কেন্দুয়াই গরুকান্ড, দু’দফা সংঘর্ষে আহত ২০
চোরাই গরু সন্দেহে প্রতিবাদের জের ধরে কেন্দুয়া উপজেলার ৬ নং সান্দিকোনা ইউনিয়নের চেংজানা ও সাহিতপুর পেড়ী গ্রামের লোকদের মধ্যে দু’দফা সংঘর্ষে উভয় পক্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকালে ও গত শনিবার রাতে সাহিতপুর বাজার ও সাহিতপুর গ্রামে।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত সাহিতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, তার মেয়ের জামাই পিপুল, পেড়ী গ্রামের সিরাজের মামাতো ভাই রাইছুন ও সান্দিকোনা গ্রামের তার বড় বোন রেজিয়া আক্তারকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে চেংজানা গ্রামের শাহিন, নবালী, মিলন, হৃদয়, সোহেল ও রাসেলকেও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে গেলে সাহিতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কন্যা ঋতু আক্তার জানান, আমি বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। গরু নিয়ে একটি ঘটনার জের ধরে শনিবার রাতে সাহিতপুর বাজারে চেংজানা ও সাহিতপুর পেড়ী গ্রামের লোকদের মধ্যে মারামারি হয়। শুনেছি মারামারিতে চেংজানা গ্রামের শাহিন আহত হয়। এরই জের ধরে রবিবার সকাল অনুমান ১১ টার দিকে চেংজানা গ্রামের ৪/৫শ লোক বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিশোটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
আমার বাবা সিরাজুল ইসলামকে বাঁচানোর জন্য আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে দেই কিন্তু চেংজানা গ্রামের লোকজন বসত ঘরের এক পাশের টিনের বেড়া কেটে ঘরে প্রবেশ করে আমার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে টেনে হিছড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যায়।
এ সময় তারা নারীদের গায়েও হাত তুলে। ঘরের মধ্যে সুকেস থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার এবং গোয়াল ঘর থেকে ৫টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। হামলা কারীরা সাহিতপুর গ্রামের আরোও ৩টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। ঋতু আক্তার এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
এদিকে চেংজানা গ্রামের সোহেল মিয়া (সাহিতপুর বাজারের ইজারাদার) জানান, ৯টি চোরাই গরু সন্দেহে আমরা প্রতিবাদ করেছি। গরুগুলো বাজারে উঠালেও ক্রয়, বিক্রয়ের কোন রশিদ ছিলনা। পেড়ী গ্রামের হাদিস মিয়ার বাড়িতে এই গরুগুলি নিয়ে যায়। এর প্রতিবাদ জানালে সাহিতপুর ও পেড়ী গ্রামের লোকজন এক হয়ে শনিবার রাতে সাহিতপুর বাজারে চেংজানা গ্রাম বাসীর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আব্দুল হেকিমের ছেলে শাহিন মিয়া গুরুতর আহত হয়। আমরা বাজার থেকে দৌড়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচি। রাতে এ ঘটনা সারাগ্রামে জানাজানি হলে রোববার সকালেই দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
চেংজানা গ্রামের সামছু মিয়া বলেন, সাহিতপুর গ্রামে সিরাজ বা অন্য কারোও বাড়িতে আমরা কোন হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করিনি। তাদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে।
তিনি বলেন, নিজেরা নিজেদের ঘর ভেঙ্গে আমাদেরকে দায়ী করছেন। আমরাও এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
সাহিতপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রবিবার দুপুর অনুমান ১২ টার দিকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। সেনাসদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাদিস মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি বা কাউকে আটক করা হয়নি। তবে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশের টহল চলছে।
আপনার মতামত লিখুন