বিনিয়োগ আরো কমবে। নেতিবাচক ঝুঁকি থাকায় সামষ্টিক অর্থনীতির পূর্বাভাস অত্যন্ত অনিশ্চিত। এসব ঝুঁকির উৎস হলো চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আর্থিক খাতের দুর্বলতা।

এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতি ও অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে দেশে চাহিদা কমবে বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়, পণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে মূল্যস্ফীতি, যা আবার দুই অংকের ঘরে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমদানি-রফতানি কমায় চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, সুদ ও টাকার বিনিময় হার যথাযথ নীতির মাধ্যমে স্থিতিশীল করা এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ভর করবে বলে মনে করছে এডিবি।

ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক হিসাবের ওপর চাপ, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগের ধীরগতির কারণে গত দুই অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের নিচে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

শেখ হাসিনা সরকারের পূর্বাভাস ছিল, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলমান চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিবিদরা একে ‘উচ্চাভিলাষী ও বাস্তবসম্মত নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। গত সরকারের আমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ উচ্চ প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতিতে বড় সাফল্য হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু কভিড শুরুর পর থেকে প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের বেহাল দশা শুরু হয়। একই সঙ্গে তৎকালীন সরকারের দেখানো পরিসংখ্যানের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। সীমিত আয়ের মানুষকে চড়া দামে বাজার থেকে পণ্য কিনতে হচ্ছে। গত জুলাইয়ে দেশের মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, জুলাইয়ে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত এক যুগে সর্বোচ্চ। আগস্টে এ হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু তা ১০ শতাংশের ওপরেই রয়ে গেছে। এ সময় খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১১ শতাংশের মতো।

এছাড়া গত জুন পর্যন্ত আগের এক বছরের প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতির হার ছিল সাড়ে ৯ শতাংশের আশপাশে। এ উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন কয়েকজন উপদেষ্টা। সে আলোকে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। সামনে তা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, প্রবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কমবে। আর মূল্যস্ফীতি কমতেও সময় লাগবে। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি হ্রাসে ব্যাংকের নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপের প্রভাব বাজারে পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। বাজার ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নামিয়ে নিয়ে আসার কথা ভাবলেও সেটা হয়তো হবে না। আর প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্তিমিত হয়ে ৫ শতাংশের আশপাশেই থাকবে।

কারণ দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যক্তি খাত এখনো স্বস্তির স্থানে পৌঁছেনি। তাই এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। আবার সরকারি বিনিয়োগ বা এডিপিতেও কিছুটা কাটছাঁট করা হবে। তবে কিছুটা কম প্রবৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অর্থনীতিকে বেগবান করা যাবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এলে পরে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়া যাবে।’

পাইকগাছায় জোরপূর্বক জমির ধান কেঁটে নেয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

মোঃ রেজাউল ইসলাম, পাইকগাছা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯:০৪ অপরাহ্ণ
পাইকগাছায় জোরপূর্বক জমির ধান কেঁটে নেয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

খুলনার পাইকগাছায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমির ধান জোরপূর্বক কেঁটে নেয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে স্বৈরাচার খুনি হাসিনা সরকারের সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুর মামাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বেলা ১১ টায় পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সামনে প্রধান সড়কে উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জমির মালিক দাবীদার সুদীপ্ত কুমার বর্মন (সঞ্জয়), মোঃ হুমায়ুন কবির সরদার, মোঃ হারুন অর রশিদ, ভবসিন্ধু ঘোরামীসহ বর্গাদার হিরন্মময় মন্ডল, বিধান বর্মন ও কৃষ্ণপদ বর্মনসহ অনেকে।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের অসহায় কৃষক শ্রেণীর লোক। তাদের গড়ইখালী ইউনিয়নের কুমখালী মৌজার ৩২ বিঘা জমি রয়েছে। যা ২০১৮ সালে নিশি রাতের ভোটার বিহীন নির্বাচনে আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি থাকাকালীন সময়ে তার মামা আয়ুব খান, আবুল কালাম নুনুরা স্বৈরাচারী আওয়ামী বাহিনী ভয়ভীতি ও হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে জবর দখল করে নেয়।

২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর তারা জমি পুনরুদ্দখল করে আমন ধান চাষ করে। সেই পাকা ধান কেঁটে নেয়ার জন্য আয়ুব খান ও আবুল কালাম আজাদ (নুনু)গং চক্রান্ত করছে।

এ সময় বক্তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন এই মুহূর্তে পাকা ধান কটতে না করলে তাদের অপূরনীয় ক্ষতি হতে পারে। অভাবী অসহায় মানুষ না খেয়ে ঋণের জালে জর্জরিত হবে।

মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচারের আশায় বাবা-মা

এক যুগেও শেষ হয়নি বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬:০৪ অপরাহ্ণ
এক যুগেও শেষ হয়নি বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার

এখন থেকে ১২ বছর আগে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে প্রকাশ্য দিবালকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দর্জি ব্যবসায়ী বিশ্বজিত দাসকে। শিবির সন্দেহে সশস্ত্রভাবে শত শত মানুষ, পুলিশ, সাংবাদিক সকলের সামনেই ঘটে সেই নারকীয় হত্যাকান্ড। হত্যাকারীরা ছিলেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ওই সময়ে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডটি গোটা দেশকে আলোড়িত করলেও, আজ পর্যন্ত তার হত্যার বিচার কার্যকর হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিশ্বজিতের পরিবার।

