খুঁজুন
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০ মাঘ, ১৪৩১

‘মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর’

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ
‘মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর’

মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সব সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক। সবার অধিকার এদেশে সমান। এ অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। এ অধিকার রক্ষা করতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোনো সম্প্রদায়কে ধর্মীয় কারণে অত্যাচার-নির্যাতন করা যাবে না। এ ধরনের কোনো ঘটনা যদি ঘটে, সরকার সেটা বিচারের আওতায় আনবে। আমি সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে পারি, অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা কোনো অপরাধকে কখনোই সমর্থন করব না, কোনো অপরাধীকে বিচারের আওতার বাইরে থাকতে দিব না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা দেখেছেন- একটা সময় যখন সত্যিকার অর্থে দেশে সরকার ছিল না, তখন কিছু দুর্বৃত্তের মাধ্যমে কিছু ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা স্বীকার করি। সেসব অপরাধের শাস্তি হবে, ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। সারা দেশে ভলান্টিয়াররা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মিলে কাজ করছেন, যেন কোথাও কোন দুর্বৃত্ত সমস্যা সৃষ্টির সুযোগ না পায়।

নাটোরে ১৬ কেজি গাঁজা ও নারীসহ আটক ২

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৯ অপরাহ্ণ
নাটোরে ১৬ কেজি গাঁজা ও নারীসহ আটক ২

নাটোরে যাত্রীবাহী বাসের ছাদে বিশেষ কায়দায় রাখা ১৬ কেজি গাঁজাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যেখানে একজন মেয়েও ছিল।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সদরের তেবাড়িয়ার শান্তি ফিলিং স্টেশনের সামনে তেবাবাড়িয়া এলাকার নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে মাদকগুলো জব্দ করা হয় বলে নাটোরের পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসাইন জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন-ফেনীর দাগনভূইয়ার সত্যপুর এলাকার মো. আলেক হোসেনের মেয়ে মণি আক্তার (৩২) ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির গাড়িটানা বাজার এলাকার তপদিল হোসেনের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)।

মারুফাত বলেন, “গোপন সংবাদে তেবাড়িয়ার শান্তি ফিলিং স্টেশনের সামনে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় চট্টগ্রাম থেকে আসা আরপি স্পেশাল রোকেয়া ট্রাভেলস নামের একটি যাত্রীবাহী বাসের ছাদ থেকে বিশেষ কায়দায় রাখা আটটি প্যাকেট থেকে মোট ১৬ কেজি গাঁজা জব্দ এবং নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

এ ঘটনায় নাটোর সদর থানায় ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

দ্য ইকোনমিস্ট

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার ক্ষতি ডেকে আনবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার ক্ষতি ডেকে আনবে

দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় এসেই আগের মতো একের পর এক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। ওভাল অফিসে ফিরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দিকে নজর দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এটা মোটেও ইতিবাচক নয় বরং তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের জন্য একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।

হোয়াইট হাউজে ফিরে এসে ওই আদেশে সই করার সময় তিনি বলনে, এটি একটি বড় একটি সিদ্ধান্ত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হয়। সে সময় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তখনই তিনি এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

এই নির্বাহী আদেশটি যেহেতু ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই স্বাক্ষর করা হয়েছে তাই এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ট্রাম্প ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকেই প্রচেষ্টা শুরু করেন। সে সময় তিনি একই ধরনের আদেশ জারি করেছিলেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কোনো দেশকে প্রত্যাহার করার জন্য জাতিসংঘের কাছে এক বছর আগে নোটিশ পাঠাতে হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এক্ষেত্রে আইনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বিশ্ব-স্বাস্থ্য আইন বিষয়ক অধ্যাপক লরেন্স গোস্টিনের কাছ থেকেও এ ধরনের পদক্ষেপ আসতে পারে। কারণ তিনি সামাজিক মাধ্যমে বলেছিলেন যে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল কারণ কংগ্রেসই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আমেরিকাকে প্রথম স্থানে রেখেছিল।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে কাজ করছে। এটি পূর্বে প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন হিসেবে পরিচিত ছিল যা ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র বছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে থাকে। তবে এর বেশিরভাগই নির্দিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য যেমন-পোলিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য বেছে নেওয়া হয়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর মতো আমেরিকার সংস্থাগুলো যেমন সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিসট্রেশন (এফডিএ) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর সঙ্গেও সহযোগিতা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে অনেকেরই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশ যে ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছে তারা সেটা থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সারাবিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে।

কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যর্থ হয়েছে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অনুরোধের পর একটি স্বাধীন তদন্তে দেখা গেছে, সংস্থাটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়ে ধীর গতিতে কাজ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সতর্কতা ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হয়নি।

