খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ৩০ বৈশাখ, ১৪৩২

রাঙ্গাবালীতে আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা জাকিরের মানবিক দৃষ্টান্ত

মোঃ মামুনুর রহমান মামুন, রাঙ্গাবালী
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮:০৫ অপরাহ্ণ
রাঙ্গাবালীতে আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা জাকিরের মানবিক দৃষ্টান্ত

পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। যেখানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে যাতে উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত হয়। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। তার সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতৃত্বে রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালিত হয়েছে, যা উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

মোঃ জাকির হোসেন রাঙ্গাবালী উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও একাগ্রতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে আনসার ও ভিডিপির কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যা সরাসরি রাঙ্গাবালীর মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সামাজিক উন্নয়ন, এবং সেবামূলক কার্যক্রমে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনে অবদান উপজেলার আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।

তিনি ও ভিডিপি সদস্যসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান নিশ্চিত করছেন। তার নেতৃত্বে এবং উপজেলা প্রশিক্ষকদের সহযোগিতায় নারী সদস্যরাও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, যা নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করেছে। মোঃ জাকির হোসেনের প্রচেষ্টায় রাঙ্গাবালীতে একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত আনসার ও ভিডিপি সংগঠন গঠিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে সাধারণ ঘটনা। ২০২৪ সালে ঘূর্ণিঝড় রিমেল উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানলে রাঙ্গাবালী উপজেলা সরাসরি এর প্রভাব অনুভব করে। এই পরিস্থিতিতে মোঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান।

ঘূর্ণিঝড়ের সময়, তিনি ও তার নেতৃত্বে অন্তত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে নিরাপদে স্থানান্তর করেন এবং তাদের খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন। তার তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয় এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা পান। তিনি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও আনসার ভিডিপি সংগঠনের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ জন ভিডিপি সদস্যের মধ্যে নগদ অর্থ, খাদ্য সামগ্রী, এবং ঢেউটিন বিতরণ করেন।

মোঃ জাকির হোসেন শুধু দুর্যোগ মোকাবেলায় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্পেও অবদান রেখেছেন। তার নেতৃত্বে রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক সচেতনতা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তিনি আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন।

উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জানা যায় যে, মোঃ জাকির হোসেন ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৯২ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান করেন এবং সেই থেকে অদ্যাবধি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী, অভিজ্ঞ এবং বিচক্ষণ এক কর্মকর্তা, মানবিক ও জনদরদী মনোভাবের জন্য বাহিনীতে সুপরিচিত।

তার সম্পর্কে আরও জানা যায় যে, বর্তমান পদে চাকরির সময়কালে, গত ১০ বছরে তাকে পাহাড়ি অঞ্চল ও সমুদ্রসংলগ্ন দুর্গম এলাকায় মোট ৭ বার বদলি করা হয়েছে। জনদরদী ও প্রবীণ এই কর্মকর্তা কর্মজীবনে চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। বৈষম্যমূলক বদলির শিকার হলেও, মোঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে রাঙ্গাবালীতে উন্নয়ন পরিকল্পনা অব্যাহত রয়েছে। তার লক্ষ্য হলো রাঙ্গাবালীর প্রতিটি আনসার ও ভিডিপি সদস্যকে উন্নত সেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নত করা। তিনি নারীদের ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান এবং তাদের আরও সম্পৃক্ত করার জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।

এক্ষেত্রে, অত্র উপজেলায় আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের জন্য ভূমি বরাদ্দ ব্যবস্থা এবং বহুতল ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে আনসার ও ভিডিপি ক্লাব গঠন করা হচ্ছে, এবং ব্লু ইকোনোমি খাতে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও, স্থানীয় জনগণকে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সিপিপি সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে তারা দুর্যোগের সময় নিজেদের রক্ষা করতে এবং স্থানীয়ভাবে সহায়তা প্রদান করতে সক্ষম হয়।

মোঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে রাঙ্গাবালীতে সেবামূলক ও উন্নয়নমূলক কাজ এবং ঘূর্ণিঝড় রিমেল মোকাবিলায় তার অবদান প্রশংসনীয়। তার সৎ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং বিশেষ অবদান রাঙ্গাবালীতে একটি সুসংগঠিত ও উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে। ভবিষ্যতে তার এই প্রচেষ্টা আরও সমৃদ্ধ ফলাফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়, যা রাঙ্গাবালীর মানুষের জীবনকে আরও উন্নত ও সুরক্ষিত করবে।

৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নটর ডেমের দুই শিক্ষার্থীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ২:২০ অপরাহ্ণ
৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নটর ডেমের দুই শিক্ষার্থীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু

চার ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর নটর ডেম কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১২ মে) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ভবন থেকে পড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক শিক্ষার্থী। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরেক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে দুই শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যুতে কলেজটির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন অভিভাবকরা। তারা এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রবেশপত্র নিতে এসে ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ যায় ধ্রুব’র:

আগামী ২৬ জুন শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে কলেজ থেকে প্রবেশপত্র নিতে এসেছিলেন ধ্রুবব্রত দাস (১৮)। সঙ্গে এসেছিলেন তারা বাবা বাণীব্রত দাস। কলেজের ভেতরে অভিভাবকদের প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বাবা। ভেতরে ছিলেন ছেলে ধ্রুব।

কলেজের ফটকে ছেলের জন্য অপেক্ষারত বাণীব্রত দাস হঠাৎ দেখতে পান তার ছেলেকে সহপাঠীরা ধরাধরি করে রিকশায় তুলছেন। শরীর রক্তাক্ত। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ধ্রুবকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, ধ্রুবব্রত দাস কলেজের ‘ফাদার টিম’ ভবনের পঞ্চমতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধ্রুব’র সহপাঠী নাফিজ রহমান বলেন, আমরা হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পাই। তারপর দেখি ধ্রুব রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পড়ে আছে। আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমাদের ধারণা, হয়তো ভবনের বারান্দা থেকে অসাবধানতাবশত সে নিচে পড়ে গেছে।

ধ্রুবব্রত দাসের বাবা বাণীব্রত দাস বলেন, ছেলের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলেটাকে ওর সহপাঠীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিকশায় তুলছে। ছেলে কীভাবে ভবন থেকে পড়ে গেলো তা জানতে পারিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ধ্রুবব্রত রেলিংয়ে বসেছিলেন। অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে গিয়ে মারা যান। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে নিবিড় তদন্ত করছে পুলিশ।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি নটর ডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি করেছে। কীভাবে ধ্রুবব্রত দাসের মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখবেন কমিটির সদস্যরা।

আরাফাত রহমানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার:

ধ্রুবব্রত দাসের মর্মান্তিক মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই আরেকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর জেনেছেন নটর ডেমের শিক্ষার্থীরা। একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী মো. আরাফাত রহমানের (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর কমলাপুরে জসীমউদ্দীন রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আটতলা ওই ভবনটির দ্বিতীয়তলার এক ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন আরাফাত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম জানান, মরদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাজনিত ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরাফাত রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার কালিকা প্রসাদ গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল আল মামুন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত বলে জানা গেছে। আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে জেনেছে। বিষয়টি আরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজের দুজন শিক্ষক।

উদ্বিগ্ন অভিভাবক-শিক্ষকরা:

নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নজরুল ইসলাম। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, নটর ডেম কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে হবে। কেন উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো? পর পর এমন দুইটি মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের প্রতি কলেজের আরও যত্নবান হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

শুধু অভিভাবকরা নন, শিক্ষকরাও উদ্বেগ জানিয়েছেন। কলেজের বিজ্ঞান শাখার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিকেলে ধ্রুবব্রত দাস নামে আমাদের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। রাতে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর পেলাম। ছেলেটা আমাদের শাখার। এ বয়সে একজন শিক্ষার্থী কেন আত্মহননের পথ বেছে নিলো, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

দোসরদের চাটুকারিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার

আন্দোলন দমনে ফেঁসে যাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা

মোঃ হাসানুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ৭:৩৯ অপরাহ্ণ
আন্দোলন দমনে ফেঁসে যাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা

স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের পতন হয়। ৫ আগস্টের আগে আওয়ামীলীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অসংখ্য নিরীহ ছাত্রদের জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন যেসকল ম্যাজিস্ট্রেটগণ এবার জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা চেয়েছে তদন্ত সংস্থা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা চেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে শহিদ ও আহতদের বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করতে এ তালিকা চাওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসককে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় তদন্ত সংস্থা। ওই সময়ে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নামের তালিকা নির্ধারিত ছক অনুযায়ী পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে ওই চিঠিতে।