নিহত বিশ্বজিতের বাবা-মায়ের আকুতি, অন্তত মৃত্যুর আগে সন্তানের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান নিজেদের চোখে। এতেই অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাবেন তারা।

আমরা খোঁজ নিতে গেলে দেখতে পায়, ঘরে থাকা ছেলের ছবির দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছেন মা কল্পনা দাস। কিছুক্ষণ পর ছেলের একটি ছবি নিয়ে পরম যত্নে আঁচল দিয়ে পরিষ্কার করছেন। আর ছেলের কথা মনে পড়তেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠছেন তিনি। তার কান্নার শব্দ পেয়ে কেঁদে উঠছেন বাবা অনন্ত দাসও। কারণ ছবির মতোই মানুষটাও যে এখন শুধুই স্মৃতি। তবুও ছেলের জন্য দীর্ঘ একযুগ ধরে নীরবে চোখের জল ফেলে চলেছেন মা কল্পনা দাস ও তার পরিবার।

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মশুরা গ্রামের অনন্ত দাস ও কল্পনা দাসের ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ দাস। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ শান্ত স্বভাবের ছিলো সে। পড়ালেখায় মন বসতো না বিশ্বজিতের। তাই পরিবারের আর্থিক অবস্থা ততোটা ভালো না হওয়ায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছোটবেলা থেকে ঢাকার শাঁখারী বাজারে বড় ভাইয়ের দোকানে দর্জির কাজ শিখেছিলেন বিশ্বজিৎ। এরপর ভাইয়ের পাশাপাশি নিজেও ধরেছিলেন সংসারের হাল। অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকলেও মা-বাবাকে দেখতে প্রায়ই বাড়ি আসতেন। তবে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শিবির সন্দেহে ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎ দাসকে। আর সেই থেকেই গ্রামে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখতে যাওয়া চিরতরে থমকে গিয়েছে বিশ্বজিতের।

হতাশা প্রকাশ করে বিশ্বজিৎ দাসের বড় ভাই উত্তম দাস বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরে মামলার অগ্রগতি জানি না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ভাইকে হত্যা করলেও, আওয়ামী লীগ সরকার তার বিচার করেনি। এখন তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই, আমাদের আশা এখন নতুন সরকারের কাছে। এই হত্যার যেন সঠিক বিচার করা হয়।’

একযুগ আগে ছোট ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে উত্তম দাস বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা কোন ক্ষতিপূরন চাই না, আমরা শুধু ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। টাকা দিয়ে কি করবো ? যা দুই টাকা আয় করি- কোনরকম ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকলেই আমরা খুশি।’

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী সরাসরি জড়িতরা হলো তৎকালীন আওয়ামিলীগের সরকার দলীয় ছাত্রলীগ। তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মীর নূরে আলম লিমন, শাকিলসহ বেশ কয়েকজনের নাম স্পষ্টভাবে জানা যায়। আ’লীগের আমলে নানান গুরুতর অপরাধ সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জেরে সম্প্রতি নিষিদ্ধ হয়েছে ছাত্রলীগ। কিন্তু শেষ হয়নি বিশ্বজিতের বিচার।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার পর ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৮ আসামির মধ্যে ৬ জনই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। আর দুই জনের ফাঁসির আদেশ হলেও তা কার্যকর হয়নি দীর্ঘ ১২ বছরে। স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী ওই হত্যাকান্ডে আরও কিছু আসামি থাকলেও সবাইকে মামলার চার্জশিটে আনা হয়নি।

ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাভেজা চোখে বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস বলেন, ‘আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতো। ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।’

ছেলে হারানো অসহায় বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ‘ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিত। ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে মরে গেলো অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।’

এদিকে বিশ্বজিত হত্যা মামলার আইনজীবী এস এম শাজাহান জানান, মামলাটি দ্রুত শুনানির জন্য আদালতের নজরে আনা হবে এবং আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই এর সমাধান হবে।

মূলত বিশ্বজিত দাসের হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের নানান টালবাহানায় মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের একমাত্র আশা হল দ্রুত বিচার এবং হত্যাকারীদের শাস্তি।

বলা বাহুল্য, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন বিশ্বজিৎ চিৎকার করে বলেছিল, “আমি শিবির নই, আমি হিন্দু। আপনারা চাইলে আমি প্যান্ট খুলে দেখাচ্ছি। আমি মুসলমান না, আমি হিন্দু।”

সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে মৃত্যুর আগ মূহুর্তে বিশ্বজিতের সেই করুণ চিৎকার আজও কাঁদায় বাংলাদেশের মানুষদের। শত শত মানুষ, পুলিশ, সাংবাদিক দাঁড়িয়ে দেখেছিল সেই হত্যাকান্ড। কিন্তু সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি কারো। শাঁখারীবাজারে দরজির দোকান ছিল বিশ্বজিতের। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে হলেও রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারে থাকতেন তিনি।

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের রায় নিয়ে আপিলের শুনানি মঙ্গলবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:০৮ অপরাহ্ণ
‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানের রায় নিয়ে আপিলের শুনানি মঙ্গলবার

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।

আদালতে আবেদনটি শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

এর আগে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা চেয়ে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

পরে ২০২০ সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। বাংলায় দেওয়া রায়ের আদেশের একটি অংশে আদালত বলেন, ‘আমরা ঘোষণা করছি যে জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।’

এদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২ ডিসেম্বর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।