তদন্তে আরও দেখা গেছে যে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনেক দেশেই কোভিড মহামারির কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক দেশের কাছেই এটি যেন একটি ‌‘হারানোর মাস’ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রও এ থেকে বাদ যায়নি এবং কোভিড ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব কর্তৃপক্ষেরই ব্যর্থতা ছিল। সে সময় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং কোভিড প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য, জাতীয় পরীক্ষার কৌশল বা কোনো জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। তার প্রশাসন বহু বিতর্কের পরও এফডিএ-কে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নামের একটি ওষুধ তৈরি করার জন্য চাপ দিয়েছিল। এটি করোনায় কার্যকর এমন প্রমাণ স্পষ্টভাবে মেলেনি তারপরেও এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করা হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই পদক্ষেপের কারণে বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার ডেটাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ প্রবেশ সীমিত করা হবে। এছাড়া বিশ্বকে সুস্থ রাখার প্রচেষ্টার প্রধান দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে তখন চীনকে উপস্থাপন করা হবে। ফলে চীনের জন্য নানা ধরনের সুযোগ আরও বাড়বে।

তবে চলতি সপ্তাহের নির্বাহী আদেশেই বিষয়টি শেষ নাও হতে পারে। ২০২০ সালে যেমন ঘটেছে এবারও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস ২০২০ সালে দ্য ইকোনমিস্টকে বলেছিলেন যে, সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটি থেকে বেরিয়ে না যাওয়ার জন্য কিছুটা ছাড় চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে যায় তবে বিশ্ব-স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রম নিয়ে আপিল শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:০৮ অপরাহ্ণ
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা ক্রম নিয়ে আপিল শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদার মানক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) সংশোধন করে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ দিন ঠিক করে আদেশ দেন।

এর আগে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদার মানক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) সংশোধন করে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করে বিচারকদের সংগঠন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

এ সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানির জন্য ওঠে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার নিহাদ কবীর দ্রুত শুনানির জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি আদালতে বলেন, এটির দ্রুত শুনানি হওয়া উচিত। কারণ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের এটি ঠিকমতো হয় না। পরে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের এই মামলা শুনানির জন্যে রাখতে বলেন।

২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ঠিক করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বিষয়ে আপিল বিভাগের প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ রায়টি লিখেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা (সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী( সাবেক প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি)।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে যেসব মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের শেষাংশে বলা হয়, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। তাই রাষ্ট্রীয় পদক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদধারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে। জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমপদে উন্নীত হবেন। অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অবস্থান হবে পদক্রমের ১৭ নম্বরে।

এর আগে অতিরিক্ত জেলা জজদের অবস্থান রাষ্ট্রীয় পদক্রমে উল্লেখ ছিল না। ১৯৮৬ সালের পদক্রমে জেলা ও দায়রা জজদের ২৪ নম্বরে রাখা হয়। কিন্তু সমমর্যাদাসম্পন্ন বিবেচনায় কমান্ড্যান্ট মেরিন একাডেমি, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, এমনকি বিএসটিআইয়ের পরিচালকের পরে আছেন জেলা ও দায়রা জজ।

অবশ্য রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় পদক্রম রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে। নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্র বা অন্য কোনো কার্যক্রমে এর ব্যবহার যেন না হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে।

সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে বলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৬ সালে রিটটি করেন।

২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্ত বিশেষ কৌঁসুলি আবদুর রব চৌধুরী শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে পদক্রমে প্রধান বিচারপতির অবস্থান স্পিকারের সঙ্গে ৪ নম্বরে ছিল। সে সময় উপরাষ্ট্রপতি ২ নম্বরে ছিলেন। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি পদটি বিলুপ্ত হওয়ার পর ৩ নম্বর পদক্রম থেকে প্রধানমন্ত্রী পদটি ২ নম্বর পদক্রমে উন্নীত হয়। রাষ্ট্রপতি ১ নম্বর পদক্রমেই আছেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই স্পিকার ও প্রধান বিচারপতি একই পদক্রমে থাকা সত্ত্বেও পরে স্পিকারকে ৩ নম্বর পদক্রমে রেখে প্রধান বিচারপতিকে ৪ নম্বরে নামিয়ে দেওয়া হয়। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাই প্রধান বিচারপতিকে স্পিকারের সঙ্গে ৩ নম্বরে রাখতে হবে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এক ধাপ ওপরে তালিকার ৭ নম্বরে আসবেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে পদক্রম ৮ নম্বরে আছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল ৮ নম্বরে থাকবেন। এর আগে হাইকোর্টের বিচারপতিরা নির্বাচন কমিশনার ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের সঙ্গে পদক্রমের ৯ নম্বরে ছিলেন।

এছাড়া পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্য এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে তিন ধাপ ওপরে ১২ নম্বরে এবং সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের পদক্রম এক ধাপ ওপরে ১৫ নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে। পদক্রম অনুযায়ী এখন ১৫ নম্বর ধাপে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেলের সমান পদক্রমে আছেন। আর পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে ১৬ নম্বরে আছেন পিএসসির চেয়ারম্যান। পর্যবেক্ষণে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, সরকার আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী কাজ করবে।