তদন্ত সংস্থা বলেছে, সুষ্ঠু বিচার ও তদন্তের স্বার্থে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, তদন্ত সংস্থার এমন উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আইনসিদ্ধ।

চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত সংস্থার উপসহকারী পরিচালক আহমেদ নাসির উদ্দিন মোহাম্মদ গণমাধ্যমে বলেন, যেসব এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেসব এলাকায় তথ্য চাওয়া হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তথ্য চেয়ে আমরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, আবার সশরীরে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের প্রকৃত ঘটনা জানতে তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তারা সাক্ষী হতে পারেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য এসেছে।

তদন্ত সংস্থার এমন উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আইনসিদ্ধ বলে মনে করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি রোববার দেশের শীর্ষ এক গণমাধ্যমে বলেন, আমি মনে করি এটা ভালো উদ্যোগ। কাদের নির্দেশে এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা দরকার। তখন কারা দায়িত্ব পালন করছিলেন সেটা তদন্ত সংস্থা দেখবে।

জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডায়েরি নং-১৫৫ তারিখ ২৭/১১/২৪ ইং, ডায়েরি নং-০৪ তারিখ ০১/০১/২৫ ইং, ডায়েরি নং-২৮ তারিখ ০৩/১০/২৫ ইং, ডায়েরি নং-১০৯ তারিখ-০৪/১১/২৪ ইং, ডায়েরি নং-১৫৯ তারিখ ০৩/১২/২৪ ইং, ডায়েরি নং-১১০, তারিখ-০৭/১১/২৪ ইং তদন্ত সংস্থায় তদন্তাধীন আছে। মামলা ও ডায়েরির বিষয়গুলো অতীব জরুরি, আলোচিত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা কর্তৃক সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তালিকা ছক মোতাবেক প্রেরণ করতে হবে।’ ছকে মোবাইল নম্বর, থানার নাম, তারিখ, সময়, স্থান ও সহযোগী ফোর্সের ধরন (পুলিশ/র্যাব/বিজিবি/সেনাবাহিনী) উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল তদন্ত সংস্থার উপসহকারী পরিচালক আহমেদ নাসির উদ্দিন মোহাম্মদ (তদন্ত কর্মকর্তা) স্বাক্ষরিত চিঠি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। মাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এতে সারা দেশে ৮৭৫ জন নিহত হন। গুলিতে বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে।

এছাড়া অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সে লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হিসাবে আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ইতোমধ্যে বিচার ত্বরান্বিত করতে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

প্রসিকিউশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৩৯টি তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিস কেস হয়েছে ২২টি। এসব মিস কেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক ৮৭ জন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি হচ্ছেন ৭০ জন, পুলিশ ৬২ জন, আর সামরিক হচ্ছেন ৯ জন।

বলা বাহুল্য, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনের ঐ আন্দোলনে সারা দেশে ৮৭৫ জন নিহত হন এবং ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই আন্দোলনের হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। তারই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এই পদক্ষেপ।

সিংড়ায় ফেনসিডিলসহ দুই ভাই গ্রেপ্তার

মোঃ কুরবান আলী, সিনিয়র রিপোর্টার
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ৭:২৬ অপরাহ্ণ
সিংড়ায় ফেনসিডিলসহ দুই ভাই গ্রেপ্তার

নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোল এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিএনসি রাজশাহী বিভাগের একটি টিম রবিবার (১১ মে) দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে ৩৬৫ বোতল ফেনসিডিলসহ দুজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মুক্তারুল ইসলাম ওরফে দিলদার (২৭) ও মো. শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৫)। তারা দুজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শ্যামপুর গোপাল নগর দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা এবং পরস্পর ভাই। অভিযানকালে তাদের বহনকৃত পাওয়ার টিলারের টুলবক্সে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, মাদকের এই চালানটি চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর তানোর, বাগমারা ও নওগাঁর আত্রাই হয়ে সিংড়া পর্যন্ত পৌঁছায়। আটকদের বিরুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ওসির দায়িত্বে থাকা সিংড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।